মিশু মল্লিক
শুষ্ক ও মলিনতা দূর করে বর্ষায় নবরূপে জেগে উঠে পাহাড়ি জেলা রাঙামাটি। আর মোহনীয় এই রূপ দেখতে বর্ষায় পর্যটকের ভিড় বাড়ে রাঙামাটিতে। কিন্তু কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের জেরে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পর পর্যটকশূন্য এখন রাঙামাটি। এতে লোকসান গুনছে ব্যবসায়ীরা।
‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ খ্যাত ঝুলন্ত সেতুতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পর্যটকবিহীন খাঁ খাঁ করছে সেতুটি। একেবারেই সুনশান নীরবতা। নেই কোনও পর্যটকের কোলাহল। শূন্য পড়ে রয়েছে পর্যটন স্পটটি। ঝুলন্ত সেতুর পাশে ঘাটে বাঁধা ট্যুরিস্ট বোটগুলো। হ্রদে চড়ে বেড়ার বদলে ঘাটেই দিন কাটছে ইঞ্জিনচালিত এসব নৌকার। একই অবস্থা পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক হলিডে রিসোর্ট, সুবলং ঝর্ণাসহ জেলার অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোর।
অথচ বর্ষার এই সময়ে পাহাড়ের বর্ষার রূপ দেখতে প্রতিবছর ভিড় করে পর্যটকরা। বর্ষার এই মধ্য সময়ে দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় হঠাৎ মন্দাভাব পর্যটন ব্যবসায়। যারা এসেছিলেন তারাও আটকা পড়ে বিশেষ পাস নিয়ে রাঙামাটি ত্যাগ করতে পারলেও নতুন পর্যটকের এখনো দেখা নেই। কবে স্বাভাবিক হবে তারও কোনও উত্তর নেই। অনেকটাই হতাশা নিয়ে দিন পার করছেন পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
ট্যুরিস্ট বোট চালক নাজমুল হুদা বলেন, বর্ষার এই সময়টার জন্য আমরা বাড়তি প্রস্তুতি নিয়ে থাকি প্রতিবছর। কারণ হ্রদে পানি বৃদ্ধি পায় এবং ঝর্ণাগুলোতেও পানি আসে, তাই পর্যটকদের উপস্থিতিও বেশি থাকে। কিন্তু দেশে চলমান অস্থিরতার কারণে সপ্তাহখানেক ধরে আমরা বেকার বসে আছি। এভাবে চলতে থাকলে আমরা খুবই আর্থিক কষ্টে পড়ে যাবো।
রাঙামাটি পর্যটন নৌ-যান ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. ফখরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর থেকে রাঙামাটিতে পর্যটক নেই বললেই চলে। ট্যুরিস্ট বোট চালকরা খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। অনেকে বোট রেখে অন্যান্য দিনভিত্তিক কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। রাঙামাটির পর্যটন খাত খুব খারাপ একটি সময় পার করছে।
ভরা মৌসুমেও খরা চলছে জেলার হোটেল মোটেলগুলোতে। পর্যটক না থাকায় অনেকটাই বেকার সময় কাটাচ্ছেন হোটেল মালিকরা। হোটেল মতিমহলের ব্যবস্থাপক চন্দন কুমার বর্মন বলেন, আমাদের হোটেলে এই মুহূর্তে কোন গেস্ট নেই। পুরো হোটেল ফাঁকা। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাঙামাটিতে পর্যটক আসছে না। এই বর্ষা মৌসুমে আমাদের খুব ক্ষতি হয়ে গেল।
হোটেল স্কয়ার পার্কের ব্যবস্থাপক আকতার হোসেন জানান, এই সময়ে আমাদের হোটেলে শতভাগ বুকিং থাকে, কিন্তু বর্তমানে পুরো হোটেল খালি। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কবে থেকে আবার পর্যটক আসা শুরু হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।
রাঙামাটির স্থানীয় হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা চলে পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে। পর্যটক না থাকায় সে ব্যবসায়ও ভাটা পড়েছে। পর্যটক খরায় ভুগছে টেক্সটাইল মার্কেটের দোকানগুলো। বনানী টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপক সীমা চাকমা বলেন, আমাদের টেক্সটাইলের ব্যবসা পুরোটাই পর্যটক নির্ভর। পর্যটক না আসায় আমরা ব্যবসায়িকভাবে খুব ক্ষতির মুখে পড়েছি।
প্রতিদিনই পর্যটন কর্পোরেশনের ৫০হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে বলে জানালেন পর্যটন কর্পোরেশন রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে সাধারণত আমাদের হোটেল মোটেলগুলো পর্যটকে পরিপূর্ণ থাকে। কিন্তু দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে পর্যটক নেই। তাই প্রতিদিন আমাদের গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই পরিস্থিতি উন্নতি হলে আবারো পর্যটকমুখর হবে রাঙামাটি।
রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, রাঙামাটি পর্যটন নগরী হওয়াতে এখানকার বেশিরভাগ মানুষ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। পর্যটকের উপস্থিতির উপরই নির্ভর করে তাদের আয়। কিন্তু বর্তমানে রাঙামাটি পর্যটক শূন্য। এই উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে জেলার পর্যটন খাতে চার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।