অরণ্য ইমতিয়াজ
রুমা এবং থানচি উপজেলা ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তিনটি ব্যাংকে সশস্ত্র হামলার পর ভয় ছড়িয়ে পড়েছে পার্বত্য তিন জেলার ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় জড়িত সবার মধ্যেই। রাঙামাটি,খাগড়াছড়িসহ পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি ব্যাংকই তাদের প্রতিটি শাখাকে সংশ্লিষ্ট থানার সাথে যোগাযোগ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অফিসিয়ালি চিঠি দিয়েছে এবং সেই মোতাবেক ইতোমধ্যেই আইনশৃংখলাবাহিনীও পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের অন্যতম আর্থিক প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকের পার্বত্য অঞ্চলের ডিজিএম মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানিয়েছেন,বান্দরবানে যে ঘটনা ঘটেছে তা খুবই আতংক ও ভয়ের কারণ। আমাদের ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এই ঘটনার খুবই প্রভাব পড়েছে। আমরাও সাথে সাথেই নির্দেশনা দিয়েছি প্রত্যেক শাখাকে। প্রতিটি শাখাই নিকটবর্তী থানায় নিরাপত্তার আবেদন করার পর পুলিশের পক্ষ থেকেও তাৎক্ষনিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। একইসাথে সেনাবাহিনীও নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করছে,টহল দিচ্ছে। আমরা আমাদের প্রিন্সিপাল অফিস থেকে একটি মনিটরিং টীম করেছি পুরো বিষয়টি নজরদারিতে রাখতে।’
তবে বান্দরবানে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের অস্ত্র কেড়ে নেয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, আমার মনে হয় এদের পুলিশ দিয়ে প্রতিরোধ কঠিন,এখানে সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ ভূমিকা প্রয়োজন।’
রাঙামাটি জেলার বান্দরবান সীমান্তবর্তী রাজস্থলী উপজেলা,জুরাছড়ি,বিলাইছড়ি,বাঘাইছড়ি,বরকল ও খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার ব্যাংকের শাখাগুলোকে সবচে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন জানিয়ে, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির ২৪ টি শাখার দায়িত্বে থাকা এই উর্ধ্বতন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের ব্যাংক কর্মকর্তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’ সবচে বেশি ঝুঁকিতে থাকা রাজস্থলী উপজেলার ব্যাংকসমূহ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথাও জানালেন তিনি।
সোনালী ব্যাংক রাজস্থলী শাখার ব্যবস্থাপক ক্য সুই চিং মারমা বলেন, ভয় পাওয়াটাইতো স্বাভাবিক। এতবড় একটি ঘটনার পর ভয় না পেয়ে কি চলে,বলেন ? আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রাজস্থলীর থানার সহায়তা চেয়েছি। ব্যাংকে বাড়তি পুলিশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবুও ভয় তো কাজ করছেই।’
তবে রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, ব্যাংকসহ আর্থিকখাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের ভয় না পাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে রাঙামাটি জেলায় যেনো এমন কোন ঘটনা না ঘটে তার সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ব্যাংকে বাড়তি পুলিশ নিয়োজিত করার পাশাপাশি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। এই ঘটনার পর আমরা ‘সিকিউনিটি ডিক্লেয়ার’ করেছি। পুলিশ,সেনাবাহিনীসহ সকল গোয়েন্দা সংস্থা একযোগে কাজ করছে। আমরা ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ করেছি,দুর্গম এলাকার ব্যাংকের শাখাগুলোতে আপাতত বাড়তি লিকুইড ( টাকা) না রাখতে।’
রাঙামাটি জেলায় কেএনএফ’র কার্যক্রম আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জেলার সর্বোচ্চ এই পুলিশ কর্তা বলেন, আপনারা জানেন যে গতবছর বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম বড়থলি এলাকায় একটি জঙ্গীগোষ্ঠির খোঁজ পাওয়ার পর যৌথবাহিনী তাদের আস্তানা তছনছ করে,সেখানে তাদের সাথে কেএনএফ’র ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র জানা যায়। এছাড়া অন্য কোথাও এমন কোন তথ্য এখনো নেই। তবুও আমরা সবকিছুই আমাদের বিবেচনায় রাখছি,সতর্ক থাকছি।’