— শাওন ফরিদ
কিছুক্ষণ আগে প্রিয়জন সৈয়দ ইবনে রহমত ম্যাসেঞ্জারে একটা লিংক পাঠালো। লিংকটি পড়ে দেখলাম “বিয়াকথাং হেডম্যান মারা গেছেন”। বুকের ভেতর এক ধরনের ছিন ছিনে ব্যাথা অনুভূত হলো। মনটা হুহু করে কেঁদে উঠলো। বিয়াকথাং’দা আমার রক্ত সম্পর্কীয় কোন আত্মীয়স্বজন নয়। নেই-ছিলনা কোন জাত-ধর্মেের বন্ধন। তবে যা ছিল তা অনেক কিছুর উর্ধ্বে। আত্নার-ভালোবাসার এক অনন্য পরমাত্মীয়। তিনি বিশ্বাস করতেন “সব মানুষই সাদা কালো, ভিতরটা তার লাল, একি আল্লাহ-সৃষ্টিকর্তা ভিন্ন জাতি নাম”।
জন্ম-জাতি হিসাবে তিনি পাংখু/পাংখোয়া এবং ধর্মে খ্রিস্টান। সবচেয়ে বড় পরিচয়, বড় করে দেখতেন-ভাবতেন সবার আগে এবং উর্ধ্বে ‘মানু’/মানুষ। তাইতো সৈয়দ ইবনে রহমত তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন “গুরুসুটাং পাহাড়ের বিয়ারথাং হেডম্যান গুলশাখালীবাসীর সুপরিচিত মুখ। সব বয়সী মানুষের সাথে উনার মেলামেশা ছিল। অনেকের কাছেই ছিলেন প্রিয় মুখ।”
বিয়াকথাং’দার সাথে পরিচয়-সম্পর্ক দেড় যুগ আগে। তখন আমাদের বাসার দ্বিতীয় তলায় ১৭/১৮ জন পাংখোয়া ছাত্রছাত্রী থাকতো। তারা রাঙ্গামাটির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করতো। তাদের খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মিটিংয়ে যোগ দিতে মাসে মাসে আসতেন। কয়কদিন থেকে আবার চলে যেতেন। তখন আমি পাংখোয়াদের উপর গবেষণার জন্য বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের কাজ করছিলাম। কাজের সুবাদে প্রায় কথা হতো। পাংখোয়া জীবনধারা সম্পর্কে তাঁর থেকে অনেককিছু জেনেছি। মিষ্টি ভাষী সদালাপী বিয়াকথাংদা সেই সময় এবং পরবর্তীতে অনেকবার বলেছেন তাঁর কাকপুজ্জ্যা মৌজায় বেড়াতে যেতে। বলেছেন গেলে আমাকে গুরুসুটাং মোনে নিয়ে যাবে। এইতো গত ডিসেম্বরের”২২ এর বড়দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বার বার কল করে অনুরোধ করেছিলেন। বলেছিলেন রাঙ্গামাটি, লংগদুসহ আরে কয়েক জায়গা থেকে অনেক মেহমান যাবেন। তারা প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করার জন্য অনেকে তাঁবু খাটিয়ে রাত্রিযাপন করবেন। তাঁর এতো অনুরোধ সত্বেও যাবো যাবো করে আর যাওয়া হলোনা।
আজ তাঁর মৃত্যু খবর শোনামাত্র রামথাংদাকে (রামথাং পাংখোয়া) কল দিলাম। তিনি নাকি একটু আগে খবরটি জেনেছেন এবং বিয়াকথাংদার বাড়ীতে যাবেন। কথা প্রসঙ্গে তিনিও একি কথা বলেছেন। গত বড়দিনে আমি যাবো নিশ্চিত ছিলেন। আমার জন্য কতো কি ব্যবস্থা করেছিলেন। না যাওয়াতে মনে খুব কষ্ট পেয়েছেন। আমি চাইলে আর কখনো পারবোনা তাঁর মনোকষ্ট দূর করতে। পারবোনা তাঁর হাসিমাখা মুখটি দেখতে। হায়রে জীবন! এভাবে তিনি চিরতরে না ফেরার দেশে চলে যাবেন জানলে এমনটা করতাম না। ভালো থেকো দাদা পরপারে। তোমার গ্রামে যাওয়া হলোনা, শেষ দেখা হলোনা, আর দেখা হলোনা গুরুসুটাং মোন। একমাত্র সৃষ্টিকর্তায় জানেন ওপারে দেখা হবে কি হবেনা। যদি দেখা হয় চিনে নিও আমায়, করিও ক্ষমা………
২১.০৬.২০২৩
বিকেল- ০৫.০০