জাকির হোসেন, দীঘিনালা
নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত দুর্গম নাড়াইছড়ির মানুষ। যেখানে নেই সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা। এমন কি মোবাইল নেটওয়ার্কেরও বাইরে পুরো এলাকা। বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি এমনকি চিকিৎসার সুবিধাও নেই। প্রয়োজনীয় টিকা থেকেও বঞ্চিত সেখানের বাসিন্দারা। রোগব্যাধি হলে স্থানীয় বৈদ্য বা কবিরাজের ওপর নির্ভর করে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকা। দুর্গম, দূরত্ব আর সড়ক যোগাযোগ না থাকার কারণে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরও পৌঁছেনি সেখানে।
তবে সেখানে রয়েছে ১৯৬০ সালে স্থাপিত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেখানে নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনকারি এবং সরঞ্জামাদি পাঠানোর জন্য ব্যবহার করতে হয় হেলিকপ্টার। আর সাম্প্রতিক সময়ে জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে স্থাপন করা হয়েছে একটি নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত নাড়াইছড়ি এলাকা। পাশাপাশি ১৭টি পাড়া নিয়ে ভারত সীমান্তবর্তী নাড়াইছড়ি। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫০কি.মি. দূরত্ব নাড়াইছড়ির।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাড়াইছড়ি পৌঁছুতে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কি.মি. সড়ক যোগাযোগ থাকলেও বাকি ২৫ কি.মি. কোন সড়ক নেই। বর্ষাকালে যখন মাইনি নদীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকে তখন ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাতায়াত করা যায়। অন্য সময় পাহাড়ি জঙ্গল আর বড় বড় পাহাড় পাড়ি দিয়ে পায়ে হাঁটা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। সেখানে বসবাসরতদের অধিকাংশই দরিদ্রসীমার নিচে। চাষাবাদযোগ্য কোন সমতল জমি নেই। জীবিকার একমাত্র পথ জুম চাষ আর গাছ, বাঁশ কাটার কাজে শ্রম বিক্রি। অধিকাংশের বসত ঘর তৈরি করেছে বাঁশ পাতার ছাউনি দিয়ে।
গ্রামের অভ্যন্তরে চলাচলের জন্য পায়ে হাঁটার সরু সড়ক থাকলেও ছড়া, খালের ওপর নেই সেতু। স্থানীয়দের তৈরি ভাঙ্গা কাঠের সেতুতেই সকলের চলাচল। এভাবেই ৮/১০ কি. মি. পথ পাড়ি দিতে হয় প্রাথমিক ও নি¤œ মিধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের।
নাড়াইছড়ি বাজার সংলগ্ন স্থানীয় গৃহবধু যমুনা চাকমা (২৮) জানান, সে এলাকায় বিশুদ্ধ পানির কোন ব্যাবস্থা নাই। ছড়া আর কুয়ার পানিই একমাত্র ভরসা। বর্ষাকালে সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করলেও তাৎক্ষণিক খাওয়ার উপযোগী থাকে না।
সংশ্লিষ্ট ৯নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মানিক রতন চাকমা জানান, অভ্যন্তরীণ যাতায়াতের জন্য কাচা সড়ক তৈরি হলেও স্থানীয়দের অনেক উপকারে আসতো। এছাড়া সোলার বিতরণের মাধ্যমে বিদ্যুতের সমস্যা কাটানো সম্ভব। বিশেষ করে নাড়াইছড়ি এলাকাবাসিকে শতভাগ টিকার আওতায় আনতে হলে সেখানে ইপিআই এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের পৌছানো নিশ্চিত করতে হবে।
বাবুছড়া ইউপি চেয়ারম্যান গগন বিকাশ চাকমা জানান, হতদরিদ্র এলাকা নাড়াইছড়িতে আশ্রয়নের ঘর পৌঁছেনি। যেহেতু এলাকাটি খুবই দুর্গম তাই সেখানে পাকা ঘর নির্মাণের সরঞ্জামাদি পৌঁছানো ব্যয়বহুল হবে। সেক্ষেত্রে পাহাড়ি নকশায় কাঠের তৈরি টিনশেডের মাচাং ঘর তৈরির ব্যবস্থা নিলে ভাল হয়। এতে পাহাড়িদের ঐতিহ্যের আদলে কম খরচে যেকোন দুর্গম এলাকাতে ঘর তৈরি সম্ভব হবে। উপকার ভোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মামুনুর রশীদ জানান, খাগড়াছড়ির দায়িত্বরত স্থানীয় সরকার প্রশাসনের উপ-পরিচালক নাজমুন আরা সুলতানাসহ সম্প্রতি নাড়াইছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সেখানের মানুষের সমস্যা দেখে এসেছেন। সেসসব সমাধানের জন্য সম্ভব অনুযায়ি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মাধ্যমে চেষ্টা করা হবে।