সুহৃদ সুপান্থ
‘মনে হচ্ছে অবরুদ্ধতার প্রাচীর থেকে মুক্তি পেয়েছি, রাতের পর রাত নির্ঘুম কেটেছে,ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি,কখন পুলিশ আসে। অনেক সময় বাসায়ও থাকতে পারিনি। নিজের টেনশন,নেতাকর্মীদের টেনশন। দলীয় কর্মসূচীও ঠিকঠাকমতো পালন করতে পারতাম না। পুলিশের নজরদারি,চাপ,বের হতে না দেয়াসহ নানা কারণে। গত ৫ আগষ্ট বিকেলে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে মনে হচ্ছে,মুক্তি পেয়েছি এক অসহনীয় অবস্থা থেকে। সারাক্ষণ ভয়,ভীতি নিয়ে জীবন কাটাতে হতো আমাদের,এখন মুক্ত,স্বাধীন। ’
এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন।
পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন, তবে আওয়ামীলীগের পরিণতি থেকে নিশ্চয়ই আমরাও শিক্ষা নিব। যে অপকর্মের কারণে তাদের করুণ পরিণতি হয়েছে আমাদের বেলায় সেটি যেনো না হয়, তার জন্য সতর্ক থাকব আমরা। তারা যেভাবে প্রশাসন,পুলিশ,আইনশৃংখলাবাহিনীকে দলীয়করণ করে একটি রাষ্ট্রের পুরো সিস্টেমকে কলাপস্ করে দিয়েছিলো, এই পরিণতি তাদের অনিবার্যই ছিলো। আমাদের নেতাকর্মীদেরও এইসব বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’
মামুন বলেন,‘ শিক্ষার্থীদের হাত ধরে যে মহান বিজয় এসেছে তার মর্যাদাকে রাখতে,সেই বিজয়ের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে আমাদের।’
আওয়ামীলীগের করুণ পরিণতির জন্য তাদের মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি,রাষ্ট্রের পুরো কাঠামোকে নষ্ট করে দেয়া, প্রতিটি সেক্টরকে দুর্নীতির মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়া,আইনশৃংখলাপরিস্থিতির চরম অবণতি,মানুষের ভোট ও বাক স্বাধীনতা হরণ সহ অসংখ্য কারণকে দায়ি করে মামুন বলেন, প্রত্যেকটা সেক্টর বিদ্রোহ করেছে,একযোগে। ছাত্ররা ছিলো ফ্রন্টলাইনে,কিন্তু পুরো দেশবাসির ১৬ বছরের রাগ ক্ষোভ জেদ ও প্রতিবাদের ভয়াবহ বিস্ফোরনেই পতন হয়েছে এই স্বৈরাচারের।’
‘দেশ সবার,যে কাজ আওয়ামীলীগ করেছে,সেই একই ধরণের কাজ আর যেনো কেউ করতে না পারে সেইজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে’ মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, আমরাও যদি আওয়ামীলীগের মত একই অপকর্মগুলো করি তবে তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য আর কোথায় থাকলো !
নিজ দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক ও সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে জেলা বিএনপির এই সাধারন সম্পাদক বলেন, দখলবাজি,চাঁদাবাজি,কারো সম্পত্তি দখল বা নষ্ট করার অভিযোগ যদি কারো বিরুদ্ধে পাওয়া যায়,তাকে ন্যুনতম ছাড় দেয়া হবেনা। এটা আমাদের কেন্দ্রের স্পষ্ট নির্দেশনা।’
দলে অনুপ্রবেশকারি,অতিউৎসাহি ও বিগত সময়ে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গকারিদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবেনা বলেও কেন্দ্রের নির্দেশনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মামুন।
রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের অফিস আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনাটি ‘দুঃখজনক’ মন্তব্য করে মামুন বলেন,‘ এই আন্দোলনে নানান শ্রেণী পেশা দলের মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছিলো। তাদেরই কোন একটি পক্ষ এই অপকর্মটি করেছে,যা ঠিক হয়নি। আমাদের দলের কোন নেতাকর্মী এই ঘটনায় জড়িত থাকার কোন তথ্য আমরা পাইনি। যদি কাউকে সম্পৃক্ত পাওয়া যায় সেটা প্রশাসন দেখবে। এই ধরণের ঘটনা ঘটা উচিত নয়।’
নিজ দলের নেতাকর্মীদের বর্তমান সরকার ও আইনশৃংখলাবাহিনীকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়ে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক বলেন, দেশ পুনর্গঠনের এই কাজে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’