হেফাজত সবুজ
দ্বিতীয় দফায় বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাচন স্থগিত হওয়ার একে অপরকে দোষারোপ করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী সুদর্শন ও অলিভ। শনিবার বিকালে নির্বাচন স্থগিত নিয়ে দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম এর সাথে নানান কথা তুলে ধরেন দুই প্রার্থী। যা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
সুদর্শন চাকমা বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। রাজনৈতিকভাবে তিনি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগোাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) প্রভাবশালী নেতা। ২০১৯ সালে তিনি সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির নেতা বড় ঋষি চাকমাকে পরাজিত করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
দ্বিতীয় দফায় বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত প্রসঙ্গে সুদর্শন চাকমা বলেন, এটি নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তার ব্যর্থতা। বাঘাইছড়িতে এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে আইন শৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে নির্বাচন স্থগিত করতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা একটা নজির দেখাতে পারবেন যার কারণে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। কমিশনের ব্যর্থতার কারণে আমাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বার বার নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় আমাদের সমর্থকদের মনোবল নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি আর্থিকভাবেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অন্য দিকে ক্ষুব্ধ জনতা নির্বাচন অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। অথচ নির্বাচন অফিসাররা বিক্ষোভকারীদের আমার সমর্থক বলে দাবি করছে বলে শুনেছি। তাঁরা আমার সমর্থক এটা কিভাবে নিশ্চিত হলেন নির্বাচন অফিসার, সেখানে কি ঘোড়া প্রতীক নিয়ে মিছিল করেছে? আমি এই অবান্তর ধারণার তীব্র পতিবাদ জানাচ্ছি। প্রশাসন চাইলেই নির্বাচন করা সম্ভব ছিল।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী নির্বাচনকে প্রভাবিত পেশি শক্তি ব্যবহার করছেন। উপজেলার দুূর্গম কেন্দ্রগুলোতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী এনে জড়ো করেছেন। আমার এজেন্ট ও সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। কেন্দ্র দখল ও ভোট ডাকাতির ফন্দি আটছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার প্রতিদ্ব›দ্বী নাকি আয়ামীলীগের নেতা। সরকারের সাথে জেএসএস ও ইউপিডিএফের বাঘে-মহিষে সম্পর্ক। অথচ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে অবরোধেরর ডাক দিলো ইউপিডিএফ। এতে কি প্রমাণ হয়? সেটা বুঝার জন্য খুব বড় রাষ্ট্র বিজ্ঞানী হবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। পাহাড়ের একজন বাচ্চাও এটা বুঝতে পারে।
আরেক প্রতিদ্ব›দ্বী বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান অলিভ চাকমা। রাজনৈতিকভাবে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সহ সভাপতি ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
নির্বাচন স্থগিত প্রসঙ্গে অলিভ চাকমা বলেন, প্রথম দফায় নির্বাচন স্থগিত হওয়ার সম্পূর্ণ দায় নির্বাচন কমিশনের। একটা ঝড় আসছে সেটা সাতদিন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। তাহলে কেন তারা আরো আগেই হেলিসটিং কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সামগ্রী পাঠালেন না। তাহলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। তবে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন পেছানোর যথেষ্ট কারণ আছে। বর্তমানে বাঘাইছড়িতে নির্বাচনের কোনও পরিবেশ নেই। আমার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর ক্যাডাররা আমার এজেন্ট ও সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছে। তারা কেউ ঘরে থাকতে পারছে না। সম্প্রতি ইউপিডিএফ(গণতান্ত্রিক) ও এমএন লারমা গ্রæপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বাঘাইছড়িতে অবস্থান করছে। শুক্রবার এই অস্ত্রধারীরা বাঘাইহাট, সাজেকসহ বেশ কিছু স্থানে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার প্রতিবাদে একটি সংগঠন শনিবার আবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। তাছাড়া এমএন লারমা গ্রæপ তাদের সব ক্যাডার বাহিনীকে বাঘাইছড়ি নিয়ে এসেছে। এতেই বোঝা যায় তার ভোট ডাকাতি ও কেন্দ্র দখল করতেই এসব করেছে।
জেএসএস ও ইউপিডিএফের সমর্থনের বিষয়ে এই প্রার্থী বলেন, আমি আওয়ামীলীগের রাজনীতি করি। উপজেলা ও জেলার দুইটি পদে আছি। অনেকেই আমাকে সমর্থন দিয়েছে। এমনকি এমএন লারমা গ্রæপের অনেকেই আমার সাথে আছেন। তবে জেএসএস ও ইউপিডিএফের সাথে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আমার কোন আলোচনা হয়নি। মোট কথা বাঘাইছড়ি উপজেলার সুদর্শন বিরোধী সকলেই আমার সাথে আছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, জনসংহতি সমিতি(এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ(গণতান্ত্রিক) এর আনন্দ চাকমা ও অসীম চাকমার নেতৃত্বে বিশাল একটি সশস্ত্র গ্রæপ, সাজেক, খেদারমারা, বঙ্গলতলীসহ বেশ কয়েটি ইউনিয়নে নিয়মিত অস্ত্রের মহড়া দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও শনিবার দুপুরে ইকবালের নেতৃত্বে একটি দল আমার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে স্লোগান দিয়ে বলেছে-অলিভের চামড়া তুলে নিবো আমরা। পরিস্থিতি যখন এমন তখন আপরাই বলুন কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমি চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুক।