অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি লিচুবাগানে গেলেই চোখে পড়বে গাছে গাছে ঝুলছে রসালো লিচু। মিষ্টি ও রসালো স্বাদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিভিন্ন জাতের লিচুর সমাহার রয়েছে বাগানগুলোতে। তবে লিচুর জাতের মধ্যে বোম্বাই, কালিপুরী, চায়না-থ্রি এবং দেশী লিচুর সমারোহে ছেয়ে গেছে বাগান গুলোর গাছের ডালপালা।
সম্প্রতি কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের সাফছড়ি, আগুনিয়াছড়া, বটতল, পাগলী পাড়া এবং ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়নের কাপ্তাই-আসামবস্তি সড়কের বেশ কিছু এলাকায় অবস্থিত লিচুবাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে উঁকি দিচ্ছে রসালো লিচু। বেশীর ভাগ গাছেই লিচু মোটামুটি পরিপক্ক হয়েছে। তবে এখনো কিছু কিছু গাছের লিচু কাঁচা রয়ে গেছে। চাষীরা আশা করছেন অল্প সময়ে সেই লিচুগুলো পরিপক্ক হয়ে লাল রং ধারণ করবে। তবে এবছর বৃষ্টিপাত কম হওয়াতে কিছু কিছু লিচুবাগানে অন্যান্য বারের তুলনায় ফলন কম হয়েছে। বিশেষ করে পানির অভাবে লিচু গাছের পরিচর্যা করতে কষ্ট হয়েছে চাষীদের।
এবিষয়ে কথা হয় কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা ইউনিয়নের কারবারী এবং লিচু বাগানের মালিক রনজিৎ তঞ্চঙ্গ্যার সাথে। তিনি জানান, প্রতিবছরই পাহাড়ে ভালো লিচুর ফলন হয়। এবছরও ভালো হয়েছে কিন্তু দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টি এবং পানির অভাবে বেশ কিছু লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। যদি সঠিক সময়ে বৃষ্টি হতো লিচুর ফলন আরো ভালো হতো।
দীর্ঘ বছর লিচু সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের চাষ করে আসছেন কাপ্তাইয়ের আরেক লিচু চাষী ঈশ্বরচন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা। তিনিও জানান, লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে পানির অভাবে সঠিক সময়ে লিচুর পরিচর্যা করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া বর্তমানে নিজ বাগানে লিচুর যা ফলন হয়েছে এতেই তিনি লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
অন্যদিকে আরেক লিচু চাষী সুমন তঞ্চঙ্গ্যা জানান, কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন পাহাড়ে উৎপাদিত এই লিচু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রয় হয়ে থাকে। বিশেষ করে পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে লিচু সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এসব লিচু চট্টগ্রাম, ঢাকা, কুমিল্লায় পর্যন্ত বিক্রয় হয়ে থাকেন বলে তিনি জানান।
অপরদিকে, কথা হয় ওয়াগ্গা পাগলীমুখ পাড়ার আরেক সফল লিচুচাষী তপন তঞ্চঙ্গ্যার সাথে। তিনিও জানান, লিচুর ভালো ফলন হলেও পানির সমস্যায় ভুগছেন তারা। বিশেষ করে পাহাড়ের উচুঁতে গড়ে ওঠা বাগান গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি দিতে পারলে ফলন আরো ভালো পাওয়া যেতো।। এছাড়া তিনি বলেন, পাহাড়ের কৃষকদের যদি সরকার কতৃক উন্নত মানের কিছু কৃষি সরঞ্জাম দেওয়া হয় তবে অনেক উপকার হবে তাঁদের।
এবিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ জানান, কাপ্তাই উপজেলায় এ বছর প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। এতে প্রায় ৪ হাজার ৫শত মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হবে বলে আমরা আশা করছি। এছাড়া পাহাড়ে উৎপাদিত লিচুর কদর দেশজুড়ে রয়েছে। এবছর কাপ্তাইয়েও লিচুর ফলন ভালো হয়েছে, তবে কিছু কিছু বাগানে বৃষ্টিপাত কম হওয়াতে এবং পানি শুকিয়ে যাওয়াতে ফলন কিছুটা কম এসেছে। তবুও এবছরও কাপ্তাইয়ের লিচু চাষীরা লাভবান হবেন বলে আমরা আশা করছি।