শংকর হোড়
অবশেষে রাঙামাটির শহরের ফিশারি বাঁধের ধারক দেয়ালের বাকি অংশের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। রাঙামাটি সড়ক বিভাগের অধীনে ৬৬৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে এই বাঁধের দুই দফায় একপাশের ২৯৯ মিটার কাজ শেষ হয়। বাকি ৩৬৪ মিটারের কাজ সম্প্রতি শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাঁধের পুরো অংশে ধারক দেয়াল তৈরি করা গেলে বর্ষায় রাস্তা ভাঙ্গণের যে ঝুঁকি সেটা নিরসন হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, বাঁধটির ধারক দেয়াল নির্মাণ শেষে স্থায়ীভাবে এই স্থানটি যাতে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়। সড়ক বিভাগও জানিয়েছে, ধারক দেয়ালের পর তাদের সাময়িক ও স্থায়ী দুইভাবে সৌন্দর্যবর্ধনের পরিকল্পনা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর শহরের তিনটি এলাকা রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি ও বনরূপাকে ফিশারি বাঁধের মাধ্যমে সংযোগ ঘটানো হয়। কাপ্তাই হ্রদের দুই পাশে মধ্যখানে কয়েকটি দ্বীপকে একত্রিত করে এই সড়কের সংযোগ স্থাপন করা হয়। দুই পাশের হ্রদের সৌন্দর্যের কারণে এই স্থানটি স্থানীয় ও পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। কিন্তু এই বাঁধের একটি পাশ ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে রাস্তার তীরবর্তী স্থানে এসে পৌঁছেছে। বেশ কয়েকটি স্থানে তীব্র ভাঙ্গণের কারণে বর্ষায় যে কোনও মুহূর্তে সড়কটি ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হলে সড়ক বিভাগ বল্লি(গাছের খুঁটি) দিয়ে আপদকালীন সড়কটি সচল রাখে। বিভিন্ন সময়ে উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধটি রক্ষা ও সৌন্দর্যবর্ধনে উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত কোনও প্রতিষ্ঠানই এই বাঁধ রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঐ সময় জেলা জুড়ে সড়কের ১৫১টি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত সেসব সড়ক মেরামত, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পাহাড়ধস রোধে ২৩৯ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে সড়ক বিভাগ। এই প্রকল্প থেকেই ৬৬৩ মিটার বাঁধের মধ্যে দুই দফায় ২৯৯ মিটার কাজ হয়। তবে বাঁধটির পুরো অংশে ধারক দেয়াল নির্মাণ না হওয়ায় গত বর্ষা মৌসুমে সড়ক ভেঙ্গে যান চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়। তাৎক্ষণিকভাবে সড়ক বিভাগ প্রায় ৫০ মিটার এলাকা বল্লি(গাছের খুঁটি) দিয়ে সড়কটি রক্ষা করে। পরবর্তীতে টেন্ডার আহ্বানের পর বাঁধের বাকি ৩৬৪ মিটার অংশের কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কেভেটার দিয়ে বাঁধের একপাশে মাটি কেটে সমান করা হয়েছে। সমান করা অংশে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। শ্রমিকদের একটি অংশ রড সোজা করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে এবং বাকি শ্রমিকরা পাইলিংয়ের কাজে ব্যস্ত রয়েছে। শ্রমিকরা জানিয়েছে, বর্ষার আগেই দেয়ালের কাজ শেষ করা হবে।
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের নির্বাহী পরিচালক ফজলে এলাহী বলেন, ফিশারি বাঁধের বাকি অংশের দেয়ালের কাজ শুরু হওয়া অবশ্যই আশাবাদী হওয়ার মত একটা বিষয়। তবে পুরো অংশের কাজ শেষ করতে গেলে যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেটা সবার সাথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান করতে হবে। দেয়াল নির্মাণের পর সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য গার্ডেনিংসহ আরো নানান উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। আমার জানা মতে, বর্তমান সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বাঁধের সৌন্দর্যবর্ধনের বিষয়ে বেশ আন্তরিক। তাই আশা করছি এবার ফিশারি বাঁধ নিয়ে এখানকার মানুষের যে আক্ষেপের গল্প সেটা শেষ হবে। এক্ষেত্রে সড়ক বিভাগকে সবার সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। তবে যাই করা হোক না কেন, অবশ্যই সেটা পরিকল্পিত হতে হবে।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাঙামাটিতে ৯৬৫ মিটার ধারক দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। যার মধ্যে ফিশারি বাঁধে ৩৬৪ মিটার ধারক দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বাঁধের একপাশের পুরো অংশ দেয়ালের আওতায় চলে যাবে। দেয়ালের কাজ শেষ হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সাময়িকভাবে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হবে। তবে স্থানটিকে আরো আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার জন্য স্থায়ী সৌন্দর্যবর্ধনের প্রয়োজন রয়েছে। যা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। তারপরও আমরা কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, বর্তমানে সেটি ডিজাইন পর্যায়ে রয়েছে।