বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর ৬ষ্ঠ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার রাজধানী ঢাকায় দিনব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক থেকে পিসিপি’র নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষক সংকট নিরসন, রোহিঙ্গা পুনর্বাসন বন্ধ ও পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কুনেন্টু চাকমাকে মুক্তি এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান। পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি অঙ্কন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বৈঠকে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ বক্তব্য উত্থাপন করেন।
নেতৃবৃন্দ পাহাড়ে শিক্ষার পরিবেশের চিত্র তুলে ধরে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি চলছে। জেলা পরিষদের কর্মরত ব্যক্তিরা লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলছে। প্রথম আলো পত্রিকায় গত ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ‘পাহাড়ে প্রাথমিকের পর ঝরে পড়ে ৪০ শতাংশ শিশু’ শিরোনামে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংখ্যায় অল্প হলেও অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট ও ছাত্রাবাস সংকট রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষাব্যবস্থার এমন বেহাল অবস্থা থাকলেও সরকার ও স্থানীয় শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না। ফলে পাহাড়ে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের দ¦ারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
রোহিঙ্গা পুনর্বাসন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, খাগড়াছড়ি ইউনিয়নের বিজিতলা ও গামারিঢালা এলাকায় অবৈধভাবে ৩৩ পরিবার রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করেছেন। ইতিমধ্যে বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্তের খবর জানা গেছে। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি জটিল করতে এবং জাতিগত সংঘাত জিইয়ে রাখার জন্য গোপনে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন করছে। অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন বন্ধ করে পুনর্বাসিত রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার শরনার্থী শিবিরে ফিরিয়ে নিতে হবে।
ছাত্রনেতা কুনেন্টু চাকমাকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, পিসিপি কেন্দ্রীয় নেতা কুনেন্টু চাকমাকে ৪ বছরের অধিক রাঙামাটি কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে ২ বার কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়ার সময় পুনঃগ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তারা অবিলম্বে কুনেন্টু চাকমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারপূর্বক তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার দাবি জানান।
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে নেতৃবন্দ বলেন, সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করছে। কিন্তু এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিচ্ছায়া মাত্র। এই আইনে অনেক সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র-শিক্ষক, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সাধারণ জনগণ হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং অনেককে কারাগারে যেতে হয়েছে। লেখক মোস্তাক কারাগারে মারা গেছেন। জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রী খাদিজাতুল কুবরা ১ বছরের অধিক কারাগারে বন্দী রয়েছেন, আদালত তাকে জামিন দিচ্ছে না।
নেতবৃন্দ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত সাইবার নিরাপত্তা আইনেও এ দেশের নাগরিকগণ নানা হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হবেন-এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে এই আইনটি পুরোপুরি বাতিল করার দাবি জানান।(বিজ্ঞপ্তি)