সুহৃদ সুপান্থ/মাহমুদুল হাসান
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় কাচালং সরকারি ডিগ্রি কলেজ বন্যার পানির নীচে তলিয়ে থাকায় চলমান এইচএসসি পরীক্ষা ও স্নাতক পরীক্ষা নিয়ে বিপাকে পড়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার রাতে উপজেলা সদরের বিস্তির্ণ এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়ায় একই পরিণতি হয়েছে কলেজ ক্যাম্পাসেরও। প্রায় ৩ থেকে ৫ ফুট পানির নীচে চলে গেছে শ্রেণী কক্ষ,কলেজ ক্যাম্পাস,অধ্যক্ষের বাসভবন সহ পুরো ক্যাম্পাস। এমন অবস্থায় বুধবার সকালে কলেজের দ্বিতীয় তলায় স্নাতক পরীক্ষার্থীরা পানি ডিঙিয়ে অংশগ্রহণ করলেও উচ্চ আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য স্নাতক পরীক্ষার্থীরা কিভাবে অংশ নিবে বুঝতে পারছেন না কলেজ কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি শিক্ষাবোর্ডকে ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হয়েছে জানিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, পুরো উপজেলার বিস্তির্ণ এলাকা রবিবার থেকেই পানির নীচে। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে পুরো কলেজ ক্যাম্পাসই পানির নীচে চলে গেছে। যেহেতু রাতে আর কিছুই করার ছিলোনা, তাই আজ বুধবার পূর্বনির্ধারিত স্নাতক পরীক্ষা,পরীক্ষার্থী কম থাকায় কোনোভাবে দোতলায় চালিয়ে নিলেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কোনভাবেই সম্ভব না,যদি পানি না কমে। বিষয়টি আমরা বোর্ডকে জানিয়েছি। বোর্ড থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসককে অবহিত করে তাদের মাধ্যমে বোর্ডকে জানানোর জন্য আমাকে বলা হয়েছে, আমিও সেটাই করেছি। এখনো কোন পরবর্তী নির্দেশনা পাইনি।’
কলেজ অধ্যক্ষ জানায়, স্নাতক পরীক্ষার্থী ১৭৪ জন হলেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ৪৬৮ জন। ফলে নীচতলা ব্যবহার করা ছাড়া পরীক্ষা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। পানি কমারও কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছেনা।’ যদি পরীক্ষার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না হয়,সেইক্ষেত্রে আমাকে যেকোনভাবে এই পানিতে বসেই পরীক্ষায় পরীক্ষা নিতে হবে। আমার নিজের বাসাও পানিতে ডুবে গেছে,ফলে আমি নিজেই কলেজের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নিয়েছি।’
বুধবার বিকালে স্নাতক পরীক্ষায় অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীরা কোমর পানিতে ভিজে ভিজে কলেজে আসে এবং দোতলায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। অনেককেই নৌকা করে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে সরাসরি দোতলায় যেতে দেখা গেছে। এই উপজেলায় দুইটি পরীক্ষাকেন্দ্র,যার আরেকটি দুর্গম সিজক কলেজ,যেটি কাচালং কলেজ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পরীক্ষা পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিরিন আক্তার জানাচ্ছেন, বাঘাইছড়ির যে অবস্থা,কোনভাবেই এখানে পরীক্ষা পরিচালনা করা সম্ভব নয়,আমি কেন্দ্রসচিব (প্রিন্সিপাল)কে বলেছি বিষয়টি আমাকে লিখিতভাবে জানানোর জন্য,তিনি জানানোর পর আমি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিষয়টি বোর্ডকে অবহিত করব। আমরা মোটামুটি নীতিগতভাবে পরীক্ষা স্থগিত করার বিষয়টি বিবেচনা করছি।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এ এন এম মজিবুর রহমান জানাচ্ছেন, পরীক্ষা সংক্রান্ত আমাদের একটি কমন নির্দেশনা ইতোমধ্যেই সবাইকে দেয়া হয়েছে। যদি কোথাও পানি উঠে এবং বন্যার কারণে ঝামেলা হয়,সেখানে পরীক্ষা ১ ঘন্টা পরে বা তারো বেশি সময় পরে শুরু করে,সময় সমন্বয় করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে তারাও সেটাই করার কথা। এছাড়া আমাদের পরীক্ষা পরিচালনায় স্থানীয়ভাবে একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকেন এবং জেলা প্রশাসক বিষয়গুলো দেখেন। কাচালং কলেজে এমন পরিস্থিতি হয়েছে,সেটা তারা কেউ আমাকে এখনো জানান নাই। তারা যদি জানান,সেই ক্ষেত্রে আমরা পৃথক নির্দেশনা দিতে পারব।’
রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোঃ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, কলেজের অধ্যক্ষ এবং ইউএনও বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন, ‘আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। বোর্ডকে জানাব আমরা,এখানে পরীক্ষা পরিচালনার মতো বাস্তবতা যে নেই,সেটা।’