শংকর হোড় ॥
নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি না করার পরামর্শ দিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি বলেছেন, মতভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। কোনও অবস্থাতেই নিজেদের সমস্যা পরের ঘরে জানতে দেওয়া যাবে না। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগকে নষ্ট করে এমন শক্তি পৃথিবীতে কারো নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশের পূর্বে জেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পৌর প্রাঙ্গণে সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় নেতাকর্মীরা বৃষ্টিতে ভিজে র্যালিতে অংশ নেয়।
জাতীয় সংসদের হুইপ স্বপন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহসের প্রশংসা করে বলেন, পৃথিবীতে এমন রাষ্ট্রনায়ক কম আছে, যিনি ঘোষণা দিতে পেরেছেন, যারা সেংশন দিবে, তাদের থেকে আমরা কিছু কিনবো না। আমি অবাক হয়েছি, এই আমি কাকে দেখছি, বঙ্গবন্ধুকে নাকি তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাকে। এমন সাহসী বক্তব্য কোন দেশের রাষ্ট্রনায়কের মুখে শোনা যাবে? পঁচাত্তরের নৃশংসতার স্মরণ করে সংসদের হুইপ আরো বলেন, একজন শিশু শেখ রাসেলকে সেদিন তারা রেহাই দেয়নি। পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। কে এমন শোক সইতে পারে? কিন্তু যাকে বঙ্গবন্ধু নিজের মেয়ে মনে করতেন, সেই খালেদা জিয়া ১৫ আগস্টে তার মিথ্যা জন্মদিন পালন করে কেক কেটে আনন্দ উদযাপন করছে। একাশিতে শেখ হাসিনা যখন দেশে এসে ৩২নম্বরে তাঁর পরিবারের নৃশংসতা দেখার জন্য দৌঁড়ে গিয়েছিলেন, সেদিন জিয়া শেখ হাসিনকে তাঁর পিতার বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়নি। অথচ খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ আদালতে জেল হওয়ার পরও মানবিক দিক বিবেচনা করে তাঁর সাজা স্থগিত করে তাঁকে বাসায় থেকে চিকিৎসার সুযোগ দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে বারবার আঘাত করা হয়েছে, কিন্তু তিনি আঘাতকে শক্তিতে রূপান্তর করে এগিয়ে গেছেন, সাথে দেশকেও এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, পাহাড়ে সীমান্ত সড়ক হচ্ছে। যেখানে বসত থাকবে, সেখানে রাস্তা হবে। সীমান্ত সড়কের কাজ শেষ হলে এখানকার অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হবে। তিনি পাহাড়ের পর্যটনকে এগিয়ে নিতে এই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্য জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি বলেছেন, আওয়ামীলীগ নেতার দল নয়; কর্মীর দল। আওয়ামীলীগ টিকে রয়েছে কর্মীদের আন্তরিকতার কারণে। যে দলের কর্মীরা ঝড়-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে দলের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যায়, সেই দলকে রুখতে পারে এমন শক্তি পৃথিবীর কারোর নেই। তিনি বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে আওয়ামীলীগ আন্তরিক নয়, এমনটা কেউ বললে সেটা আওয়ামীলীগের প্রতি অবিচার করা হবে। অতীতের কোনও সরকার পাহাড়ের উন্নয়নে আন্তরিক ছিল না। একমাত্র শেখ হাসিনার সরকারই পাহাড়ের উন্নয়নে কাজ করেছেন। তিনি আন্তরিক বলে পাহাড়ে বিশ^বিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, কার্লভার্ট, ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। এলাকার কর্মসংস্থান বেড়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চিং কিউ রোয়াজা, অংসুই প্রু চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুদ্দৌহা, পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, পৌর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মাহফুজ রহমান, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অংসুছাইন চৌধুরী, নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব, কৃষকলীগের সভাপতি জাহিদ আক্তার, শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শাওয়াল উদ্দিন, মৎস্যলীগের সভাপতি উদয়ন বড়–য়া, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ কাজল, যুব মহিলা লীগের সভাপতি রোকেয়া আক্তারসহ জেলা, উপজেলার নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মুছা মাতব্বর ও প্রচার সম্পাদক হাবিবুর রহমান।