মুফিজুর রহমান, নাইক্ষ্যংছড়ি
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সর্বত্র পানির সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। খাবার পানির জন্য হাহাকার করছে মানুষ। উপজেলার বহু নলকুপ অচল হয়ে পড়েছে। গরমে পানির ভূগর্ভস্থ স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক পুকুর, লেক ও ছড়া থেকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। মানুষের এমন দূর্ভোগের জন্য জনস্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত তদারকির অভাব, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার পাহাড়ি জনপদের সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন ঘুমধুমের ফাত্রাঝিরি সদর ইউনিয়নের চাকড়ালা, উপজেলা সদর, বাগান ঘোনা সহ সোনাইছড়ি ও দোছড়ি ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন গ্রামে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, প্রচন্ড গরমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ চার ইউনিয়নে অন্তত দেড়-দুই শতাধিক রিংওয়াল, নলকুপ অকেজু হয়ে পড়েছে । এতে করে পাহাড়ি বাঙ্গালিদের ঘরে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। গেল পবিত্র মাহে রমজানে ও নিরাপদ খাবার পানি নিয়ে নেয়নি কোন সঠিক উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট দের।
বাইশারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দিন জানান, মুসল্লিদের ওজুর ব্যবস্থা করতে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। পানির স্তর নিচে চলে যাওয়ায় ভিন্ন পথ অবলম্বন করেও প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এদিকে বাইশারী বাজারের পুকুরটির পানিও শুকিয়ে গেছে। ফলে মসজিদে নামাজ পড়তে
আসা মুসল্লিরা বিব্রত অবস্থায় পড়ে যাচ্ছেন।
ঘুমধুম ইউনিয়নের বাসিন্দা কপিল উদ্দিন বলেন, পানির অভাবে গ্রাম ছেড়ে অন্য স্থানে অবস্থান করছি। আমার আসপাশের খাল নালা পুকুর রিং ওয়েল সব শুকিয়ে গেছে নানা উন্নয়ন হলেও এখানো পানির সমস্যা প্রখর। এছাড়া অনুসন্দানে জানাজায় অনেকে লেক, পুকুর ও ছড়ার ময়লা যুক্ত পানি খেয়ে টাইফয়েডসহ নানা পানিবাহীত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন বলেন, তার ইউনিয়নে পানির সমস্যা দীর্ঘ দিনের এ সমস্যা নিরসনে তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।
সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান এ্যনি মার্মা জানান, তার ইউনিয়নে উপজাতীয় পল্লীর অর্ধশতাধিক রিংওয়েল/ টিউবওয়েল অচল হওয়ায় নারী ও শিশুদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রচন্ড গরমে পাহাড়ি ছড়া, ঝিরি পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে শত শত কৃষকের চাষাবাদও ব্যাহত হয়ে টিক ভাবে ফসলও হয়নি এবছর।
দৌছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইমরান বলেন, তার ইউপিতে ঝিরি-ছড়ার পানির উৎস বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তীব্র তাপদাহে বন্যপ্রাণীরা পানির উৎস খোঁজে ঝিরি-ছড়ায় নেমে এসেছে। ফলে পানির শেষ উৎস গুলো এখন দূষিত হয়ে পড়েছে। দূষিত পানি পান করে এলাকার মানুষ অসুস্থ হছে। তিনি এ বিষয়ে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শফিউল্লাহ জানান, প্রচন্ড গরমে শুষ্ক মৌসুমের তিন মাস এসব পাহাড়ি এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট দীর্ঘদিনের বিষয়টি নিয়ে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বান্দরবান জেলার নির্বাহি প্রকৌশলিকে অবগত করা হয়েছ, সদরে নিরাপদ পানি সরবরাহে জন্য একটি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছি। এছাড়া পার্যায ক্রমে এসব এলাকার পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের পানির চাহিদা পূরণ করার আশ্বাস
প্রদান করেন।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শাহ মোঃ আজিজ জানান, প্রচন্ড গরমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপ/ রিংওয়াল গুলোতে পানিশূন্যতা দেখা দিচ্ছে। কিছু স্থানে ১৫০ ফুট নিচে গিয়েও নলকুপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা বলেন, বন উজাড়, পাহাড় কাটা, ঝিরিতে বাঁধ দেয়াসহ যে সকল মানবসৃষ্ট কারণে প্রকৃতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে সে সবের বিরুদ্ধে প্রশাসন সব সময়ই অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু জনতার জাগরণ না হলে
কেবল অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসনের পক্ষে পরিবেশ বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। নিজেদের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে প্রাণ-প্রকৃতিকে রক্ষা করি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসি, গড়ে তুলি সবুজ বেষ্টনী। গাছের গোড়ায় কুড়াল মারার সময় একবারের জন্য হলেও ভাবি, নিজের পায়ে কুড়াল মারছি না তো? তাই পানির
সংকট দূর করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।