পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের(পিসিএনপি) নেতৃবৃন্দ বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে সকল সম্প্রদায়ের জনসংখ্যার অনুপাতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বৈষম্যহীন নিয়োগের দাবি জানিয়েছে। শুক্রবার সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের বান্দরবান জেলা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান। এসময় তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলা নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম। শত বছর ধরে শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে এখানে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিদের বসবাস। এই যেন সম্প্রীতির এক নিবিড় মেলবন্ধন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাঝে ষড়যন্ত্রের বিষবাষ্প ছড়িয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার অপচেষ্টায় লিপ্ত একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল। অত্যন্ত দুঃখজনক এই যে, সব ধরনের যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্তে¡ও এখানে বসবাসরত ৫৪% বাঙালি সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি চাকুরী ও সুযোগ-সুবিধাদি পাচ্ছে না। এমনকি পার্বত্য জেলা পরিষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও চাকুরী থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী পাহাড়ি-বাঙালিদের জন্য দুই ধরনের নীতি চলমান রয়েছে। যেমন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৬৯৫। যার মধ্যে ৪৭৯ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও ২১৬ বাঙালি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। যার আনুপাতিক হার হিসেব করলে দেখা যায়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৬৮.৯২% ও বাঙালি ৩১.০৮%। শিক্ষা, চাকুরী, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উপজাতি জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা শিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে ও উপজাতি কোটার চাকুরী সুবাদে অনেক দূর এগিয়ে রয়েছে। পাহাড়ি ¤্রাে, খুমী, বম, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গা, চাক, পাংখোয়া ইত্যাদি ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র সম্প্রদায় বাঙালিদের ন্যায় বৈষম্যের শিকার। অপরদিকে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিরা সমতার ভিত্তিতে পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। যার প্রেক্ষিতে এখানকার বাঙালিা শিক্ষা, চাকুরী, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক ও নেতৃত্বের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে। এই চরম দুঃখ-দুর্দশা ও বৈষম্য পার্বত্য বাঙালিদের যেমনটা অস্তিত্বহীন করেছে তেমনই বিস্ময়করভাবে সংকটপূর্ণ করে মেরুদন্ডহীন করেছে। বর্তমানে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পার্বত্য বাঙালি ছেলেমেয়েরা বেকার অবস্থায় পড়ে আছে।
এহেন অবস্থায়, গত ১১/০৯/২০২৩ইং স্মারক নং: ২৯.৩৫.০৩০০.০০৩.১১.১৫৫.২৩-১৩০২ এর আলোকে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত সহকারী শিক্ষক ও অফিস সহায়ক শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। তারই আলোকে গত ২৭/১০/২০২৩ইং তারিখ উক্ত সহকারী শিক্ষক ও অফিস সহায়ক পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ৩১/১০/২০২৩ইং স্মারক নং- ২৯.৩৫.০৩০০.০০৩.১১.১৫৫ ২৩.১৭০৭ এর আলোকে উক্ত লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়। উক্ত নিয়োগ পরীক্ষায় লোকমুখে যথেষ্ট অনিয়ম ও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যেমন: নির্দিষ্ট সময়ের পরও আবেদন গ্রহণ করা, অনৈতিকভাবে প্রার্থীর রোল নম্বর গোপন করা ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা, পরীক্ষা কেন্দ্রের বিভিন্ন কক্ষে পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকা ইত্যাদি বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে। এছাড়াও লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর পরীক্ষায় কৃতকার্য হবে এমন শতভাগ আশাবাদী অনেক পরীক্ষার্থী উক্ত পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে চ্যালেঞ্জ করার জন্য জেলা পরিষদে গেলেও জেলা পরিষদ তাদের কোন অভিযোগ গ্রহণ করেনি এবং এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থাও গ্রহণ করেনি। যা আপনারা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিশ্চয়ই দেখেছেন।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক সহকারী শিক্ষক ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির উর্ধ্বে এসে সকল সম্প্রদায়ের জনসংখ্যার অনুপাতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বৈষম্যহীন নিয়োগদানের জোর দাবি নাগরিক পরিষদের নেতৃবৃন্দ।(বিজ্ঞপ্তি)