জিয়াউল জিয়া
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারের সময় আরও ১২ দিন বাড়িয়েছে হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটি। বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফলে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুবিশাল এই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু হবে।
এতে খুশি ব্যবসায়ী, তবে জেলেরা জানিয়েছেন বন্ধের সময়ও যেনো ভিজিএফ সহায়তা অব্যাহত থাকে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা ও ব্যবসায়িদের দাবির প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন ( বিএফডিসি)।
সভায় উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. লিপন মিয়া সহ মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
বিএফডিসি’র তথ্য মতে, ২০২১ সালে ১২৭ টি অভিযান পরিচালনা করে ৯০ হাজার মিটার জাল, ২৯৭ টি বোট এবং ২ হাজার ৯৮১ কেজি মাছ জব্দ করা হয়। ২০২২ সালে ১১০ অভিযান পরিচালনা করে ১ লাখ মিটার জাল, ২৩৬ টি বোট এবং ১ হাজার ৮১৮ কেজি মাছ জব্দ করা হয়। ২০২৩ সালে হ্রদ বন্ধকালীন সময়ে ৭২৬ অভিযান পরিচালনা করে ১ লাখ ৫ হাজার মিটার জাল, ২৬টি বোট ও ৩ হাজার ৪৭৩ কেজি মাছ জব্দ করা হয়।
বিএফডিসি বলছে, প্রতিবছর হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবিস্তরের লক্ষ্যে প্রতিবছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ থাকে। কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রজনন, বংশবৃদ্ধি ও মজুদ বাড়াতে প্রতিবছর তিন মাসের জন্য বন্ধ থাকে মাছ ধরা।
সচরাচর মে মাসের ১ তারিখ থেকেও মাছ ধরা বন্ধ করা হলেও এবছর ২০ এপ্রিল থেকে ১৯ জুলাই তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। পরে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় সে নিষেধাজ্ঞা আরও এক মাস বাড়িয়ে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়। এবার আরেক দফায় হ্রদের পানি ঘোলা এবং ¯্রােত থাকায় বন্ধের সময়সীমা বাড়লো আরও ১০ দিন।
অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে হ্রদে নামার সকল প্রস্তুতি ছিল জেলেদের। জাল ও নৌকার মেরামত শেষ হলেও, সেগুলো পড়ে আছে ঘাটে। তারা বলছেন, বাড়তি সময়কালের জন্য তাদের যেনো ভিজিএফ সহায়তা প্রদান করা হয়।
রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. হারুনুর রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন হ্রদে পানি ছিলো না। যে পোনা ছাড়া রয়েছে পানির কারনে সেগুলোও বড় হতে পারেনি। হ্রদের পানি ঘোলা এবং ¯্রােত থাকায় জেলেরা প্রত্যাশিত মাছ পাবেনা। তাই মাছ বন্ধের সময়সীমা আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলাম।
পুরান জেলে পাড়ার বাসিন্দা জেলে সজল দাশ বলেন, তিন মাসের ভিজিএফ ২০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র দুই মাসে পেয়েছি। আমাদের চলতে কষ্ট হচ্ছে, তবুও বন্ধের সময় বাড়ালে ভালো। কারন এখন পানি ঘোলার কারনে মাছও বেশি পাওয়া যাবে না।
মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. লিপন মিয়া বলেন, কার্প জাতীয় মাছ এই সময়ের পর আর মাছের পোনা ডিম ছাড়ে না। তাই আর প্রজনন হওয়ার সুয়োগ নাই। তবে ২ সেন্টিমিটার জাল ব্যবহারের কারনে প্রথম দিকে বেশি মাছ জালে ধরা পড়ছে। কয়েক মাস পর আর হ্রদে মাছ পাওয়া যায় না।
রাঙামাটি বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম বলেন, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, ব্যবসায়ী ও জেলেদের চাহিদা এবং তাদের অবস্থার কথা বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী ১ সেপ্টম্বর থেকে লেকে মাছ শিকার শুরু করা যাবে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, এই হ্রদে প্রায় ২৭ হাজার জেলে রয়েছে। এবং এর সাথে ব্যবসায়ীর জড়িত। কিন্তু দীর্ঘ সময় মাছ শিকার বন্ধ থাকায় এখানকার ভোক্তারা প্রানীজ আমিষ পাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, সাবার আলোচনা শুনে সবার স্বার্থের কথা চিন্তা করে বন্ধের সময় বৃদ্ধি করা হলো। কাপ্তাই হ্রদে ১ সেপ্টম্বর থেকে আবারও লেকে মাছ শিকার শুরু করা যাবে।