সাম্প্রতিক সময়ে দীঘিনালায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সোমবার নগত অর্থ সহায়তা দেয় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল। এনজিও আইডিএফ এর সহযোগীতায় আইডিএফ এর সদস্যদের মাঝে এ অর্থ বিতরন করা হয়। অভিযোগ উঠেছে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা না করে স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সহায়তা না পাওয়া প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ এরকম ক্ষোব্ধ সদস্যরা বিভিন্ন এলাকা থেকে মঙ্গলবার আইডিএফ অফিসে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সংস্থাটি থেকে বলা হচ্ছে লটারির মতো করেই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, উপজেলার দীঘিনালা, কবাখালী ও মেরুং ইউনিয়নের ১৭৬ জনের মাঝে ৩ হাজার টাকা করে মোট ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা বিতরন করা হয়।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে পাড়াতে আইডিএফ এর কার্যক্রম রয়েছে সেখানে সংস্থাটির সুবিধাভোগীদের কমিটিও রয়েছে। আছে কমিটির সভাপতি বা দলনেত্রী। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রনয়নে কমিটির কারো সাথে আলোচনা করা হয়নি এমনকি সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষয়ক্ষতিও নিরুপন করা হয়নি। সোমবার অর্থ বিতরনের খবর এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর সহায়তা বঞ্চিত ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে শুরু হয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। সুবিধাভোগী এলাকার মধ্যে খালকুলপাড়া, বোয়ালখালী ব্রিকফিল্ড এলাকাতে সদস্যদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদের খবরও পাওয়া গেছে। ব্রিক ফিল্ড এলাকার তাতুমনি চাকমা (২৮) জানান, তিনি টাকা পেয়েছেন এ খবর শোনার পর সেখানকার অন্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে তার ওপর। এদিকে মঙ্গলবার সকাল হতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্ষোব্ধ সদস্যরা দলবেঁধে আসতে শুরু করে আইডিএফ অফিসে। অফিসে তারা সহায়তা না পাওয়ার কারণ জানতে চায়। যারা সহায়তা পেয়েছে তারা ক্ষতিগ্রস্থ না দাবী করে কে তালিকা করল এমন প্রশ্ন করে অফিস কতৃপক্ষের সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পরেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থরা।
আইডিএফ অফিসের সামনে কথা হয় কালাচাঁদ মহাজন পাড়ার সুখি চাকমা (২১), শিখা চাকমা (২৫), সোনাবী চাকমা (৩০), সোনারদানা চাকমার (৫০) সাথে। ওই এলাকা থেকে আইডিএফ অফিসে আসেন ১৫ জন। ক্ষোব্ধকন্ঠে অভিযোগ করে সবাই বলছিল, ‘ফসল গেলো কার আর টাকা পায় কে’। সুখি চাকমা জানান, সে পাড়ার দলনেত্রী তিনি। তাঁর পাড়াতে ২৩জন সদস্য রয়েছে। অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে মাত্র ২জনকে। সে ২জনও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ নয় দাবী করে কালাচাঁদ মহাজন পাড়ার সদস্যরা জানান, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা বাদ পড়েছে। তারা আরও জানান, তালিকা তৈরি বা টাকা দেওয়ার কোন খবরই এলাকায় তাদের জানানো হয়নি। তারা আরও জানান, অফিসে যাওয়ার পর লটারির মাধ্যমে তালিকা করা হয়েছে বলে তাদের জানিয়ে বিদায় করে দিয়েছে।
বেতছড়ি থেকে অফিসে আসা আরতি চাকমা (৩৫), শান্তনা দেবী (২৮), মিল্কি চাকমা (২৫) ও অনাকি চাকমাও (৩২) একই অভিযোগ করে জানান, তাদের এলাকা বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সেখানের একজনও সহায়তা পায়নি। অথচ বন্যায় কখনো ক্ষতি হয়না বাবুছড়া ইউনিয়নের এরকম এলাকার লোকজনদের টাকা দেওয়া হয়েছে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে আইডিএফ এর দীঘিনালা উপজেলা টিম লিডার অনির্বান চাকমা বলেন, ‘শুধু চাষাবাদের ক্ষতি দেখে তালিকা করা হয়নি, কারো ল্যাট্রিনও ক্ষতি হয়েছে; তাদেরকেও ক্ষতিগ্রস্থ হিসাবে টাকা দেওয়া হয়েছে।’ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা বাদ পরার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সীমিত টাকাতো সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়না আর এলাকায় গিয়ে তালিকা করলে ঝামেলা আরো বেশি হতো।’ এক প্রশ্নের জবাবে অনির্বান চাকমা বলেন, ‘লটারি না আবার লটারিও ধরে নিতে পারেন।’
উল্লেখ্য, হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল ও এর সহযোগী সংস্থা আইডিএফ ২০১৩ সালের জুলাই থেকে দীঘিনালায় ১হাজার ২৫০ দুস্থ পরিবার নিয়ে কাজ করছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য-১ (২০১৫ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও অতি দারিদ্রতা নিরসন) এ অর্জনে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করা।