নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়িতে আওয়ামীলীগ-বিএনপি‘র পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের প্রায় ৫০জন নেতাকর্মী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে একাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেও ব্যর্থ হয় পুলিশ। এই ঘটনায় পুরো শহরে রনক্ষেত্র পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে খাগড়াছড়ি শহরের প্রাণকেন্দ্র শাপলা চত্বর ও আশপাশ এলাকায় এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। প্রায় দুই ঘন্টা ধরে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এলাকায় থমথমে পারিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ, বিজিবি, আর্মড পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার(১৮ জুলাই) জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে উন্নয়ন শোভাযাত্রা কর্মসূচি এবং বিএনপি এক দফা দাবীতে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষনা করে। সকাল থেকে জেলা উপজেলা থেকে দুটি দলের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করে। আওয়ামীলীগ ও বিএনপির জেলা কার্যালয় শহরের শাপলা চত্বরের কাছাকাছি হওয়ায় উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িড়ে পড়ে। এরপর থেমে থেমে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় খাগড়াছড়ি পৌর ভবনের একাধিক কাচ ভাংচুর করে। এসময় পৌরসভার সামনে থেকে প্রায় ১২টি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ইটপাটকেল মেরে বিএনপি অফিস ভাংচুর করা হয়। জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ের সামনে একটি শান্তি পরিবহনের কাচ ভেঙ্গে দেয়া হয়। এই ঘটনায় হাসপাতালে বিএনপির ২৩জন নেতাকর্মী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আওয়ামীলীগের ১৭জন নেতাকর্মী চিকিৎসা নিয়েছেন। জেলা আওয়ামীলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক নুরুল আজমসহ ৭/৮জন নেতাকর্মীকে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ ও আমর্ড পুলিশের ৪সদস্যও ভর্তি হয়েছেন।
এই ঘটনার শুরুর পর নারিকেল বাগান থেকে কোর্ট বিল্ডিং পর্যন্ত দোকানপাঠ বন্ধ ছিল। আতংকিত মানুষ নিরাপদ স্থানে ছুটতে থাকেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সংঘর্ষের ঘটনায় আওয়ামীলীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পুলিশের নিরব ভূমিকার কারণে ঘটনার মাত্রা ব্যাপক হয়েছে বলেও জানান তারা।
এদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএস আবছার বলেন, আমাদের এক দফা দাবীতে কর্মসূচি ছিল। পুলিশের সাথে আলোচনা করে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে আমরা নেতাকর্মীদের জমায়েত করি। সেখানে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ যুবলীগের সন্ত্রাসীরা অতর্কিকতবাবে নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। নেতাকর্মীরা দলীীয় কার্যালয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ আমাদের উপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, আমাদের পূর্ব ঘোষিত উন্নয়ন ও শান্তি শোভাযাত্রা কর্মসূচি ছিল। এতে অংশ নিতে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা আসছিল। আসার পথে বিএনপি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এতে আমাদের ২৫/৩০জন নেতাকমী আহত হয়। পৌরসভায় হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, পৌরসভায় সন্ত্রাসী কায়দায় যেভাবে হামলা ভাংচুর চালানো হয়েছে তা কাপুুরুষোচিত কাজ।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জেলা আওয়ামীলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক নুুরুল আজম বলেন, আমরা বার বার পুলিশকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার অনুরোধ জানায়। কিন্তু তারা কর্নপাত করেননি। সময়মতো ভূমিকা রাখলে ঘটনা এত বড় হতোনা।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রব রাজা বলেন, আমরাতো শান্তিপূর্ন পদযাত্রার আয়োজন করেছিলাম। সবাই দেখেছে কিভাবে আওয়ামীলীগ তান্ডব চালিয়ে। আমরা এই ঘটনায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
তবে এই বিষয়ে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।