জিয়াউল জিয়া ॥
চাকমা বর্ষবরণের বড় উৎসব ‘বিজু’। পাহাড়ি জনগোষ্ঠি চৈত্রের শেষ দিনে মূল বিজু পালন করে থাকে। এ বিজুর মূল উপাদান ‘পাঁজন’। পাহাড়ি বর্ষবরণের আবহমানকালের বহু ঐতিহ্যের অপরিহার্য অংশ হিসেবে চাকমা সংস্কৃতিতে টিকে আছে বিজু উৎসবের এই পাঁজন রান্না। রাঙ্গামাটির ঘরে ঘরে চলছে পাঁজন আপ্যায়ন।
কমপক্ষে ৩২ রকমের সবজি দিয়ে রান্না হয় ঐতিহ্যবাহী এ ‘পাঁজন’। এটি বিভিন্ন ধরণের সবজি দিয়ে রান্না করা হয়। যার মধ্যে থাকে কাঁঠাল, কলা, মুলা, মিষ্টি কুমড়া, বেতডগা, তারাসহ বিভিন্ন উপাদান। সাথে থাকে বিভিন্ন প্রকার শুটকি।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের ধারণা বছরের শেষ বা প্রথম দিনে এ পাঁজন খাবার খেলে বিভিন্ন প্রকারের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ঐতিহ্যবাহী এ খাবার পাহাড়ি-বাঙালির সবার কাছেই খুবই প্রিয়। পাঁজন দিয়েই দিন ভর চলে অতিথি আপ্যায়ন। তাই এই দিনে সবাই কম করে হরেও সাত বাড়িতে বেড়ায় পাহাড়ি ও বাঙালিরা।
উৎসবের তৃতীয় দিন আগামীকাল ১৪ এপ্রিল চাকমা, ত্রিপুরারা গোজ্জ্যাপোজ্জা পালন করলেও ঐদিন মারমা জনগোষ্ঠী উদযাপন করে ঐতিহ্যবাহী পানি খেলা উৎসব। আগামী ১৯ এপ্রিল রাঙামাটির স্টেডিয়ামে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই পানি খেলার মাধ্যমে শেষ হবে পাহাড়ের বর্ষবিদায় ও বরণ উৎসব।
দুকুল চাকমা বলেন, ১২ এপ্রিল ফুল ভাসিয়ে বর্ষ বিদায় দিয়ে থাকি আমরা। আর ১৩ এপ্রিল সকালে গোসল শেষে বাসার বয়স্কদের পায়ে ধরে প্রণাম করি। বাড়িতে বাড়িতে বিভিন্ন রান্না করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম পাঁজন তরকারি। যে যত পারে সব চেয়ে বেশি সবজি দিয়ে এই পাঁজন রান্না করা হয়। কমপক্ষে ৩২ রকমের সবজি থাকে এতে।
বিনিতা চাকমা বলেন আমরা বিশ্বাস করি, সাত বাড়ি ঘুরে নানা ধরনের সবজি মিলিয়ে তৈরি এই পাঁজন খেলে শারীরিকভাবে সুস্থ ও রোগ ব্যাধিমুক্ত থাকা যায়। তাই এটি এটি আমাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
বিজু উৎসবের দিনে পাহাড়িদের ঘরে ঘরে এই ঐতিহ্যবাহী পাঁজনসহ নানা ধরনের খাবার দিয়ে অতিথিদের অ্যাপায়ন করা হয়।
বাড়ি বাড়ি বেড়াতে থাকা শিক্ষক রিংকু দে বলেন, এই দিনে আমরা পাহাড়ি বন্ধু ও কলিগদের বাড়িতে বেড়াতে থাকি। যে বাড়িতেই যাই না কেন অবশ্যই পাঁজনটা খাওয়া হবেই।
আরেক শিক্ষক আয়েশা আক্তার বলেন, পার্বত্য এলাকায় উৎসবে আমরা সবাই সবার বাড়িতে সারাদিন ঘুরে বেড়াই। এই দিনে পাঁজন না খেলে চলেই না।