ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই ॥
প্রায় ১ শত ফুট উপর হতে ঝর্ণার পানি আঁচড়ে পড়ছে। আধা কি: মি: দূরে যেই ঝর্ণার পানির প্রবাহমান ধারার শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। এই যেন ঝর্ণার আওয়াজ না, স্বর্গের কোন অপ্সরী তাঁর নুপুরের রিনিঝিনি শব্দে অপূর্ব নৃত্যগীত পরিবেশন করছেন। বলছিলাম ওয়াগ্গা দেবতাছড়ি রি তাং ঝর্ণার কথা। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ডের দেবতাছড়ি দক্ষিণ পাড়ায় এই ঝর্ণা অবস্থিত।
অনিন্দ্য সুন্দর এই ঝর্ণা বিশেষ করে বর্ষাকালে নবরুপে প্রাণ ফিরে পাই। ঝিরিঝিরি শব্দে উপর হতে পানি পড়ছে অবিরাম ধারায়। যে কেউ এই ঝর্ণার সৌন্দর্য অবলোকন করে কল্পলোপে হারিয়ে যেতে পারবেন। ঝর্নার আশেপাশে সবুজ বন বনানী এবং পাখির কলতান মনকে প্রফুল্ল করে তুলবে। ঝর্নার পাশে খাড়া পাহাড় এবং ঝর্ণা হতে নি:সরিত পানির জলধারা নেমে মিছে গেছে দেবতাছড়ি ছড়ায়।
মারমা ভাষায় রি শব্দের অর্থ হলো পানি এবং তাং শব্দের অর্থ হলো তোলা বা উঠানো । অনেক বছর আগে এই ঝর্ণার পাশে একটা মারমা পাড়া ছিল। এই মারমা জনগোষ্ঠীরা এই ঝর্ণা হতে পানি তুলতে বলে ঝর্ণার নামকরণ রি তাং করেছে বলে জানান স্থানীয় কারবারি রাজ চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি আরোও বলেন, এখন এই ঝর্ণার পাশে মারমা সম্প্রদায়ের বসবাস নাই, প্রায় ৬০ বছর আগে তাঁরা অন্যত্র গিয়ে বসতি স্থাপন করেছেন। বর্তমানে এই ঝর্নার পাশে দক্ষিণ দেবতাছড়ি এলাকায় শতাধিক তঞ্চঙ্গ্যা পরিবারের বসবাস।
২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মদন মোহন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমার ওয়ার্ডের এই ঝর্ণা দেখতে খুব সুন্দর। এইখানে বর্ষাকালে প্রচুর পর্যটক আসে, তবে ঝর্ণার আসার পথটুকু যদি সংস্কার করা হয় তাহলে আরোও পর্যটক আসবে।
১০০নং ওয়াগ্গা মৌজার হেডম্যান অরুণ তালুকদার এবং ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিরনজীত তনচংগ্যা বলেন, ওয়াগ্গা মৌজার মধ্যে এটি একটি বিখ্যাত ঝর্ণা। এই ঝর্ণার আসার পথগুলো প্রশাসনের পক্ষ হতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলে অনেক পর্যটক আসবে এখানে।
গত শনিবার ঝর্ণা দেখতে আসা পর্যটকরা বলেন, প্রকৃতি দেবী অপরূপ সৌন্দর্য সাজিয়ে রেখেছে এই ঝর্ণায়। আমরা বিমোহিত হয়েছি এই ঝর্ণার সৌন্দর্য দেখে। আমাদের মন, হৃদয়কে উজাড় করে দিয়েছে এই ঝর্ণার রুপ।
শনিবার এই ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ এবং কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কারবারি এবং এলাকাবাসীর সাথে মতবিনিময় করতে দক্ষিণ দেবতাছড়ি রি তাং ঝর্ণায় যান কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মহিউদ্দিন।
এসময় তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের একটি নির্দেশনা আছে কমিউনিটি বেইজড পর্যটনকে ত্বরান্বিত করা। তাই আজকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান এবং কারবারিদের নিয়ে আমি এই ঝর্ণা দেখতে এসেছি এবং এর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি। যারা প্রকৃতি পছন্দ করেন এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় তাঁরা এই ঝর্ণায় এসে নিরাশ হবেন না। আমা আশা করছি পর্যটন শিল্পের বিকাশে এই ঝর্ণা সমগ্র বাংলাদেশের পর্যটন প্রিয় মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠবে।
রাঙামাটি-ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সড়কের দেবতাছড়ি স্টেশনে নেমে সড়কের পূর্ব পাশ ধরে প্রায় দেড় কি: মি: পায়ে হেঁটে এই ঝর্ণায় পৌঁছানো যায়। অথবা মূল সড়ক হতে ১ কি.মি. পথ সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা অন্যবাহন দিয়ে দক্ষিণ দেবতাছড়ি পাড়ায় গিয়ে আধা কি.মি.পথ হেঁটেও এই ঝর্ণায় পৌঁছানো যায়। পথেমধ্যে মহাজন পাড়া, দেবতাছড়ি দক্ষিণ পাড়ার অপুর্ব সৌন্দর্য, স্থানীয় বৌদ্ধ বিহার, সবুজ ক্ষেত, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবনধারা এবং দেবতাছড়ি ছড়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।