ইয়াছিন রানা সোহেল ও মিশু মল্লিক ॥
রাঙামাটির বরকল উপজেলার ভূষণছড়ায় চার শতাধিক বাঙালিকে গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত, দোষীদের বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসনের দাবি জানানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে বরকল উপজেলার ভূষণছড়া গ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) উপজেলা শাখার আয়োজনে ফারুক ই আযম (রাঃ) দাখিল মাদ্রাসার মিলনায়তনে ৪১ বছর আগে নৃশংস গণহত্যার বিচারের দাবিতে আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানে এই দাবি জানানো হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ বরকল উপজেলা শাখার সভাপতি তসলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল গাজীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মিনহাজ মুরশিদ, ভূষণছড়া গ্রামের ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক আবু বক্কর সিদ্দিক, শাহ আলম সওদাগর, মো. আব্দুল হালিম, সুলতান আহমেদ মন্ডল, ভূষণছড়া ইউপির সাবেক সদস্য আব্দুল জলিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি কামাল উদ্দিনসহ গণহত্যার শিকার স্বজনরা আলোচনায় অংশ নেন।
এসময় বক্তারা বলেন, এই গণহত্যা পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ৪১ বছর পার হলেও এই গণহত্যার আজো বিচার হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পায়নি কোনও সহযোগিতা। বক্তারা এই গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত, দোষীষদের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসনের দাবি জানান।
গণহত্যায় ১০ জন স্বজন হারানো নব্বোইর্ধ গুনাই বিবি বলেন, আমি আমার স্বামী, ৬ সন্তানসহ ১০ জনের বেশি স্বজন হারিয়েছি। সেই গণহত্যার ৪০ বছর পার হয়ে গেলেও আমরা কোন বিচার পাইনি। আমাদের কোন ক্ষতিপূরণও দেয়া হয়নি। আমরা গণহত্যার সাথে জড়িতদের বিচার চাই।
আলোচনা সভার পর গণহত্যায় নিহতদের কবর জিয়ারত, মিলাদ এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনায় মোনাজাত করা হয়। এছাড়াও এই দিনে নিহতদের স্মরণে স্বপ্নচূড়া ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ৫০০ শতাধিক হতদরিদ্রদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষুধ বিতরণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৪ সালের ৩১মে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র সংগঠন শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা রাঙামাটির বরকল উপজেলার দুর্গম ভূষণছড়া গ্রামে নারী-শিশুসহ চার শতাধিক বাঙালিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সেদিন ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মাত্র চার ঘণ্টার ব্যবধানে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটানো হয়। শান্তিবাহিনীর ১২৫ জনের একটি সশস্ত্র গ্রুপ এ হত্যাকান্ড পরিচালনা করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এতে অসংখ্য বাঙালি আহত হয়েছিলো। পুড়ে ছাই হয়ে যায় চার শতাধিক বসতবাড়ি।