সাইফুল হাসান ॥
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসুক-সাংগ্রাই-বিজু-বিহু উপলক্ষে পাঁচ দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসব শুরু হয়েছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে। সোমবার বিকেলে বৈসাবি উপলক্ষে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে বর্ণিল সাজে বের করা হয় শোভাযাত্রা।
শোভাযাত্রায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা নিজ নিজ জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরে অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রাটি রাঙামাটি সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউট মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়।
পরে সেখানে ফিতা কেটে পাঁচ দিনব্যাপি আয়োজিত মেলার উদ্বোধন করেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি। এরপর উপস্থিত অতিথিরা বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মেলার আনুষ্ঠানিকতা উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের পর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ পাহাড়ি নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
আলোচনা সভায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটি রিজিয়নের কমান্ডার ব্রি.জে. ইমতাজ উদ্দীন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. মুছা মাতব্বর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের সদস্য রেমলিয়ানা পাংখোয়া, এছাড়া আলোচনা সভায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাঙামাটির সাংসদ ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের অন্য ৬১টি জেলার থেকে ভিন্ন, এখানে নানান জাতি গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মানুষ একসাথে মিলেমিশে বসবাস করে। বৈসাবি পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের প্রধান সামাজিক উৎসব। এদিনে আমরা পুরানো দিনের সকল দুঃখ কষ্ট ভুলে বড়দের আশীর্বাদ নিয়ে নতুন বছর নতুন করে শুরু করি। তাই এদিন গুলো হয় আমাদের সকলের মিলন মেলা।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য জেলা রাঙামাটি এখন আর পিছিয়ে পড়া জনপদ নয়। শিক্ষা-দীক্ষায় ও অবকাঠামো দিকে আমরা এখন অনেক এগিয়ে গিয়েছি। বর্তমান সরকার এ পার্বত্য অঞ্চলের প্রতি খুবই আন্তরিক।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই বৈসাবি উৎসব। মেলায় বিভিন্ন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পোষাকসহ পাহাড়ের নারীদের হাতে ও তাঁতে বোনা কাপড়, ব্যাগ সহ নানান হস্তশিল্পের স্টল বসানো হয়েছে। মেলায় ৮০টি স্টল বসানো হয়।
এছাড়া পাঁচ দিনব্যাপী মেলায় ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলাধুলা, শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পিঠা উৎসব, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র সঙ্গীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মঞ্চ নাটক অনুষ্ঠিত হবে। পাঁচ দিনব্যাপি এ মেলা আগামী ৭ এপ্রিল শেষ হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।