নিজস্ব প্রতিবেদক,বান্দরবান
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সোলালী ব্যাংক ও ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র লুটের ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।
তবে বুধবার সকালে জেলার উর্ধতন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার সৈকত শাহীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
আইনশৃংখলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, রুমা উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন রুমা সোনালী ব্যাংকের শাখা চারদিকে শতাধিক সশস্ত্র বাহিনী সদস্য ঘেরাও করে লুট করেছে কেএনএফ সশস্ত্র সংগঠন। এসময় ব্যাংকের গোপন বল্টের তালা ভেঙে প্রায় দেড়কোটি টাকা লুট করেছে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। এসময় বাধা দেয়ায় দায়িত্বরত পুলিশ, আনসার বাহিনীর সদস্যদের মারধর করে তাদের ১৪টি অস্ত্রও লুট করে নিয়ে গেছে। যাবার সময় তারাবি নামাজ শেষে ফেরারপথে সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ব্যাংকে গেইটের তালা ভেঙ্গে অফিসে থাকা অফিস সরঞ্জাম নষ্ট করে ফেলে এবং ব্যাংক নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মারধর করে কার্তুজসহ মোট ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় তারা।
রুমা সোনালী ব্যাংকের ক্যশিয়ার উথোয়াইচিং মারমা জানান, ডরমিটরি বাইরে যুবউন্নয়ন অফিসের পাশে গিয়ে চা”য়ের দোকানে চা খাইতে গেলে মুখে কালি লাগানো অপরিচিত ৩জন লোক অস্ত্রের মুখে দাড় করায় এবং তার শরীরে তল্লাশি চালিয়ে পকেটে থাকা ১৫শত টাকা ও ব্যাংকের চাবি নিয়ে নেয়।
পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী আসার পর ব্যাংকে গিয়ে দেখেন অফিস সরঞ্জাম গুলো ছড়ানো ছিটানো রয়েছে। এছাড়া তার জানামতে ভল্টের ভিতর ১কোটি ৫৯লক্ষ টাকা জমা ছিল। ভল্টের দুইটি চাবির মধ্যে তার কাছে ১টি এবং অপহরণের শিকার ম্যানেজারের নিকট অপরটি থাকত। ভল্ট না খোলা পর্যন্ত টাকা লুটের বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
রুমা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাজাহান জানান বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এবিষয়ে কোন প্রকার মামলা হয় নি। বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন বলেন পুলিশের ৮টি চায়না রাইফেল, ২টি এসএমজিসহ ১০টি অস্ত্র ও ৩৮০ রাউন্ড গুলি,আনসারের ৪টা শর্টগান ৩৫ রাউন্ড গুলিসহ ১৪টি অস্ত্র লুট করেছে সন্ত্রাসীরা, তবে কে বা কারা করেছে ক্রাইমটিম আসলে তারা ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তদন্ত করবে, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানান তিনি।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান সোনালী ব্যাংকের ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ, ব্যাংকের ভল্ট চেক করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রাইমসিন টিম আসলেই বুঝা যাবে টাকা খোয়া গেছে কিনা? ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধার করার জন্য পুলিশ, ৱ্যাব, সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। আতংকিত হওয়ার কিছু নেই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে তিনটি ব্যাংক লুট, ম্যানেজারকে অপহরণ এবং ১৪টি অস্ত্র লুটের প্রতিবাদ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবীতে বান্দরবানের রুমা ও জেলা সদরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ আয়োজিত কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান। অন্যদের মধ্যে নাগরিক পরিষদের নেতা মো: আবুল কালাম, শাহা জালাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। কর্মসূচীতে নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের সাথে শান্তি কমিটির আলোচনার নামে রং থামামা বন্ধ করুন। অস্ত্রধারীদের আলোচনার নামে প্রশ্রয় দেয়ার শাস্তিভোগ করছে পাহাড়ের মানুষ। কেএনএফ পাহাড়ের নতুন আতঙ্কের নাম। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পাহাড়ে সন্ত্রাস বিরোধী সাড়াশি অভিযানের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে রক্ষা করার দাবি জানাচ্ছি।