আলাউদ্দীন শাহরিয়ার, বান্দরবান
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সূয়ালক টোল পয়েন্ট ইজারার নামে সরকারি রাজস্বের অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। গতবছর ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সূয়ালক টোল পয়েন্ট ইজারা দেয়া হয়েছিল দুই কোটি ৩৮ লাখ টাকায়। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে সিন্ডিকেট একই টোল পয়েন্ট এবছর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গোপনে ইজারা দেয়া হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকায়। উন্মুক্ত দরপত্রে শক্তিশালী ইজারা সিন্ডিকেট অফিসের যোগসাজশে কৌশলে গতবছরের তুলনায় অর্ধেক দামে সূয়ালক টোল পয়েন্টের দরপত্র জমা দেন। নিয়ম রক্ষার্থে নির্ধারিত বাজারদর না পাওয়ায় তিন দফায় উন্মুক্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিবারই একই সিন্ডিকেট ইজারাদার গতবারের অর্ধেক দামে অংশ নেন সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আগের ইজারাদার মোহাম্মদ আলীর লোকজনই টোল আদায় করছেন। পার্বত্য জেলা পরিষদের কোনো কর্মচারী নেই সূয়ালক টোল পয়েন্টে। অথচ বলা হচ্ছে বাজারমূল্য অনুপাতে সঠিক দাম না পাওয়ায় সরকারিভাবে খাস কালেকশন করছেন পার্বত্য জেলা পরিষদ। এদিকে কৃষি পণ্যসহ মালামাল পরিবহন সরকার ঘোষিত দামের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ আদায় করা হচ্ছে। সরকারি নির্ধারিত টোলের তালিকার সাইনবোর্ডও লুকিয়ে রাখা হয়েছে। সাংবাদিকরা দেখতে চাওয়ায় তাড়াহুড়ো করে বাতাসে পড়ে গেছে অজুহাতে ঠিক করে দেয়া হয় সাইনবোর্ড।
অভিযোগ করে ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দীন, ওমর ফারুক’সহ অনেকে বলেন, কলার ছড়া প্রতি পিকআপ সরকারিভাবে দেড়শ টাকা লেখা থাকলেও নিচ্ছেন ৩শ টাকা। ফার্নিচারের গাড়ি সরকারিভাবে ছোট আটশ বড় ১৩শ লেখা থাকলেও ট্রাকপ্রতি ১৪শ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
সূয়ালক টোল পয়েন্টে আদায়কারী কর্মচারী এনামুল ইসলাম, নূরুল আলম বলেন, প্রতিদিন ৫শ টাকা বেতনে চাকরি করছি। টোল পয়েন্টের মূল ইজারাদার হলো মোহাম্মদ আলী। আমরা তারই কর্মচারী। দীর্ঘদিন ধরে টোল আদায়ের কাজ করায় খাস কালেকশনের দায়িত্বেও আমাদের রাখা হয়েছে। কিন্তু সূয়ালক টোল পয়েন্টটি দেখাশোনা করেন সাইফুল। তবে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগটি সত্য নয় বলে জানালেও কালেকশন খাতায় ঠিকই অতিরিক্ত টাকার পরিমাণ লেখা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইজারায় অংশগ্রহণকারী কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, শক্তিশালী একটি ইজারা সিন্ডিকেট টোল পয়েন্ট ইজারাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। সিন্ডিকেটের সাথে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা’সহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। নির্ধারিত বাজারদর না পাওয়ায় অফিস খাস কালেকশন করছে বললেও মূলত ৩০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে টোল পয়েন্টটি ইজারা সিন্ডিকেটের তত্বাবধানে দিয়ে দেয়া হয়েছে। দুই কোটি ৩৮ লাখের টোল পয়েন্ট সবমিলিয়ে ১ কোটি ৪২ লাখে অঘোষিত ভাবে ইজারা দেয়া হয়েছে। আগের ইজারাদার মোহাম্মদ আলীর লোকজনই টোল আদায় করছেন এবারও। খাস কালেকশনের টাকাও নিয়মিত জমা হচ্ছে না সরকারি ফান্ডে। অর্থগুলো ব্যবসায়ীদের দাদন লাগিয়ে ফায়দা লুটছে সিন্ডিকেটের মূলহোতা উচিংমং।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পার্বত্য জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা উচিং মং বলেন, কোনো ধরনের সিন্ডিকেটের সাথে আমি জড়িত নয়। আমার কাজ হলো অফিসিয়াল কাজকর্মগুলো গুছিয়ে ঠিকঠাক করে দেয়া, সিদ্ধান্ত গ্রহণের মালিক কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, খাস কালেকশনের অর্থ প্রতিদিন জমা করা হয়না ঠিক, দশ দিন পরপর সরকারি ফান্ডে জমা করা হয়। টোল পয়েন্টে পার্বত্য জেলা পরিষদের ২ জন কর্মচারীও থাকেন।
এ বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গতবারের অর্ধেক মূল্যে দরপত্র জমা পড়ায় সরকারিভাবে খাস কালেকশনে টোল আদায় করা হচ্ছে। কাউকেই ইজারা দেয়া হয়নি। পরিষদের কর্মচারীদের সাথে অভিজ্ঞ আগের কয়েকজন টোল আদায়কারী কর্মচারীকে রাখা হয়েছে বেতনভূক্ত। অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা’র সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।