ললিত সি. চাকমা
বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে ইদানিং ট্যুরিজম বা পর্যটন শিল্পের দ্রæত বিকাশের লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। সুন্দরবন অঞ্চল, সিলেট ও হাওর অঞ্চল. বরেন্দ্র ও উত্তরাঞ্চল. কক্সবাজারসহ পার্বত্য অঞ্চলসমূহে পর্যটনের প্রভাব পড়ছে বলে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয়। সারাদেশের পর্যটন অঞ্চল সমূহে মাস ট্যুরিজম বা গণ পর্যটন যে হারে বাড়ছে সে অনুপাতে বেড়ে চলছে ইকো ট্যুরিজম ও এডভেঞ্চার ট্যুরিজমের ধারণাও। বিনোদন দানের পাশাপাশি পর্যটন এখন শিক্ষা. অভিজ্ঞতা এবং ধারণা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ভুমিকা রাখছে। এ শিল্পের সাথে ক্রমাগত যুক্ত হচ্ছে আমাদের যুব সমাজ, কখনও ভ্রমণকারী, কখনও ট্যুর গাইড কিংবা কখনও পর্যটন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবাদানকারী হিসেবে। আমাদের দেশের এ বিশাল যুবশক্তি সময়ের প্রয়োজনে একটি বিকাশমান শিল্পক্ষেত্রে অংশগ্রহণের বিষয়টি একটি আশা জাগানিয়া ব্যাপারও বটে!
দেশের পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটন শিল্পখাত বিকোশের ক্ষেত্রে বেসরকারি তথা ব্যক্তিখাতের অংশগ্রহণ খুবই নগণ্য ছিল। নানা সম্ভাবনার সম্ভার থাকা সত্বেও বহুমুখী জটিলতার কারণে এ শিল্পখাতটি পাহাড়ে এসে অনেকদিন মুখ থুবড়ে পড়েছিল। ২০১০ সালের পর থেকে এ শিল্পের দ্রæত প্রসার ঘটছে এবং বিনিয়োগের পরিমাণও দিনে দিনে বাড়ছে। এক সময় পর্যটন শিল্প প্রসারের উপর স্থানীয় মানুষের মনে একধরণের ভয়, উৎকণ্ঠা, আতংক এসব কিছু বিরাজ করলেও এখন দিনবদলের হাওয়া বইছে। স্থানীয়রাই এ এ শিল্পে উল্লেখযোগ্য হারে অংশগ্রহণ করছে ফলে ক্রমান্বয়ে সড়ে যাচ্ছে পর্যটন শিল্প বিকাশের প্রতিবন্ধকতাও। পাহাড়ের পর্যটন শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের দ্বারা যে কয়েকটি উদ্যোগ গৃহীত হয়েছিল তন্মধ্যে রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্ট অগ্রগণ্য। ১৪টি বছর খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলার পর এখন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে চলেছে রাইন্যা টুগুন। পাহাড়ে পর্যটন পরিষেবা জগতে এখন এটি একটি জরপ্রিয় ব্রান্ড, আস্থার অন্যনাম। আলোচ্য নিবন্ধে সেই রাইন্যা টুগুনের গড়ে উঠার ইতিবৃত্ত এবং পাহাড়ে পর্যটন শিল্প প্রসারে কি এবং কেমন ভূমিকা রাখছে সেটাই তুলে ধরবো।
রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্টকে সামাজিক ব্যবসায় ধারনার ভিত্তিতে পরিচালিত করা হবে বলেই একটি স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা সাস’র উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত রাইন্যা টুগুনই ভৌগলিক আয়তনের দিক থেকে সর্ববৃহৎ এবং রাঙামাটি জেলায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম ইকো রিসোর্ট। এই রিসোর্ট থেকে প্রাপ্ত আয় এর একটি নির্দিষ্ট অংশ উন্নয়ন সংস্থা সাস’র তহবিলে যুক্ত হবে এবং তা সমাজ উন্নয়নে ব্যয় হবে এমন অভিপ্রায়ে যাবতীয় উদ্যোগ গৃহীত হয়। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ সমৃদ্ধ এলাকায় গড়ে উঠা এ রিসোর্টটি গড়ে তোলার পিছনে অন্য যে ধারণা/বিশ্বাস গতিদায়কের ভূমিকা পালন করেছে সেটি হল পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ। প্রতিটি নির্মাণ কাজের অন্যতম বিবেচ্য বিষয়টি ছিল কিভাবে পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা যায়। পরিবেশের উপাদান যেমন মাটি, পানি, বায়ু, গাছপালা এবং পশু পাখির অবাধ বিচরণ ও অভয়ারণ্য কিভাবে তৈরী করা যায় সেদিকে রাখা হয়ে আসছে তীক্ষè খেয়াল। আজ এবং ভবিষ্যতে আগত অতিথিগণ যাতে এর নির্মাণশৈলী, উপকরণ, ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, স্থানীয় জনসাধাণের অবদান এবং নানা প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণমূলক ব্যবস্থা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও হস্তশিল্প’র ব্যবহার ও বাজারজাতকরণের প্রত্রিয়া ও কৌশল থেকে দেখে ও শুনে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে তার জন্য রয়েছে এক সযতœ উদ্যোগ।
যেভাবে শুরুঃ
শুরুটা হয়েছিল ২০০৯ সালে। আমার নিজহাতে গড়া স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সাস’র জন্যে একটি মানব সম্পদ কেন্দ্র গড়ে তোলার অভিপ্রায়ে কামিলাছড়ি মৌজা হেডম্যানের কাছ থেকে ৫ একর পাহাড়ি ভুমি কেনার মধ্যদিয়ে গোড়াপত্তন ঘটে রাইন্যা টুগুনের। একদম পতিত একটি জায়গা ছিল আজকের রাইন্যা টুগুন, অপ্রয়োজনীয় ঝোপ-ঝাড়, ফুল ফুটে মরে যাওয়া বাশেঁর গোড়া আর নলখাগড়ায় ভরপুর। গ্রামবাসীর ভাষ্যমতে দিন দুপুরেও সেখানে যেতে তাদের সাহসে কুলাতো না। মানব সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রের পাশাপাশি গোটা কামিলাছড়ি এলাকাকে একটি আদর্শ পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ এলাকায় রুপান্তরিত করতে এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করণের লক্ষ্যে রাইন্যা টুগুন ইকো ভ্যালি নাম করণ করে একটি বেসরকারি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয় যার মধ্যে থাকবে সাস-মানব সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রও। পরের বছর অর্থাৎ ২০১০ সালে সাস মানব সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রর পাশাপাশি একটি সামাজিক ব্যবসায় ভিত্তিক রিসোর্ট গড়ে তোলার সংকল্প দৈরী হলেই রাইন্যা টুগুন নামকরণ করেই এগিয়ে যায় যাবতীয় কর্মতৎপরতা। সে বছরের আগস্ট মাসের ২৬ তারিখের কোন এক রৌদ্র উজ্জ্বল সকালে মাননীয় চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় মহোদয় এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাইন্যা টুগুন ইকো ভ্যালির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দেন। পরবর্তী সময়গুলোতে ধাপে ধাপে ক্রয়ের মাধ্যমে জায়গার পরিমাণ যেমনটা বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনটি যুতসই চিন্তা, স্থানীয় চাহিদা, পর্যটন শিল্প সম্ভাবনা এবং পর্যটকদের আবাসন সমস্যা, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও স্থানীয়দের অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে রাইন্যা টুগুন ইকো ভ্যালির নাম অংশিক পরিবর্তন করে একটি পূর্ণাঙ্গ রিসোর্ট হিসেবে গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করে সাস কর্তৃপক্ষ। উন্নয়ন সংস্থা সাসর নিজস্ব অর্থায়নে সীমিত পরিসরে চলছিল একের পর এক অবকাঠামো নির্মাণ এবং সার্বিক সংরক্ষণ কার্যক্রম। ২০১৫ সালের দিকে সাস চরম আর্থিক সংকটের মুখে নিপতিত হলে এর সমস্ত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ফল শ্রæতিতে কর্মী ঝরে পড়া যেমনটা শুরু হয় এবং তেমনি রাইন্যা টুগুনের সার্বিক কার্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়ে। সার্বিক অবস্থার বিচারে আমিও তখন আর্থিকভাবে নিদারুণ এক সময় পার করছিলাম। রাস্তা ঘাটের অভাবে দুর্গমতা. প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়তে না পারা এবং প্রচার প্রচারণার ঘাটতির কারণে তখন রাইন্যা টুগুনের ব্যবসায়িক কার্যক্রমও ছিল শুণ্যের কোটায়। বছর জুড়ে শুধু ব্যয়ের পাল্লাটাই ভারী হয়ে উঠতো। রাইন্যা টুগুনের হাল টা ধরে রাখাটাই ছিল সে সময়ের এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।
বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিযোগকারী আগ্রহ প্রকাশ করে যৌথতার ভিত্তিকে পর্যটন শিল্পে বাণিজ্যিক কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব এসেছিল আমাদের কাছে। আমরাও তখন বেশ আর্থিক চাপে থাকার কারণে সে রকম একটু তাগিদ বোধ করছিলাম। দফায় দফায় বৈঠক, নানান প্রচেষ্টা এবং আগন্তক বিনিযোগকারীদের শর্তের জটিলতার কারণে একটা সময়ে সাসে’রই অর্থায়নে একটি স্বতন্ত্র কোম্পানী গঠনে প্রবৃত্ত হই আমরা। সাস’র সাথে দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ত কিছু কর্মী সংগঠক এবং রাঙামাটির গ্রহণযোগ্য কতিপয় ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ে রাইন্যা টুগুন রিসোর্ট লিমিটেড নামের কোম্পানী গঠন ও ইনকর্পোরেশন করা হয় ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে। সে সময় থেকেই সাস’র কাছ থেকে রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্টের যাবতীয় প্রোপাটিজগুলোকে একটি চুক্তির আওতায় নিদিষ্ট মেয়াদে লীজ নিয়ে রাইন্যা টুগুন রিসোর্ট লিমিেিটড স্বাধীণভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সেবাদানমূলক বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। অব্যাহতভাবে নিবিড় পরিচর্যায় রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্ট আজ পরিবেশগতভাবে মনোরম গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
কোথায় কী আছে, কী থাকবে এখানেঃ
সবমিলিয়ে প্রায় ৩৫ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠছে বিভিন্ন স্থাপনা। রিসোর্টের পুরো ধারণাটাকে সংক্ষেপে আমরা এক কথায় একটি শব্দ RACER তথা Romantic Adventurous, Comfortable, Eco Friendly and Responsive এ শব্দগুচ্ছগুলোকে দিয়ে সাজিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছি। এখানে রয়েছে দেশী বিদেশী অনেক ফুল, ফল এবং ঔষধী গাছের বিশাল সমারোহ। ভ্রমন পিপাসুদের থাকার সুব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে পাহাড়িদের নির্মাণশৈলী অনুকরনে বিভিন্ন ক্যাটাগরীর ভিলা ও কটেজ। রাইন্যা টুগুন অর্কিড গার্ডেন শেড নির্মাণের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। মানব সম্পদ উন্নয়নে অবদান রাখতে নির্মিত হবে সাস-হিউম্যান রির্সোস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। প্রক্রিয়াধীন আছে-স্থানীয়/আদিবাসী নারীদের তৈরীকৃত পণ্যর প্রমোশনাল সেন্টার, এডভেঞ্চার একটিভিটি এপ্লায়েন্স, সুইমিং পুল, ওয়েলনেস সেন্টার ইত্যাদি। অর্গানিক ফার্মিং সেন্টার, সাস এনিমেল শেড এর কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে।
এই রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্ট যেন এক টুকরো পার্বত্য চট্টগ্রাম। রাইন্যা টুগুনের মাঝে ছোট ছোট যে টিলাগুলো আছে সেগুলির নামের মধ্যে আছে বেশ বৈচিত্র্য- ফুরোমোন, ফালিটাঙ্যা চুগ, কেওক্রাডং, আলুটিলা, সাইচলমোন যেগুলি দেখার জন্য ভ্রমন পিপাসুরা ছুটে আসে বারংবার রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি। ফালিটাঙ্যাচুগ এর খোলা মাঠে আপনি বন্ধুদের সাথে মেতে উঠতে পারেন প্রাণের আড্ডায়। ‘ওপেন ইয়ার্ড’ অণুষ্ঠান করার জন্যে এই ফালিটাঙ্যাচুগ প্রস্তুত করা হয়েছে; যেখানে আছে লাভ পয়েন্ট। অপর দিকে চিম্বুক চুড়ার সন্নিকটে তিনদিক থেকে জল পরিবেষ্টিত ‘নৌগাঙ’ রয়েছে যেখানে রিসোর্টের নির্ধারিত কায়াকিং পয়েন্ট এবং দর্শনার্থীদের নৌযান ভিড়ানোর নির্ধারিত জায়গা।
এছাড়া কাপ্তাইবাধের ফলে বাস্তচ্যুত কামিলাছড়ি পাহাড়ি গ্রাম, এ গ্রামবাসীর সান্নিধ্যে তাদের জীবন প্রণালী আপনাকে ভাবনার এবং দেখার খোরাক জোগাবে। রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্টের চারপাশে কাপ্তাই হ্রদের সবুজ জলরাশিতে গোসল বা সাতাঁর কাটার জন্য অপূর্ব সুযোগ আছে এখানে।
এগুলোতেই শেষ নয়। প্রকৃতির সানিধ্যে থেকে সবুজের সাথে মানুষের মিতালী তৈরি করার জন্যে ভিলা/কটেজ কটেজ নির্মাণের উদ্যোগ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আর যারা নানা অনুষ্ঠান, মিটিং বা সভা করতে চান তাদের জন্য বিশাল এক মাঠ রয়েছে আমাদের এখানে। বুহইম রেস্টুরেন্ট এ ভোজনরসিকদের জন্য রয়েছে স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি দেশী এবং বিদেশী খাবারের সুব্যবস্থা।
জীব বৈচিত্র ও প্রাণ প্রাচুর্য্য যেখানে দেখার মতোঃ
শুধুমাত্র থাকা খাওয়া এবং বিনোদন সেবাদানের ধারণার উপর ভিত্তি করেই রিসোর্টটিকে গড়ে তোলা হয়নি; বরং বস্তুত অর্থে একটি অর্থবহ ইকো রিসোর্টের রুপদানের লক্ষ্যে সকল আয়োজন নিবেদিত হয়েছে এখানে। বিভিন্নজাতের মৌসুমী ফলগাছ রোপনের পাশাপাশি রয়েছে নানান জাতের ফুলগাছ, লতা ও গুল্ম। সবমিলিয়ে প্রায় দুইশতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদের নিশ্চিত আবাসস্থলে রূপান্তরিত হয়েছে রাইন্যা টুগুনের বিস্তৃত কম্পাউন্ড। যে সকল উদ্ভিদ, লতা, গুল্ম ইত্যাদি রাইন্যা টুগুনের কম্পাউন্ডে বিদ্যমানঃ
বিভাগ/ধরণ বিদ্যমান প্রজাতির নাম
ফল-আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, আনারস, পেঁপে, কাউফল, কাজু বাদাম, খেজুর, তেলী পাম, মেক্সিকান রয়্যাল পাম, এরিকা পাম, দেশী তাল, নারিকেল, গাব, জলপাই, আমলকি, বহেড়া, হরিতকি, কাঠবাদাম, জামরুল, সবিদা, সুপারি, কামরাঙ্গা, তেঁতুল, রসকো, চালতা, বড়ই, লটকন, লেবু, মালটা, জামবুরা, লিচু, সজনে, পেয়ারা, বেল ও পানিফল।
ফুল-কৃঞ্চচুড়া, রাধাচুড়া, মহুয়া, ক্যাসিয়া জাভানিকা, জাকারান্ডা, কাঠগোলাপ, মাধবীলতা, নীলমণি লতা, পারুল, শিমূল, পলাশ, করবী, রক্ত করবী, জবা, অপরাজিতা, হেলিকোনিয়া, চাইনিজ হ্যাট, চন্দ্রপ্রভা, বাগান বিলাস, চাইনিজ ভায়োলেট, জুঁই, চামেলী, চম্পা, জারুল, সোনালু, নয়নতারা, এডেনিয়াম, হাইড্রেনজিয়া, জিনিয়া, ফুরুস, ডেইজি, সিঙ্গাপুর ডেইজি, মালতি, মধু মালতি, সন্ধ্যা মালতি, টগর, অশোক, সর্পগন্ধা, কৌলাশ, ক্রোটন, ক্যামেলিয়া, রঙ্গণ, মিনি রঙ্গন, হাওয়াইয়ান টি প্লান্ট, শ্বেত রঙ্গন, বাসক, কালোবাসক, মানি প্লান্ট, ফরচুন ট্রি, লাকি ব্যাম্বু, চাইনিজ ব্যাম্বু, ক্যাকটাস, কাঠালী চাঁপা, বোতল ব্রাশ, কদম, নাগেশ্বর, কাঁটা মুকুট, স্পাইডার লিলি, নীল চিতা, লাল চিতা, অল্টারমেন্টেরা ডেনটেইটা, গোলাপ, মোরগ ঝুটি, পর্তুলিকা, পিটুনিয়া, গন্ধরাজ, বেলীফুল, শিউলি, ¯œ্যাক প্লান্ট, স্পাইডার প্লান্ট, রুয়েলিয়া, বোটাম, বনজুঁই, এলোভেরা, রয়োপ্লান্ট, কোলাঞ্চু, ব্রাজিলিয়ান বেচলর বাটন, সাদা ঝিন্টি, নীল ঝিন্টি, পানচাটিয়া, এরেন্ডা, মান্দার, বকুল, রেইন লিলি, অলকানন্দা, এশিয়ান লিলি, বেগোনিয়া, পার্পল হার্ট, এন্থুরিয়াম, তা¤্রপত্র, বাসরলতা, মেক্সিকান সোর্ড লিলি, হাসনাহেনা, কসমস, মর্ণিংগ্লোরী, পদ্মফুল।
অর্কিড-ফিলিপিনো গ্রাউন্ড অর্কিড, ডেনড্রোাবিয়াম এগ্রিগেটাম, ডেনড্রোাবিয়াম মাসকাটাম, ডেনড্রোাবিয়াম সোনিয়া, ডেনড্রোাবিয়াম ফার্মেরী, ডেনড্রোাবিয়াম এলোয়ফোলিয়াম, রাইকোনষ্টাইলিশ রেটুজা, ফক্সটেইল, সিম্বিডিয়াম, পেন্সিল অর্কিড। শঙ্খচুর, হয়া, গ্রীণলিফ, বালবোফাইলাম, ডেনড্রোাবিয়াম পারিসি ও ডেনড্রোাবিয়াম লিটুইফ্লোরাম।
কাঠ-গামার, গর্জন, ফুল শিউরী, সুরুজ, অর্জুন, কোনাক, মেহগিনি, সেগুন, গদা, গজার, বাদি, বুনো নিম, দেশি নিম, বুনো চালতা, একাশিয়া, শীল কড়ই, গুটগুট্যা, চাপালিশ, ঢেউয়া, শিরীষ ও তিতা কড়ই, ঝাউগাছ, চাক্কাগাছ।
বাঁশ-মুলি বাঁশ, মিটিঙ্গা বাঁশ ও বাজ্যাবাঁশ।
ফার্ন, লতা গুল্ম ও অন্যান্য-বার্ড ফেদার, মানি প্লান্ট, কচুরীপানা, চাইনিজ বট, এরেন্ডা, লজ্জাবতী লতা, আসাম লতা, থানকুনি পাতা, লেলংপাতা, কেতকী।
ভোরের আর্দ্রতায় ভেজা ঘাসের বনে যখন চলে ফড়িংসহ নানা কীট পতঙ্গের মিলনমেলা তখন নিশ্চিত মনে করিয়ে দেবে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত কারিগরী জ্ঞান কত যতেœর সাথে প্রয়োগ ঘটিয়েছি আমরা। পক্ষান্তরে, গোধুলী সন্ধ্যায় রাঙা রবির রক্তিম আভা চিকচিক করে যখন নীল পাহাড় ভেদ করে আধারের সাথে আলিঙ্গনে নেমে পড়ে তখন নাম না জানা হাজারো বুনো পাখির নীড়ে ফেরার আয়োজন সত্যিই রোমাঞ্চকর। বাদুর, ঘুঘু, বনমালী, টুনটুনি, ডাহুক, পানকৌড়ি, কুবো, ফুটকি, হরিয়াল, হাঁড়িচাচা, জলপিপি, কাক, দাড়কাক, মাছরাঙা, বেনেবৌ, গো শালিখ, সিপাহী বুলবুল, নীলগলা টিয়াপাখি, শালিক, কাঠশালিক, মৌটুসী, বউ কথা কউ, বনমোরগ, ভীমরাজ, দোয়েল, চড়–ই, বসন্তবৌরীর অভয়ারণ্যে পরিণত হতে চলেছে দিনে দিনে। কখনও কখনও ধনেশ পাখি ও ময়নাদের দলে দলে দেখা মিলে যখন আমাদের কনক চাঁপা গাছগুলিতে ফল পাকা শুরু হয়। এমন মোহনীয় পরিবেশে আপনি যদি নিরালায় বসে একান্ত মনে একটু নিজের জগতে বিচরণ চান তবে এই রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্ট আপনাকে সে পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
কি কি বিনোদন মূলক ব্যবস্থা রয়েছে এখানেঃ প্রদত্ত সেবা বা সুবিধার বাইরেও অতিথি বা দর্শণাথীরা যে সকল কার্যাবলীতে অংশ গ্রহণ করতে পারবে তা হল
ক্যাম্পিং বা তাঁবুবাস, হ্রদের জলে সাতার কাটা, কায়াক বোটে কায়াকিং, নৌকা ভ্রমণ,
ট্রেকিং, পাখি দেখা ও ফটো শুটিং,
ধ্যান
ছবি আঁকা
পাহাড়ি রান্না পদ্ধতি শিখন
লাইভ বারবিকিউ
জৈব কৃষি কােেজর উপর ধারণা লাভ
অর্কিড দেখা ও কেনা
রিসোর্টের অবস্থানঃ যেভাবে যাওয়া যাবে
রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্টটি কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের খুব কাছে হলেও প্রশাসনিকভাবে এটি রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার আওতাধীন এলাকায় অবস্থিত যা গ্রামঃ কামিলাছড়ি, মগবান ইউনিয়ন, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায়। এখানে যাওয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক সহজতর হয়েছে। এখানে যেতে হলে দুই পথে যাওয়া যায়; ১। কাপ্তাই থেকে কাপ্তাই-রাঙ্গামাটি সড়কে মাত্র ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অথবা রাঙ্গামাটি থেকে রাঙ্গামাটি- কাপ্তাই সড়কে গাড়িতে ১৪ কিমি এবং ২। পানি পথে দেশীয় বোটে করে কাপ্তাই ও রাঙামাটি থেকে। পানি পথে রাইন্যা টুগুন যাওয়ার জন্য লোকাল বা লাইন বোটের কোন ব্যবস্থা না থাকলেও ভাড়া করা বোট বা লঞ্চ এর সুবিধা নিতে পারেন। বোটে যাওয়ার মধ্যে আলাদা প্রাপ্তি হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ মূর্ছনা এবং তার চারপাশে বির্স্তীণ বিশাল জলরাশির শীতল স্পর্শে স্বর্গ সুখের মাঝে হারিয়ে যাওয়া। সড়ক পথে গেলেও আপনার প্রাপ্তি কম নয় । সাপের মতো আকাঁবাকাঁ পাহাড়িয়া মসৃণ পাকাপথ আর তার এক পাশে কাপ্তাই হ্রদের নীল জলরাশি অন্যপাশে উঁচু-নিচু আর ছোট বড় সবুজ পাহাড় আপনাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে আপনার গন্তব্যে।
রাইন্যা টুগুনে আগত ইনডোর এবং আউটডোর অতিথিরা এখানে বিদ্যমান নানা জাতের উদ্ভিদ সংরক্ষণ এর উপর একটি ইতিবাচক ধারণা লাভ করেন এবং উদ্ভিদের নানান প্রজাতি সংরক্ষণের উপর একধরণের পরোক্ষ প্রণোদনা পেয়ে থাকেন। কোন ধরণের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ ব্যতীত আন্তরিকতায় ভর করা কর্মীবাহিনির মুগ্ধকর আতিথেয়তা গ্রহন করে ধন্য হতে পারেন। এডভেঞ্চার ট্যুরিজমকে প্রসারের লক্ষ্যে রাইন্যা টুগুন বিশেষ মনোযোগ নিবদ্ধ করছে। এডভেঞ্চার প্রিয় অল্প বয়সের তরুণ তরুণীরা যাতে নিজের মতো করে ক্রিয়া কর্ম করে সময় কাটাতে পারে তার জন্যে কায়াকিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেটার পাশাপাশি জিপলাইন, ট্রি টপ একটিভিটিসহ নানাবিধ এডভেঞ্চার এর সুযোগ করে দেওয়ার জন্যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অচিরেই সেই কমপ্লায়েন্সগুলো স্থাপনে উদ্যোগ গৃহীত হবে। এসব এডভেঞ্চার একটিভিটি কমপ্লায়েন্সগুলোর স্থাপন পুরোদমে সম্পন্ন হয়ে গেলে দেশের ও দেশের বাইরের যুব পর্যটকগণ সুলভ মুল্যে এডভেঞ্চার একটিভিটি উপেেভাগের সুযোগ পাবেন। এতে করে পর্যটকগণ এডভেঞ্চার প্রিয়, সাহসিকতাপূর্ণ উচ্চসিত জীবন গঠনের অনুপ্রেরণা লাভ করবেন।
বলাবাহুল্য যে, রাইন্যা টুগুনই রাঙামাটি জেলার প্রথম ইকো রিসোর্ট। বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত রিসোর্টগুলোর মধ্যে রাইন্যা টুগুনই প্রথম। রাইন্যা টুগুনের উদ্যোগ গুলোর দেখা দেখিতে অনুপ্রাণিত হয়ে বর্তমানে স্থানীয় ও অস্থানীয় উদ্যোক্তাগণ নানা ক্যটাগরীর রিসোর্ট গড়ে তোলার অভিযাত্রায় সামিল হচ্ছেন যা রাইন্যা টুগুনের অগ্রণী ভুমিকাকে স্মরণীয় করে রাখার দাবিদার। এভাবে বেসরকারী উদ্যোক্তা মহলের এগিয়ে চলার গতিসঞ্চার করে পাহাড়ে পর্যটন শিল্প বিকাশকে ত্বরান্বিত করণে অসামান্য অবদান রেখেছে। তদুপরি পর্যটন সেবা শিল্প প্রতিষ্ঠান সমুহের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতার সর্ম্পক সুদৃঢ় করণের তাগিদ থেকে বছর দেড়েক আগে রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশন, রাঙামাটি নামের যে সেক্টর ফোকাসড এপেক্স সংগঠনটির সুচনা হয়েছিল সে সংগঠনটির গোড়াপত্তনেও রাইন্যা টুগুনের রয়েছে প্রধানতম ভূমিকা। নীরবে, নিভৃতে পর্যটন শিল্প প্রসারে কাজ করে চলেছে রাইন্যা টুগুন এবং এর উদ্যোক্তাবৃন্দ। পাহাড়সম প্রতিকূল পরিবেশ ডিঙিয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছার অভিপ্রায়ে অবিচল রাইন্যা টুগুন। এ এক বিশাল অভিযাত্রা! কুঁড়ে ঘর থেকে ক্রমান্বয়ে ৫ তারকামানের ইকো রিসোর্টে রুপান্তরিত হতে তার আর কতটুকু সময় লাগতে পারে কিংবা কি পরিমাণ কাঠখড় পোড়াতে হবে সেটা সময় এবং পর্যটন চাহিদাই বলে দেবে। আগ্রহী কোন পাঠকের যদি যোগাযোগের প্রয়োজন পড়ে সে কারণে রাইন্যা টুগুনের যোগাযোগের তথ্যগুলো নি¤েœ দিয়ে দিলাম।
লেখক: ম্যানেজিং ডিরেক্টর, রাইন্যা টুগুন রিসোর্ট লিমিটেড। ৩১তম ব্যাচ’র সাবেক শিক্ষার্থী, রাজনীিিত বিজ্ঞান বিভাগ. চবি। যোগাযোগের নম্বরঃ ০১৫৫১৭০১২৪৪, ০১৭৮১১৩৬০৭১,