বিশেষ প্রতিবেদক, বান্দরবান ॥
বান্দরবানে বাজারফান্ডের তৌজিভুক্ত ভূমির বন্দোবন্তি-লীজ ১০ বৎসরের পরিবর্তে মেয়াদ ৯৯ বৎসরে উন্নতিকরণ এবং গৃহনির্মাণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য ব্যাংক ঋণ পাওয়ার প্রতিবন্ধকতা দুরীকরণসহ ছয়দফা দাবিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন বাজার ফান্ডের ভুক্তভোগী জনসাধারণ। বৃহস্পতিবার সকালে বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হকের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
দাবিগুলো হলো, বাজার ফান্ডের তৌজিভুক্ত সমস্ত ভূমির বন্দোবস্তি/লিজ ১০ বছরের পরিবর্তে ৯৯ বছরের জন্য মেয়াদ নির্ধারণ করা, বাজার ফান্ডের আওতাধীন তৌজিভুক্ত সকল ভূমিতে ব্যাংক ঋণ পাওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, বাজার ফান্ডের তৌজিভুক্ত ভূমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের সদয় অনুমতি প্রদান, বাজার ফান্ডের তৌজিভুক্ত ভূমি ক্রয়-বিক্রয়/হস্তান্তর প্রক্রিয়া সহজলভ্যকরণ, বাজার ফান্ডের তৌজিভুক্ত ভূমির কর/খাজনা যৌক্তিক পর্যায়ে সহনীয় করণ এবং বাজার ফান্ড এলাকাকে সম্প্রসারণের জন্য উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা।
স্থানীয় ভূক্তভোগী বাসিন্দা ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মুজিবুর রশীদ বলেন, গত ১৬ বছর বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিবাদী সরকারের অন্যায়, অবিচার এবং বৈষম্যের শিকার হয়েছে। গত জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হওয়ার পর বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। সর্বত্র বৈষম্য দূরীকরণের প্রচেষ্টা থাকলেও বান্দরবানে জেলা পরিষদের আওতাধীন বাজার ফান্ডের বৈষম্য এখনো দূর হয়নি। বৈষম্য দূর করতে বাজারফান্ডের লিজভূক্ত জমির মেয়াদ ৯৯ বৎসরে উন্নতিকরণ এবং গৃহনির্মাণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য ব্যাংক ঋণ পাওয়ার প্রতিবন্ধকতা দুরীকরণের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, তিন পার্বত্য জেলার স্থানীয় জনগণের জীবন মান উন্নয়নের জন্য ১৯৩৭ইং সালে বাজার ফান্ড প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৯ইং সাল পর্যন্ত বাজার ফান্ডের আওতাধীন সকল তৌজিভুক্ত ভূমির বিপরীতে তফশিলি ব্যাংক সমূহ যথানিয়মে গৃহ ঋণসহ যাবতীয় ঋণ কার্যক্রম চলমান ছিল। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের অলিখিত দ্বন্দ্বে বর্তমানে অকার্যকর হয়ে পড়েছে বাজার ফান্ড সংস্থার সকল প্রকারের কর্মকান্ড। এই সংস্থার অধীনে থাকা ভূমি বন্দোবস্তি-লিজের মেয়াদ ১০ বছর হওয়ায় এবং ব্যাংক ঋণ বন্ধ থাকার কারণে থমকে গেছে জেরার অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা। বন্দোবস্তি কার্যক্রম ও গৃহক্ষণ বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ বান্দরবান জেলার বাজার ফান্ডের মালিকানাধীন ভূমির হাজার হাজার বাসিন্দা। বান্দরবানে বাজার ফান্ডের তৌজিভুক্ত জায়গায় গৃহ ঋণ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণের ক্ষেত্রে বাজার ফান্ড প্রশাসকের অনুমতি সাপেক্ষে দীর্ঘদিন যাবত গ্রাহকরা ব্যাংক লোন পেয়ে আসছেন। পার্বত্য চুক্তির পরও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিলো। কিন্তু ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে অলিখিতভাবে বাজার ফান্ডের জায়গায় ব্যাংক ঋণ প্রদান বন্ধ করে দেন স্বৈরাচারী সরকার। পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন, জেলা পরিষদ আইন, বাজার ফান্ড আইন এবং আইনগুলো সংশোধন বা বাতিল না হওয়ার বিভিন্ন সময় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় একেক সময়ে বিভিন্ন আইনের ভিন্নতা প্রয়োগ করেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। আইনী মারপ্যাচে বন্ধ রয়েছে বাজার ফান্ডের আওতাধীন তৌজিবুক্ত ভূমির ঋণ ব্যবস্থা। আর এতে ক্ষতিগ্রস্থ ও হয়রানির শিকার হচ্ছে বাজার ফান্ডের ভূমিতে বসবাসকারী সাধারণ ব্যবসায়ী ও জনগণ। বাজার ফান্ডের এই জটিলতায় সোনালি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক সহ ১৭ টি ব্যাংক নতুন করে কোন প্রকার ঋণ যেমন দিচ্ছে না, তেমনি পুরাতন ঋণ নবায়নের কার্যক্রমও স্থগিত রয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছে অনেক ব্যবসায়ী, কর্মচারী ব্যাংক গুলোর পক্ষ থেকে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করাও সম্বব হ্যাম না। বাজার ফান্ড প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের মত বিরোধের কারণে ব্যাংক ঋণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হওয়াতে প্রভাব পড়ছে বান্দরবান জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়নে। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ব্যবসা-বানিজ্যের গতি কমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান নিম্ন থেকে নিম্নগামী হচ্ছে যা দেখার যেন কেউ নেই।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধির ১৫০ বছর যাবৎ জমি বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার ধারাবাহিকতা চলে আসলেও হঠাৎ করে ঠুনকো অজুহাতে ঋণ কার্যক্রম বন্ধ রাখাটা যেমন অযৌক্তিক, তেমনি অমানবিক এবং এটি এক প্রকার মানবাধিকার লংঘন। পিছিয়ে পড়া বান্দরবান পার্বত্য জেলার জনগণ এই ধরণের বৈষম্যের শিকার হওয়তে সরকারের এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রাকে বাধ্যগ্রস্ত করার সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্রও বটে এ বাজার ফান্ডের জটিলতা।

