জিয়াউল জিয়া
বর্ষা মানেই রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা। কিন্তু এরপরও থামেনি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস। ২০১৭ সালের পরও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বেড়েছে বসতি। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, শহরে ৩১টি পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, পাহাড়ের ঢালে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠেছে বসতি। এই ছবিতেই পরিষ্কার বুঝিয়ে দিচ্ছে, পাহাড় ধসের কতটা ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে মানুষ। এমন চিত্র শুধু রাঙামাটি সদরের শিমুলতলী, রূপনগর, যুব উন্নয়ন ও রাঙাপানি এলাকায় নয়। জেলার কাপ্তাই, কাউখালী, নানিয়ারচরসহ প্রায় সব উপজেলার একই অবস্থা। অথচ ২০১৭ সালের ভয়াবহ ক্ষত চিহ্ন এখনো দৃশ্যমান রয়েছে পাহাড়গুলোর বুকে।
অথচ ২০১৭ সালে পাহাড় ধসে ১২০ জনের ও ২০১৮ সালে ১১ জনের মৃত্যু হয় রাঙামাটিতে। কিন্তু সেই একই স্থানে মৃত্যু জেনেও বসতি করছে নি¤œ আয়ের এই মানুষগুলো। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নাগরিক সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় বসতি নির্মাণে আগ্রহ বেড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে পাহাড় ধসের পরে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি বেড়েছে কয়েকগুণ। এসব এলাকায় বেড়েছে নাগরিক সুবিধা। প্রশস্ত সড়কের পাশাপাশি পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। ফলে সাত বছরে জায়গার দাম বেড়েছে শতগুণ। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে প্রতিনিয়তই বাড়ছে বসতি। শত ঝুঁকি জেনেও নিজেদের বসতবাড়ি ছাড়তে রাজি নয় বসবাসকারীরা। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলায় পাঁচ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার লোক পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাস করছে।
শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা মো. মিঠু জানান, এই এলাকার যারা বসবাস করে তারা সবাই নি¤œ আয়ের মানুষ। তাদের অন্যত্র থাকার সুযোগ নাই। আবার শহরের থাকতে গেলে অনেক টাকা ঘরভাড়ায় চলে যায়। তাই তারা বাধ্য হয়েই এখানে ঝুঁকি জেনেও বসবাস করে।
রূপনগর এলাকার আরেক বাসিন্দা মো. ওমর ফারুক জানান, এসব জায়গা অনেকে বাঙালি অথবা পাহাড়িদের কাছ থেকে কিনে নেয়া হয়েছে। আবার অনেকে খাস জায়গা নিয়ে অনেকে বসবাস করছে। ২০১৭ সালের পর এসব এলাকার জায়গার দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। মানুষ টাকা দিয়েও জায়গা পাচ্ছে না।
যুব উন্নয়ন এলাকার বাসিন্দা মঙ্গল চাকমা বলেন, বর্ষা মৌসুম ছাড়া তেমন সমস্যা হয় না। বেশি বৃষ্টি হলে তখন আশে পাশের আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাই। আর ২০১৭ সালের পর আর তো পাহাড় ধস হয়নি। এখন অনেকের মধ্যে সেই ভয় কেটেে গেছে। কেউ আর আশ্রয় কেন্দ্রে যেতেও চায় না।
রাঙামাটি দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, পাহাড়ে বসতি স্থাপনকারীদের বেশিরভাগই স্বল্প আয়ের মানুষ। এই অবৈধ স্থাপনা যখন গড়ে উঠে তখন নজরদারি করা গেলে বর্তমানে এমন পরিস্থিতি হতো না। প্রশাসনের নজরদারির অভাব দেখছেন পাহাড়ের এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাঙামাটির স্থানীয় সকল প্রশাসন মিলে ঐসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের সরিয়ে আনতে হবে। তাদের জন্য নিরাপদ বসতি নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে প্রতিবছর বর্ষায় এমন দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে হবে সবাইকে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, যারা পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে তাদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তাদের নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেটা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে প্রস্তাব পাঠাবো। তিনি আরও বলেন, কারা পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ করছে এবং খাস জমি কারা কেনাবেচা করছে এমন তথ্য পেলে প্রশাসন সব সময় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।