শংকর হোড় ও জিয়াউল জিয়া
আবারো প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে উঠেছে কাপ্তাই হ্রদ। জাল ও জেলের মিতালি শুরু হয়েছে ফের ১২৭দিন পর। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি এবং অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকে। এবছর হ্রদে পানি কম থাকায় ৯০দিনের স্থলে ১২৭দিন হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি রাখে জেলা প্রশাসন। পরবর্তীতে রোববার থেকে আবারো ফিরে এসেছে কাপ্তাই হ্রদের সেই চিরচেনা রূপ। ভোর হতেই জেলেদের আহরণকৃত মাছ বোটে করে নিয়ে আসা হয় জেলার সর্ববৃহৎ অবতরণ কেন্দ্র ফিসারি ঘাটে। এতে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের হাঁকডাকে মূখর হয়ে উঠেছে পল্টুন। তবে এবার কাপ্তাই হ্রদে পানি বেশি থাকা এবং আঞ্চলিক দলের চাঁদার কারণে হ্রদের একটি অংশে জেলেরা মাছ আহরণে না নামায় প্রথমদিনে প্রত্যাশিত মাছ আহরণ হয়নি।
বিএফডিসি সূত্র মতে, প্রথম দিনে ৬৫ মে. টন মাছ অবতরণ হয়েছে। যা থেকে রাজস্ব আদায় হয় প্রায় ১৩ লাখ টাকা। রাঙামাটির চারটি অবতরণ ঘাটের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করা হয়।
জেলে বাদল দাস জানান, হ্রদে প্রচুর পানি এবং স্রোত থাকায় জাল টানা যাচ্ছে না। পানি স্থির না হওয়া পর্যন্ত জালে মাছ আসবে কম। তবুও দীর্ঘ দিন পর জাল নিয়ে হ্রদে নামতে পারায় আমরা সবাই খুশি। তিনি আরও জানান, বন্ধকালীন বেকার সময় কেটেছে। পরিবার নিয়ে কষ্টে ছিলাম। আশা করি জালে মাছ আসবে। আমাদের কষ্ট দুর হবে।
আরেক জেলে বাঁধন দাস জানান, পানি কিছুটা কমে আসলে জালে মাছ আসবে। অন্যান্য বছর প্রথম দিনে প্রতি খোপে ৫-৬ ড্রাম মাছ পেতাম এবছর ১০-১২ কেজির বেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
কাপ্তাই হ্রদ বৃহত্তর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর শুক্কুর শুকুর জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় হ্রদে এবছর পানি বেশিসহ কিছু সমস্যা থাকায় জেলেরা হ্রদে মাছ শিকার করতে পারছে না। এখনো অনেকেই মাছ আহরণে নামেনি। তাই প্রথম দিন প্রত্যাশিত মাছ আহরণ হয়নি।
এদিকে আঞ্চলিক দলের চাঁদার অভিযোগে কাপ্তাই উপজেলার জেলেরা হ্রদ থেকে প্রথমদিন মাছ আহরণ করেনি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হ্রদে মাছ শিকার ও পরিবহনের জন্য স্থানীয় আঞ্চলিক দলগুলোকে চাঁদা দিতে হয়। এবছর তারা চাঁদার হার দ্বিগুণ করেছে। যা অনেক ব্যবসায়ী ও জেলের পক্ষে এখনো দেয়া সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ভ‚ইয়া বলেন, জেলেদের মধ্যে নানাবিধ আশঙ্কা কাজ করছে বলে আমি শুনেছি। যার কারণে অন্যান্য বছরের তুলনা এবছর প্রথম দিনে সকাল থেকে ঘাটে মাছ অবতরণ কম হচ্ছে। এবছর পানির পরিমাণ যেহেতু অনেক বেশি। আমরা আশা করছি আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে, সেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হবে।