শংকর হোড় ॥
আবারো প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে উঠেছে কাপ্তাই হ্রদ। জাল ও জেলের মিতালি শুরু হয়েছে ফের ১৩২দিন পর। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি এবং অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকে। এবছর হ্রদে পানি কম থাকায় ৯০দিনের স্থলে ১৩২দিন হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি রাখে জেলা প্রশাসন। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে আবারো ফিরে এসেছে কাপ্তাই হ্রদের সেই চিরচেনা রূপ। মধ্যরাত হতেই জেলেরা হ্রদে জাল ফেলা শুরু করে। ভোর থেকে ব্যবসায়ীরা বোট নিয়ে হ্রদের ঘাটে ঘাটে গিয়ে মাছ সংগ্রহ করে। এরপর শহরের বিএফডিসির অবতরণ ঘাটে এসে ভিড়তে থাকে মাছবাহী একের পর এক তরী। মাছ বোট থেকে নামিয়ে সরকারি রাজস্ব মিটিয়ে ড্রামে বরফ দিয়ে প্যাকিং শেষে ট্রাকে তুলে দেওয়া হয়, যেগুলো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। বরাবরের মতোই প্রথম দিনের মাছের আকার নিয়ে হতাশ ব্যবসায়ীরা।
বিএফডিসি সূত্র মতে, প্রথম দিনে রাঙামাটির প্রধান অবতরণ ঘাট শহরের ফিসারি ঘাটে ৬০ মে. টন মাছ অবতরণ হয়েছে। যা থেকে রাজস্ব আদায় হয় প্রায় ১২ লাখ টাকার কিছু বেশি। রাঙামাটির চারটি অবতরণ ঘাটের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় হয়। সবমিলিয়ে এবছর প্রথম দিন গতবছরের অর্ধেক অবতরণ হয়েছে। গত বছর প্রথমদিনে মাছের আহরণ হয়েছিল ১৬০ মে.টন। যা থেকে রাজস্ব আয় হয়েছিল প্রায় ৩২ লাখ টাকা।
বিএফডিসি সূত্র ও ব্যবসায়ীরা জানান, এবার মাছ কম অবতরণের হওয়ার পেছনের মূল কারণ হচ্ছে মাছ অবতরণে সময় বেঁধে দেওয়া। অন্যান্য বছর ২৪ ঘণ্টায় মাছ অবতরণের সুযোগ থাকলেও এবার অন্তত মাছ আহরণের শুরুর পর থেকে ১৫ দিন এক বেলা মাছ অবতরণের সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ বেলা ১২টা পর্যন্ত মাছ বিএফডিসি ঘাটে অবতরণের সুযোগ রয়েছে। অন্যান্য বছর প্রথমদিকে একসাথে বেশি মাছ আহরণের ফলে সব মাছ বিক্রি করা যেতো না। অবতরণ ঘাটেই মাছ পঁচে যেত। এত পরিমাণ মাছের জন্য বরফও থাকতো না। এছাড়া এভাবে মাছ সংগ্রহের কারণে মাস দুয়েক পর থেকে হ্রদে খুব একটা মাছ পাওয়া যেত না। এতে ব্যবসায়ী ও বিএফডিসি উভয় পক্ষেরই ক্ষতি। তাই এই সমস্যা নিরসনে এবার একবেলা মাছ আহরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে পুরো মৌসুম জুড়েই মাছ পাওয়া যাবে এমনটাই আশাবাদ ব্যবসায়ী ও বিএফডিসির।
রাঙামাটি জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়–য়া বলেন, অন্যান্য বছর প্রথমদিন একসাথে বেশি মাছ আহরণের ফলে আমাদের প্রচুর ভোগান্তি হতো। মাছ আহরণ করলে জেলেকে তার প্রাপ্য দিতে হয়। এরপর সরকারি রাজস্ব মিটিয়ে যখন বাজারজাত করতে যায়,তখনই আমাদের ভোগান্তি বেড়ে যায়। কারণ এসময় বরফ ও ট্রাক পাওয়া যেত না। আমাদের একদিনের বাজারজাতের সর্বোচ্চ সক্ষমতা ৭০-৮০ টন। এই পরিমাণ মাছের জন্য বরফ ও ট্রাক স্বাভাবিক থাকলেও এর দ্বিগুণ আহরণ হলে সেগুলো আমরা আর বাজারজাত করতে পারতাম না, আবার বরফের অভাবে সংরক্ষণও করতে পারতাম না। তাই অনেক ব্যবসায়ী প্রচুর লোকসান দিতো। এই লোকসান যাতে না হয় এবং মৎস্যসম্পদ যাতে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়, সেজন্য আমরা এবার একবেলা মাছ অবতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেটা ১৫দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে, যদি মাছের আহরণ কমে আসে, তখন আমরা এই সিদ্ধান্ত তুলে নিবো। এদিকে প্রথমদিনে মাছের সাইজ নিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতাও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বৃষ্টি একেবারে শেষদিকে হওয়ার কারণে মাছ বৃদ্ধির জন্য খুব বেশি সময় পায়নি, তারপরও এবার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কারণে মৌসুমজুড়ে হ্রদে মাছ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী এই ব্যবসায়ী নেতা।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ভূইয়া বলেন,
গতবারের তুলনায় এবার কম মাছ অবতরণ হলেও ব্যবসায়ীরা এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। তারা জানিয়েছে, এর ফলে মাছ পুরো হ্রদে ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে পুরো মৌসুমজুড়ে হ্রদে মাছ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। এছাড়া ঘাটে একবেলা মাছ অবতরণ করা হচ্ছে।