তৌসিফ মান্নান ॥
প্রিপেইড মিটারে জনভোগান্তি নিরসনে ১৬ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি রাঙামাটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে পেশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। রবিবার সকালে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের কার্যালয়ে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে জোরপূর্বক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার প্রদান কার্যক্রম বন্ধ এবং প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তি নিরসনে বিদ্যুৎ বিভাগের সহযোগিতা কামনা করা হয়। এই সময়ে নির্বাহী প্রকৌশলী সুজনের উত্থাপিত অভিযোগ ও দাবিসমূহ যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দেন।
স্মারকলিপি পেশকালে উপস্থিত ছিলেন সুজন রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি এডভোকেট দীননাথ তঞ্চঙ্গ্যা, সম্পাদক এম জিসান বখতিয়ার, অর্থ সম্পাদক আশীষ বড়–য়া, সুজন সদর উপজেলার সভাপতি পলাশ কুসুম চাকমা, সম্পাদক শংকর হোড়, পৌর কমিটির সভাপতি ইন্দ্রদত্ত তালুকদার, সম্পাদক মো. এরফানুল হক রুমেল, সুজন বন্ধু জেলা কমিটির সভাপতি মিশু দেসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জালাল উদ্দীন, সহকারী প্রকৌশলী খন্দকার রোকনুজ্জামান, উপ সহকারী প্রকৌশলী রঞ্জু আহমেদ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, পূর্ববর্তী সরকার দেশকে ডিজিলাইজেশনের নামে ঘরে ঘরে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাঙামাটি পৌর এলাকায় প্রথম দিকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়। বর্তমানে পৌর এলাকায় বাসাবাড়িতে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পৌর এলাকার দুই-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ গ্রাহককে ইতোমধ্যে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হয়েছে। প্রিপেইড মিটার স্থাপনের পর গ্রাহকদের বিভিন্ন অভিযোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনা জরুরি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর পক্ষ থেকে গ্রাহকদের বিভিন্ন অভিযোগ ও দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হয়েছে।
অভিযোগ ও দাবিগুলোর মধ্যে জোর পূর্বক প্রিপেইড মিটার নিতে বাধ্য করা বন্ধ করা, প্রিপেইড মিটার না নিলে লাইন কাটা বন্ধ করা, লোড বাড়ানোর জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ, প্রতি মাসে মিটারের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, এটা কত মাস পর্যন্ত নেয়া হবে তা গ্রাহককে জানিয়ে দেওয়া, প্রিপেইড মিটারের গ্রাহককে সকল সেবা নিতে বিদ্যুৎ অফিসে যেতে হয়, এমন অভিযোগ যা কোনভাবেই কাম্য নয়। যে কোনও কারণে লাইনে টান পড়লে মিটার লক(বন্ধ) হয়ে যাওয়ার অভিযোগ, মিটারের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেলে ব্যাটারি স্থাপনে গ্রাহককে চার্জ প্রদান করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে একটি মিটার কতদিন পর্যন্ত ওয়ারেন্টি/গ্যারান্টি থাকবে সেটা গ্রাহককে জানিয়ে দেওয়া, মিটার নষ্ট হলে গ্রাহককে পুনরায় ৭/৮ হাজার টাকা দিয়ে মিটার স্থাপন করতে হয়। সেক্ষেত্রে পুনরায় মিটারের প্রতিমাসের ভাড়া কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে, লোড/কিলো কমানোর সুযোগ দিতে হবে, কোনও প্রকার পূর্ব নোটিশ বা ঘোষণা ছাড়া মিটার লক করে দেওয়া বন্ধ করতে হবে। যেকোনও অভিযোগের বিষয়ে গ্রাহককে আগেভাগেই জানিয়ে দেওয়া, প্রিপেইড মিটারের ক্ষেত্রে বিল বেশি কাটার অভিযোগ, রিচার্জের তিন ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় রিচার্জ করতে না পারার নিয়ম পরিবর্তন করা, প্রাথমিক পর্যায়ে যে সকল মিটার লাগানো হয়েছিল, সেসব মিটারে এনালগ পদ্ধতিতে নাম্বার দিয়ে ইউনিট ক্রয় করতে হচ্ছে। সব প্রিপেইড মিটারে সরাসরি টাকা ঢুকানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, গ্রাহকদের সমস্যা সমাধানে বারবার বিদ্যুৎ অফিসে যাওয়া আসা করতে হয়, এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ অফিস শহরের একদিকে হওয়ায় শহরবাসীর সময় ও খরচ দুটোই বেশি যায়। এজন্য শহরের বনরূপায় গ্রাহকদের সেবা প্রদানে একটি অফিস স্থাপন করা, মিটারে কত টাকা আছে সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইলে জানানোর ব্যবস্থা করা, নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বাক্ষর প্রয়োজন যা গ্রাহকরা খুঁজেই পাচ্ছে না। যার কারণে বেশি টাকায় গ্রাহকদের চুক্তিতে যেতে হয়, এই হয়রানির অবসান করা, প্রিপেইড মিটার নেয়ার প্রায় এক বছর পর আগের বকেয়া বিল রয়েছে বলে গ্রাহকদের কাছে বিল পাঠানো এবং সেটা দিতে অপারগতা দেখালে মিটার লক করে দেয়া হচ্ছে। অন্তত মিটার স্থাপনের ক্ষেত্রে কোনও বকেয়া থাকলে সেটা আগেই গ্রাহককে নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেওয়ার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
এসময় রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জালাল উদ্দীন জানান, একটি মিটার স্থাপনের পর সেটি ৩৬ মাস পর্যন্ত গ্যারান্টি রয়েছে, এর মধ্যে কোনও সমস্যা হলে বিদ্যুৎ বিভাগ পরিবর্তন করে দেবে। এছাড়া জোরপূর্বক কাউকে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হচ্ছে না দাবি করে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, যেসব অভিযোগ ও দাবি জানানো হয়েছে আমরা সবগুলোই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছি। সমস্যাগুলো সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। গ্রাহকদের ভোগান্তি অবসানে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এই বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর সম্পাদক এম জিসান বখতিয়ার বলেন, নাগরিকরা যেখানেই হয়রানির শিকার হবে, সেই জনভোগান্তি দূরীকরণে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রাথমিকভাবে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আমাদের দাবি, প্রস্তাব পেশ করছি, যদি কর্তৃপক্ষ সেসব দাবি পূরণ না করে তাহলে পরবর্তীতে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর সভাপতি এডভোকেট দীননাথ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ১৬টি দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি আমরা নির্বাহী প্রকৌশলী সাহেবকে প্রদান করেছি। তিনি বেশ আন্তরিকতার সাথে আমাদের উত্থাপিত অভিযোগ ও দাবিগুলো গ্রহণ করেছেন এবং সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়ার আশ^াস দিয়েছেন। পরবর্তীতে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে সেটা আমরা পর্যবেক্ষণে রাখবো।