শংকর হোড় ॥
সময়মতো কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি না পাওয়ায় মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা আরো এক মাস বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে মৎস্য ব্যবসায়ীরা। সাধারণত আষাঢ় মাস শুরুর দিকে বৃষ্টির কারণে কাপ্তাই হ্রদে স্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেতে থাকায় অবমুক্ত হওয়া মাছের পোনা বৃদ্ধি এবং মাছের পেটে থাকা ডিম ছাড়ার সুযোগ পেলেও এবছর শ্রাবণের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের ফলে মাত্রই কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থায় মাছ আহরণ শুরু হলে পুরো মৌসুমেই মাছ সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা থাকায় মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা আরো এক মাস বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে ব্যবসায়ী। গত সোমবার মৎস্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের দাবি তুলে ধরেন।
ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত প্রতি বছর ১মে থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং পানির স্তর কম থাকার কারণে মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা চার মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত বছর কাপ্তাই হ্রদে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পানির স্তর ছিল কম তাই এবার ১৯ এপ্রিল থেকে কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। গত ১৯ জুলাই তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলেও হ্রদে পানি কম থাকায় জেলা প্রশাসন মাছ আহরণ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরো এক মাস বৃদ্ধি করে। কিন্তু এরপর কাক্সিক্ষত বৃষ্টির দেখা না পেলেও সম্প্রতি টানা বর্ষণে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদও রয়েছে আর মাত্র ১০দিন। পানির অভাবে অবমুক্ত করা মাছের পোনা সঠিক বৃদ্ধি না হওয়া এবং পানির অভাবে অনেক মাছই ডিম ছাড়তে পারেনি। এই অবস্থায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে সহজেই পোনা মাছ জালে চলে আসবে। এতে পরবর্তীতে মাছের আকাল দেখা দিবে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং জেলে ও কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে পড়বে। ব্যবসায়ীরা আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাছ আহরণ বন্ধ রাখার আবেদন জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা আবেদনে তুলে ধরেন, কেচকি জালের দৈর্ঘ্য দেড় হাজার ফুটের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হোক। বর্তমানে অনেকেই তিন-চার হাজার ফুট জাল ব্যবহার করার কারণে একসাথে বেশি মাছ আহরণ করছে এবং যথোপযুক্ত বাজারজাত করতে না পারায় মাছগুলো অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। এতে অনেক মাছই নষ্ট হয়ে পানিতে ফেলে দিতে হচ্ছে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তেমনি সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।
তারা আরো বলেন, হ্রদে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসের দিকে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছের নতুন পোনা জন্মায়। সাগরের ন্যায় কাপ্তাই হ্রদেও প্রাকৃতিক উৎপাদিত মাছের উৎপাদন ও প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই দুই মাসে ৪০-৬০ দিন হ্রদে মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখা হোক। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন ও প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমানে যে সাতটি অভয়াশ্রম আছে তা পর্যান্ত নয় এবং আয়তনে অনেক ছোট। বর্তমানে যে সাতটি অভয়াশ্রম আছে সেগুলোর আয়তন বৃদ্ধি এবং নতুন করে আরো দশটি অভয়াশ্রম সৃষ্টির পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে মাছের প্রজনন স্থল সমূহ তথা চ্যানেলসমূহ খনন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রজননের জন্য এবং হ্রদের রক্ষণাবেক্ষণে রাঙামাটি জেলা মৎস্য অধিদপ্তরকে সম্পৃক্ত করারও আবেদন জানান জানান ব্যবসায়ীরা।
মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়–য়া বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে আমাদের দাবি তুলে ধরেছি। এই মুহূর্তে মাছ আহরণ শুরু হলে কারো কোন উপকারে আসবে না। প্রথম কয়েকদিন ভালো মাছ পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদী হিসেব করলে তা আমাদের লোকসান ডেকে আনবে। এছাড়া কেচকি মাছের জাল দেড় হাজার ফুট ও দ্বিতীয় দফায় ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ৪০ থেকে ৬০ দিন মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টিও আমরা তুলে ধরেছি। এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে কাপ্তাই হ্রদের সুদিন আবারো ফিরে আসবে।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএফডিসি) রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, এই ধরনের চিঠি আমি পাইনি। তাই এই বিষয়ে কিছু জানি না। সময় বৃদ্ধির বিষয়টি সবদিক পর্যালোচনা করে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।