ইয়াছিন রানা সোহেল
তিনি দেশের সবচেয়ে বড় জেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের দুই দুইবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। ছিলেন সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যানও। রাজনৈতিক বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার তাঁর। জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন একসময়। রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক কাজেও তাঁর অংশগ্রহণ রয়েছে চোখে পড়ার মত। তিনি হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর; দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে নেতা। কিন্তু রাঙামাটি শহরের মানুষের কাছে ব্যক্তি মুছা মাতব্বর একজন দানশীল উদার মনের মানুষ হিসেবে সমধিক পরিচিত। না একদিনে এই পরিচিতি তাঁর গড়ে উঠেনি। দলীয় পদ পদবি যখন ছিল না আর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ারও আগে তিনি সমাজের মানুষের জন্য কাজ করেছেন নীরবে। প্রায় প্রতিদিনই তাঁর কাছে অসংখ্য মানুষ যেতেন; সহযোগিতার জন্য। সামাজিক স্বেচ্ছাসেবিরাও ছুঁটতেন তাঁর কাছে। কাউকে নিরাশ করতেন না কখনো। নিজের সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করতেন। রাঙামাটি শহরের বৃহত্তর রিজার্ভ বাজার এলাকার মানুষের মুখে মুখে ‘তিনি একজন ভালো মানুষ’ হিসেবে তাঁর বেশ নামডাকও রয়েছে। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান; সেই হিসেবে অহংকার ছুঁতে পারেনি তাঁকে। বেশ সাদাসিদে জীবনযাপন তাঁর। রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে ব্যক্তি মুছা মাতব্বর রাঙামাটি শহরের মানুষের কাছে বিপদের পরম বন্ধু হিসেবে পরিচিত। করোনাকালীন সময়ে শহরময় ঘুরে ঘুরে তিনি লোকজনদের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেছিরেন। রমজান ও ঈদের সামগ্রীও দিয়েছিলেন সহ¯্রাধিক পরিবারকে। কঠিন সেই সময়ে নিজেকে অসহায়দের পাশেই রেখে নিজের আবারোও উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। মানবিক অনেক কাজইতো তিনি করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু শুক্রবার রাতে তাঁর পালক মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান নিজে দাঁড়িয়ে থেকে যেভাবে সামাল দিয়েছেন তাতে বিস্মিত হয়েছেন সকলে।
লংগদু উপজেলার মাইনীর বাসিন্দা আবদুস সোবহান। ১৭ বছর আগের কথা। অভাব অনটনের সংসার ছিল তার। ৫সন্তানের জনক সোবহান দিনমজুরের কাজ করেই সংসার চালাতেন। বিভিন্ন সময় সাহায্য সহযোগিতার জন্য ছুঁটে যেতেন হাজী মুছা মাতব্বরের কাছে। হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন সোবহান। দিশেহারা হয়ে পড়ে তার পরিবার। সোবহানের ৫বছরের শিশু সন্তান রোকসানাকে বুকে টেনে নেন হাজী মুছা মাতব্বর ও তাঁর স্ত্রী শামীমা আকতার। নিজের দুই সন্তান মিশকাত ও তাসকিয়ার মতই লালন পালন করে রোকসানাকে। তাকে আরবী শিক্ষার পাশাপাশি স্কুলেও ভর্তি করান। পরিবারের সদস্যের মতই ছিল রোকসানা। ৫ বছরের শিশু রোকসানার বয়স এখন-২২। বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্রের খোঁজ করেন মুছা-শামীমা দম্পতি। মাদকমুক্ত ন¤্র ভদ্র পরিশ্রমী পাত্র খুঁজতে থাকেন তাঁরা। শহরের মহসিন কলোনীস্থ মরহুম আবদুল গনির ছেলে লোকমানের খোঁজ পান তাঁরা। ছোট একটি চাকরি করে মা ভাইবোনসহ থাকে মহসিন কলোনী এলাকায়। মাদ্রাসা পড়–য়া লোকমান বেশ শান্ত শিষ্ট ও ভদ্র ছেলে হিসেবে সমাজে বেশ পরিচিত। উভয় পক্ষের সম্মতিতে ঘটা করেই আয়োজন করা হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। সমস্ত খরচ বহন করেন হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর। রোকসানার সুখের সংসারের জন্য পাত্র লোকমানের বাড়িটিও পাকা করে দিচ্ছেন তিনি।
রাঙামাটি রেড ক্রিসেন্টের সদস্য সুলতান মাহমুদ বাপ্পা বলেন, বিয়ের আয়োজনের শুরু থেকেই সবকিছুতেই আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। রোকসানাকে লালন পালন করে বড় করেছেন হাজী মুছা মাতব্বর। এই মেয়েকে চায়লে যেনতেনভাবে বিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। ছেলের ব্যাপারে যাচাই বাছাই করেই তবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ছেলেটি খুবই ভালো। তাকে ১৫ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে বাড়ি করে দিচ্ছেন। বাড়ি বানাতে যে কয় মাস লাগবে, ততদিন ভাড়া বাসায় থাকতে হবে ছেলের পরিবারকে। সেই ভাড়াও তিনি আগাম পরিশোধ করেছেন। আসলে এই ধরনের মানবিকতা সমাজে এখন বিরল। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী উভয়েই মহৎপ্রাণ মানুষ।
বিয়ের সকল আয়োজনের সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাওয়াল উদ্দিন। তিনি জানান, মেয়েটিকে মুছা ভাই ও ভাবী লালন পালন করেছেন ঠিক। পালক মেয়ে নয়; নিজের মেয়ে হিসেবেই পরিচয় দিতেন। আমাদের সমাজে দেখা যায় পালক মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু মুছা ভাই তার ব্যতিক্রম উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। বিয়ের উপযুক্ত হওয়ার সাথেসাথে নিজের মেয়ের মতই বিয়ের সকল আয়োজন করেছেন। সব মেহমানকে তিনি ও তাঁর স্ত্রী শামীমা নিজেই দাঁড়িয়ে থেকে আপ্যায়ন করলেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েই দায়িত্ব সারেননি। আজীবন এই মেয়ের দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। বর্তমান সময়ে সচরাচর এমনটা দেখা যায়না। যদিওবা মুছা ভাই বলছেন ছোটখাট আয়োজন। প্রকৃতপক্ষে একজন ধনী পরিবারের সন্তানের বিয়ের সব আয়োজন ছিল অনুষ্ঠানে। দাওয়াতও করেছেন কয়েক শত লোকজন। অনেক বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় রাজনৈতিক, সামাজিক লোকজনের পাশাপাশি জেলাপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আরিফুল আমিন বলেন, শুক্রবার মুছা মাতব্বরের আমন্ত্রণে বিয়েতে উপস্থিত ছিলাম। তাঁর এই আয়োজন দেখে সত্যি অবাক না হয়ে পারলাম না। বর্তমান সময়ে এই ধরনের দৃষ্টান্ত সমাজে বিরল। তিনি অনেক বড় মহৎপ্রাণের পরিচয় দিয়েছেন। নিজের মেয়ে হিসেবেই পরিচয় দিচ্ছেন সকলকে। তাঁর এই কাজটি আমাদেরও বেশ অনুপ্রাণিত করেছে। এটি নিঃসন্দেহে সমাজের জন্য বিরল দৃষ্টান্ত, শিক্ষনীয় এবং অনুকরণীয়।
শহরের অভিজাত ক্লাবে বিয়ের আয়োজনের কোনটায় কমতি রাখেননি মুছা-শামীমা দম্পতি। অনুষ্ঠানের ফাঁকে আলাপচারিতায় মুছা মাতব্বর বলেন, ছোটখাট আয়োজনের মধ্যে দিয়ে সারতে হচ্ছে। সবাইকে বলতেও পারিনি। তবে মেয়েটা যেন সুখে শান্তিতে ও সম্মানের সাথে জীবন কাটাতে পারে-সেই চেষ্টায় করছি।
একটি বিয়ে সমাজের মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে অনেক কিছুই। শিক্ষনীয় ও অনুকরণীয় উদাহরণ বৈ আর কিছুই নয়। হাজী মুছা মাতব্বরের মানবিকতা অনুপ্রাণিত করবে শত হাজারো মানুষকে।
পিতৃত্বের অবাক ভালোবাসায় মুগ্ধতা ছড়ালেন এক নেতা
আলোকিত পাহাড়
4 Mins Read
Previous Articleলেবু আপেলের সাথে একদিন
Next Article বর্ষায় ঈদে ছুটি কাটাতে পারেন রাঙামাটিতে
এই বিভাগের আরও সংবাদ
সম্পাদকঃ ফজলে এলাহী
নির্বাহী সম্পাদকঃ হেফাজত সবুজ
প্রধান কার্যালয়
পৌর মার্কেট, দ্বিতীয় তলা, পৌরসভা এলাকা, রাঙামাটি-৪৫০০
ফোন : ০১৭১৮৫৪৭৮৭৮, ০১৬১৮৫৪৭৮৭৮।
ইমেইল : pahar24news@gmail.com
পাহাড়ের সংবাদ
আমাদের সম্পর্কে
© 2024 All Rights Reserved pahar24.com. Developed by MicroWeb Technology.