বন্যা পরিস্থিতির অবনতি,সাজেক-লংগদু’র সাথে বিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ
জাকির হোসেন,দীঘিনালা
দীঘিনালায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সড়ক ডুবে যাওয়ার কারণে দীঘিনালার সাথে সাজেক ও লংগদুর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে গতকাল (মঙ্গলবার) বিকাল থেকে সাজেকে পর্যটক যাওয়া-আসা সম্পূর্ন বন্ধ রয়েছে। সাজেকে প্রায় শতাধিক পর্যটক আটকা পরার খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া একটি ঘরের উপর এবং একটি সড়কে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে মুষলধারে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার কারণে পাহাড় ধ্বসের আশংকা করছেন স্থানিয়রা।
বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজি মোহাম্মদ কাশেম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরাফাতুল আলম ও বিশিষ্ট ব্যাবসায়ি হাজি মো. জসিম উদ্দিন। তাঁদের পক্ষ্য থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের শুকনা খাবার বিতরন করা হয়। এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের পক্ষ্য থেকেও শুকনা খাবারসহ আশ্রিতদের জন্য খিচুরি খাওয়ানোর ব্যাবস্থা করা হয়। এছাড়া সেনাবাহিনীর দীঘিনালা জোনের পক্ষ্য থেকেও সহযোগীতা প্রদানসহ সার্বিক খোঁজ রাখা হচ্ছে।
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় দীঘিনালার মাঈনী নদীর দু’কুলসহ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মেরুং ইউনিয়ন এবং কবাখালি ইউনিয়নের ১২শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। দুই ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রে ২শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া পানিবন্দি এলাকার অধিকাংশ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে স্বজনদের বাড়িতে। এর বাহিরে গতকাল (মঙ্গলবার) বিকাল থেকে উপজেলা সদরের অদুরে পূর্ব থানাপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকার ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দীঘিনালার বড়মেরুং এলাকায় দীঘিনালা-লংগদু সড়কের ষ্টীলব্রিজ নামক সড়ক এবং দাঙ্গাবাজার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ার কারণে সোমবার থেকে লংগদুর সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দীঘিনালা-সাজেক সড়কের কবাখালি সড়ক, বাঘাইহাট বাজার সড়ক এবং মাচালং বাজার সড়ক ডুবে যাওয়ায় গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুর থেকে সাজেকের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পরে।
মেরুং ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম লাকি জানান, ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের ৬শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। তাদের একাংশ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন বাকিরা উঠেছেন স্বজনদের বাড়িতে। একই কথা উল্লেখ করে কবাখালি ইউপি চেয়ারম্যান নলেজ চাকমা ওরফে জ্ঞান জানান, সে ইউনিয়নে ৫গ্রামের ৫শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে।
উপজেলার উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা সুপন চাকমা জানান, সমতল এলাকা থেকে স্থানভেদে কোন জায়গায় সৃষ্ট বন্যার পানির উচ্চতা ৪-৫ ফিট এবং মেরুং এলাকার অনেক জায়গায় ৮-১০ফিট। এবারের বন্যায় কৃষির প্রচুর ক্ষতি হবে উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, বন্যা পরবর্তিতে জরীপ করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারন করা হবে।
অপরদিকে সাজেক পর্যটনের সানচিটা রিসোর্টের স্বত্তাধিকারি বশির আহাম্মদ রাজু জানান, টানা বর্ষন শুরু হওয়ার পর থেকেই পর্যটক কমতে থাকে। তবে গত দুইদিন যাবত রিসোর্ট বুকিং সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে যায়। রাজু আরো জানান, বন্যা পরিস্থিতি বুঝতে পেরে মঙ্গলবার সকালে অধিকাংশ পর্যটক সাজেক থেকে ফিরেছেন, এর পরও বিকালে ফিড়ার অপেক্ষারত প্রায় শতাধিক পর্যটক সাজেকে আটকা পরেছেন ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরাফাতুল আলম জানান, বন্যায় পানিবন্দি পরিবার এবং আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের সহযোগীতাসহ প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে সার্বক্ষনিক খোঁজ রেখে জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে দূর্যোগ মোকাবেলা করা হচ্ছে।