অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হু হু করে বাড়ছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। এতে করে চিরচেনা রূপ ফিরে পেয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎতম কাপ্তাই হ্রদ। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলার সাথে নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। অথচ কয়েকমাস আগেও কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছিল হ্রদের ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার মানুষ। বর্তমানে তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সেইসাথে বিভিন্ন উপজেলায় অনায়াসে নৌ-পরিবহন যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে।
এবিষয়ে কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় বাসিন্দা মো. সরোয়ার, সুমন দাশ, জাহানারা বেগম জানান, এই বর্ষা কাপ্তাই হ্রদের জন্য আর্শীবাদ হয়ে এসেছে। কেননা রাঙামাটির মধ্যে বিলাইছড়ি, জুড়াছড়ি সহ কয়েকটি উপজেলা আছে যেগুলোতে একমাত্র নৌপথে যাতায়াত করতে হয়। যখন কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যায় তখন ওইসব উপজেলার মানুষের দুঃখ, কষ্টের সীমা থাকেনা। তাই কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি পেলে সবার উপকার হয়। আর তাছাড়া কাপ্তাই হ্রদে এখন পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে মাছের উৎপাদন ও বৃদ্ধি পাবে। এতে করে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরু হলে জেলেরাও এর সুফল ভোগ করবে।
তবে স্থানীয় বাসিন্দা মংথোই মারমা, মো. কবির হোসেন জানান, অনেকের বাসা বাড়ি কাপ্তাই হ্রদের পাশে হওয়াতে পানি বৃদ্ধি পেলে কিছু কিছু নিমাঞ্চল প্লাবিত হবে। এতে করে কারো কারো বসতবাড়ি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তবুও তারা সকলে চায়, কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে চিরচেনা রূপে ফিরে আসুক।
কাপ্তাই জেটিঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার শীতল সরকার জানান, বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। বোট চালক ও যাত্রীদের মাঝেও অনেক স্বস্তি ফিরে এসেছে।
এদিকে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল রয়েছে এবং গত সোমবার পর্যন্ত ২১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট দিয়ে সর্বমোট ২ শত ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। তৎমধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১নং ইউনিটে ৪৬ মেগাওয়াট, ২নং ইউনিটে ৪০ মেগাওয়াট, ৩নং ইউনিটে ৪৯ মেগাওয়াট, ৪নং ইউনিটে ৪০ মেগাওয়াট এবং ৫নং ইউনিটে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়লে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরো বাড়বে বলে তিনি জানান।
এছাড়া কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্টোল রুমের তথ্য অনুযায়ী রুলকার্ভ অনুযায়ী কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে ৯৪ দশমিক ৭৬ এমএসএল (মিনস সি লেভেল) পানি থাকার কথা থাকলেও মঙ্গলবার সকাল ১১টা পর্যন্ত লেকে ৯৮ দশমিক ২৫ এমএসএল পানি রয়েছে। অর্থাৎ কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ রুলকার্ভের চেয়ে বেশি রয়েছে।
প্রসঙ্গত, কাপ্তাই হ্রদে পানির ধারণক্ষমতা ১০৯ মিনস সি লেভেল (এমএসএল) এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মাধ্যমে ২৪২ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে।