নুরুল করিম আরমান, লামা ॥
বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি বাগানে পরপর দুই রাত তান্ডব চালিয়ে শতাধিক ফলন্ত আম, লিচু ও কাঁঠাল গাছ উপড়ে ফল খেয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে বন্যহাতির দল। এ সময় হাতির দল ওই বাগানের সীমানা প্রাচীরও ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়। এতে বাগান মালিকের প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয় বলে দাবী করা হয়। উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারী বাজার সংলগ্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট খান সাহেবের বাগানে গত দুই রাতে হাতির দলটি তান্ডব চালিয়ে এ ক্ষতিসাধন করে। শুধু তাই নয়, গত ৭ মে দিনগত রাতে বাগানের ফল ও জমির ধান রক্ষা করতে গিয়ে হাতির কবলে পড়ে প্রাণ হারান আক্তার হোসেন (৩৮) নামের এক কৃষক। এ অবস্থায় হাতি আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কুমারী এলাকার ১৫-১৬ পাড়ার হাজার হাজার মানুষ। বন্যহাতির তান্ডব থেকে রক্ষা পেতে বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য স্থাপনের দাবী লামা উপজেলাবাসীর।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, অপরিকল্পিত বৃক্ষ নিধন ও জনবসতি গড়ে উঠার কারণে পাহাড়ে বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এতে খাবারের সন্ধানে বেপরোয়া হয়ে উঠে পাহাড়ের বন্য হাতিগুলো। পাহাড়ি হিং¯্র বন্যহাতির দল উপজেলার পাশর্^বর্তী সংরক্ষিত ফাঁসিয়াখালীর বনে আস্তানা গেড়েছে। সন্ধ্যা হলেই সংরক্ষিত বন থেকে হাতির দল কুমারীর লোকালয়ে নেমে এসে খেয়ে-পদপিষ্ট করে সাবাড় করছে ক্ষেতের ধান, নষ্ট করছে শাক-সবজি ও গাছের আম-কাঁঠাল। প্রতিহত করতে গিয়ে হাতির কবলে পড়ে জীবন দিতে হচ্ছে অনেককে। হাতির দল গত দু’রাতে কুমারী বাজার পাড়ার এডভোকেট খান সাহেবের বাগানের ১০ বছর বয়সী শতাধিক ফলন্ত আম, লিচু ও কাঁঠাল গাছ উপড়ে ফল খেয়ে ফেলে। এর পাশাপাশি হাতিগুলো বাগানের ৩০০ ফুটের মত সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়। এতে প্রায় ১০ লাাখ টাকার ক্ষতি হয় বলে জানান বাগান মালিক এডভোকেট খান সাহেব। তিনি বলেন, পরিবেশের উন্নয়ন ও মানুষের অক্সিজেনের জন্য আমরা দূর দূরান্ত থেকে পার্বত্য এলাকায় এসে বহু অর্থ ও কায়িক পরিশ্রমে ফলদ, বনজ ও ঔষধী গাছের বাগান সৃজন করছি, এতে স্থানীয় অনেক বেকারদের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু পাশের কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার রিজার্ভ এলাকা থেকে কিছু বেপরোয়া বন্যহাতি প্রতিনিয়ত উপজেলার কুমারী এলাকায় প্রবেশ করে ফলের বাগান ও ফসলের ক্ষতি করে চলেছে। তিনি আরও বলেন, দেশ ও দেশের পরিবেশের উন্নয়নে বনায়ন করার পাাশাপাশ হাতিও সংরক্ষণ করতে হবে। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ। তাই আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও বন্যপ্রাণীর রক্ষায় আমরা এক পায়ে খাঁড়া। উপজেলায় একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য স্থাপন করে হাতিগুলো সেখানে সরানো হলে জান মালের ক্ষতি থেকে এলাকাবাসী রক্ষা পাবে বলেও জানান তিনি। শুধু খান সাহেবের বাগান নয়, পাশের সলিমুল্লাহ কিসলু ও সিদ্দিক আহমদ সহ বেশ কয়েকটি বাগানে তান্ডব চালিয়ে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে বন্যহাতির দলটি।
স্থানীয় চৌকিদার আলী আকবর জানায়, নিজের জমির পাকা ধান কেটে শুকাতে দিয়েছিলেন আকতার। গত ৭ মে দিনগত রাতে উঠানে বন্য হাতির উপস্থিতি টের পেয়ে ঘর থেকে লাইট নিয়ে বের হলে হাতির দল তাকে আক্রমণ করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবু ওমর জানান, গত দেড় মাস ধরে ৭-৮টির একটি বন্যহাতির দল সন্ধ্যা হলেই নেমে আসে কুমারী এলাকার লোকালয়ে। স্থানীয়রা না পারছে তাদের ফসল ও গাছের ফল রক্ষা করতে, না পারছে ঘরবাড়ি রক্ষা করতে। বর্তমানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মশাল জ্বালিয়ে জানমাল রক্ষার চেষ্টা করছে কিন্তু বন্য হাতির আক্রমণের কারণে সামনে দাঁড়াতে পারছে না তারা। ফসল রক্ষা করতে গিয়ে হাতির কবলে পড়ে মারাও পরছে মানুষ। তিনি বলেন, বন্যহাতি তাড়াতে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে একটি ইআরটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ সহ টর্চ লাইট, বাঁশি ও পোষাক দেওয়া হয়। কোন মানুষ, বাড়ি বা ফলদ বাগান ও ফসলি জমিতে আক্রমণ চালালে এ কমিটির লোকজন হাতিগুলো গহীন অরণ্যে তাড়াতে কাজ করে। বর্তমানে বন বিভাগের পক্ষ থেকে কোন সুযোগ সুবিধা পাওয়ায় ঝিমিয়ে পড়ছে কমিটির সদস্যরা।
এদিকে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক বেলাল বলেন, গহীন পাহাড়ে খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বন্যহাতি। তবে বন্যহাতির দল কোন মানুষ বা কারো জমির ফসল ও বাগানের ক্ষতি করে থাকলে বিধি মোতাবেক বন বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতি পূরণ দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, উপজেলায় বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য স্থাপনের কাজ চলছে। এটি বাস্তবায়নের পর হাতিগুলো অভয়ারণ্যে সরিয়ে নেওয়া হলে উপজেলার মানুষ আর ক্ষতির শিকার হবে না।