পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীরা নিজেদের সমাজ ব্যবস্থায় স্বাধীন। কিন্তু তারা বাহ্যিকভাবে সব সময় বৃহত্তর জাতির যাঁতাকলে নিষ্পেষিত। বুধবার রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত ২০৩০ সালের মধ্যে সমঅধিকার সম্পন্ন বাংলাদেশ গড়তে নারী পুরুষ বৈষম্য নির্মূলে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বুধবার বিকেলে শহরের নিউ মার্কেটের আশিকা হল রুমে সেমিনারটির আয়োজন করে ‘প্রোগ্রেসিভ’ নামে স্থানীয় একটি নারী উন্নয়ন সংস্থা। এতে সহায়তা করে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)।
প্রোগ্রেসিভের নির্বাহী পরিচালক সুচরিতা চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা। এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিতা চাকমা, রাঙামাটি প্রেসক্লাব সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট সুষ্মিতা চাকমা ও নাইপ্রু মারমা মেরী, আশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক বিপ্লব চাকমা সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, দেশের কাঠামোগত স্থানীয় সরকারের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিশেষ শাসনব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। এখানে রয়েছে তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং পরিষদ তিনটির কার্যক্রমে সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একটি আঞ্চলিক পরিষদ। এসব পরিষদে নারী প্রতিনিধিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। এছাড়া প্রথাগত শাসন ব্যবস্থায় নারী হেডম্যান ও কার্বারি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আশংকার বিষয় যে, এখানে সামাজিকভাবে নারীর স্বাধীনতা ক্রমে খর্ব হতে চলেছে। নারীরা সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি সামাজিক বিচারিক প্রক্রিয়ায় নারীর ক্ষমতায়ন বাড়লেও কাঠামোগত সংস্কার না হওয়ায় বিশেষ শাসন ব্যবস্থায় কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছেন না তারা।
বক্তারা বলেন, নারী বা পুরুষকে পৃথক চিন্তা করলে অগ্রযাত্রা হবে না। নারী পুরুষ উভয়কে নিয়েই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। কাউকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে বা আলাদা রেখে দেশের উন্নয়ন হবে না। বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের সম-অধিকার সংরক্ষণে পার্বত্য চুক্তির অবাস্তবায়িত অংশ দ্রুত বাস্তবায়ন, ভূমি মালিকানা নিশ্চিত, সবক্ষেত্রে নারী পুরুষের অসমতা দূরীকরণসহ নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করে যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সুপারিশ জানান বক্তারা। সেমিনারে উন্নয়নকর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।