বান্দরবানে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে পার্বত্য এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়ন বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা ২১ অক্টোবর (বুধবার) বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র সহযোগীতায় ও স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা তহজিংডং’র আয়োজনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা।
তহজিংডং’র প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. জিয়া উদ্দিনের সঞ্চালনায় ও নির্বাহী পরিচালক চিং সিং প্রু’র সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা ও সদস্য ক্য সা প্রু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌসিফ মাহমুদ প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, সারা পৃথিবীতেই জলবায়ু পরিবর্তন একটি আলোচিত বিষয়। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষই প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। শুধুমাত্র প্রকৃতিকে কেন্দ্র করেই এই অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা পরিচালিত হয় আর এই পরিবর্তনের সাথে আমাদের সবাইকে মানিয়ে নেয়ার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। দিন দিন নিরাপদ সুপেয় পানির উৎসগুলো সংঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রজাতির বৃক্ষরাজি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আর প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ফলে প্রান্তিক পর্যায়ের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এটা আশার কথা যে, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এখন জলবায়ুর এই পরিবর্তনের সাথে মানুষকে অভিযোজনের সক্ষমতা তৈরির লক্ষ্যে উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়িত হচ্ছে। আমাদের কে কিছু ক্ষেত্রে প্রান্তিক মানুষের কাছ থেকেও শিখতে হবে। কারণ এই এলাকার মানুষের প্রকৃতির সাথে মানিয়ে চলার দক্ষতা রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা প্রকৃতির সাথে মিতালি করে জীবনযাপনের একটা বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান লাভ করেছে। সুতরাং এই এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের সাথে মিশে তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও মতামতগুলো গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ, জলবায়ুর এই পরির্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষ বিশেষত নারীরা, সে ক্ষেত্রে তাদের জীবনে জলবায়ুর প্রভাবগুলোকে কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ যুগ যুগ ধরে পাহাড়ে বাস করছেন, তারা আগে কখনো ভূমি ধ্বসের মতো ঘটনার সম্মুক্ষীণ হননি। তাহলে এখন কেন পাহাড় ধসে মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনার সম্মুক্ষীণ হতে হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জলবায়ু বা পরিবেশের উন্নয়ন করতে হলে, এখানকার প্রকৃতির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে হবে। পাহাড়ের প্রেক্ষাপটে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণার মাধ্যমে এই এলাকার উদ্ভিদ, প্রাণ এবং কৃষি বৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কার্যকর উদ্যোগ ও ফলপ্রসু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আমরা অনেকেই এসডিজি’র কথা বলি, কিন্তু এসডিজি’র সঠিক ব্যাখা সম্পর্কে অবগত নই। আর, এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে পরিবেশ বিধ্বংসী কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা যাবে না। আমরা যে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছি, সেটা শুধু আমাদের সাময়িক উন্নয়নের জন্য গৃহিত হলে চলবে না, বরং আমাদের কে স্থায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
প্রকল্প কার্যক্রম ও অগ্রগতি উপস্থাপনের পর মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন অভিযোজনে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রেক্ষাপটে গবেষণা করা প্রয়োজন। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের মধ্যে একটি বৈচিত্র্যময় এলাকা, সুতরাং পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য পাহাড়ের প্রকৃতি ও পরিবেশকে বিবেচনা পূর্বক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, নতুবা এটি একটি অকার্যকর উন্নয়ন পরিকল্পনায় পর্যবসিত হবে। আর এই পরিবেশ নষ্টের পেছনে আমরা নিজেরাই অনেক ক্ষেত্রে দায়ী। ক্রমাগত বন উজাড় হওয়া, পাহাড়-গাছকাটাসহ নানা অপরিকল্পিত উদ্যোগের ফলে পানির পুরোনো উৎসগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাইলেই জলবায়ুর পরিবর্তন করতে পারবো না। কিন্তু আমরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে পরিকল্পিত ও স্বাতন্ত্র উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে পাহাড়ের মানুষের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সক্ষমতাকে উন্নীত করতে পারবো। সর্বোপরি এই এলাকার প্রান্তিক মানুষের বসবাস উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এই এলাকার মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এবং সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারবো।
(প্রেস বিজ্ঞপ্তি)