নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
পার্বত্যঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহুকে সামনে রেখে ও বাংলা নববর্ষকে ঘিরে রাঙামাটির মাঝেরবস্তিতে ১০ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে শহরের শাহ্ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২বঙ্গাব্দ উদযাপন পরিষদের আয়োজনে সংক্ষিপ্ত সভা শেষে রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স এর সভাপতি অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন ফেস্টুন উড়িয়ে বৈশাখী মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। মেলা চলবে আগামী ১লা বৈশাখ ১৪৩২বঙ্গাব্দ ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। এছাড়া উক্ত কমিটির আয়োজনে মেলার ২ বৈশাখ ১৫ এপ্রিল সকালে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা র্যালি, পান্তা ভাতের উৎসব ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ব্যান্ড শো এর আয়োজন করা হয়েছে একই স্থানে।
অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাড. মামুন বলেন, বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও জাতি-গোষ্ঠির মানুষের সমন্বয়ে বৈচিত্রময় এক শান্তিপ্রিয় এ মাঝেরবস্তী এলাকাটি। এ এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন জাতির বসবাস হলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে একে অপরের উৎসবে সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ করতে দেখেছি আমি সেই কিশোরবেলা থেকেই। বিগত ৩১ বছর থেকে দেখেছি এ এলাকার সকল ধর্ম-বর্ণের কিশোর-কিশোরীদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলা নববর্ষ উদযাপন কমিটি বেশাখী উৎসবের আয়োজন করে আসছে। এতো বছর ধরে এ ঐতিহ্য ধরে রাখা চারটিখাটি কথা নয়। এটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
এবারের বিজু ও নববর্ষকে ঘিরে এ কমিটি মেলার আয়োজন করেছে এতে খুশি এলাকার মানুষ ও রাঙামাটির অন্যান্য দর্শনার্থীরা। তবে এ মেলার অজুহাতে কেউ যাতে মাদক বিক্রি ও সেবন করে পরিবেশকে নষ্ট করতে না পারে সে বিষয়টি কমিটিকে মাথায় রাখার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, এ এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে অনেক শিক্ষার্থী আজ দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এখন অনেক ভালো ও বড় পর্যায়ের পদে চাকুরী করছেন। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। এ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ যাতে কেউ নষ্ট করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে এলাকার যুবদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সাংস্কৃতিক উৎসব ও বৈশাখী মেলা ১৪৩২বঙ্গাব্দ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক রাজন রক্ষিতের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সৈকত বিশ^াস অন্তুর সঞ্চালনায় মেলার উদ্বোধন অনুণ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, শাহ্ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান, বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ দীল বাহাদুর রায়, তবলছড়ি বাজার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. আবু নাছের বিপ্লব, বাংলা নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা আবু সাদাৎ মোঃ সায়েম, মেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ রাজু চৌধুরীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
আয়োজক কমিটি জানান, মেলায় মোট ৮০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যেখানে কুটির ও হস্তশিল্প, বাড়িঘর সাজসজ্জার পণ্য, বিভিন্ন রকমারি খাবার, পোশাক’সহ বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যাবে। এছাড়া শিশু কিশোরদের জন্য রয়েছে নাগরদোলা’সহ বিভিন্ন রাইডস্। এদিকে দীর্ঘদিন পর মেলার আয়োজন করায় খুশি দর্শনার্থীরা।
মেলার আয়োজক আহ্বায়ক রাজন রক্ষিত ও সদস্য সচিব সৈকত বিশ^াস অন্তু জানান, সমস্ত অনুষ্ঠানে চিরায়ত বাংলার লোকজ সংস্কৃতিকে উপস্থাপনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। যাতে মেলায় আগত মানুষ উৎসবে মেতে উঠতে পারে। সবার সহযোগিতায় উৎসব মুখরপরিবেশে এই মেলা সফল করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।