মো: হুমায়ূন রশিদ
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড আর সেই মেরুদন্ডের শক্ত হাড়গুলোই হচ্ছে শিক্ষক। জাতি গঠনের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে শিক্ষকরাই। উন্নত বিশ্বে শিক্ষকদের মর্যাদা সকল পেশার থেকে অনেক অনেক বেশি। কারণ তারা জানে পৃথিবীর সফল মানুষগুলো কোন না কোনভাবে শিক্ষকদেরই কষ্টের ফসল।আপনি যে পেশার মানুষ-ই হোন না কেন দিন শেষে আপনি কোন এক শিক্ষকের ছাত্র। তাই উন্নত জাতি গঠনে শিক্ষকদের জিবনের নিশ্চয়তা খুবই জরুরী। শিক্ষকরা যদি তাদের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিন্তে করতে পারে তবেই ছাত্রছাত্রীরা প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারবে। এখানে নিশ্চিন্ত শব্দটা মূলত নিশ্চয়তা অর্থে বুঝানো হয়েছে।এক্ষেত্রে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা সবচেয়ে জরুরী। সামাজিকভাবে শিক্ষকদের মর্যাদা নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
রাষ্ট্র এই দায়িত্ব পালন করতে না পারলে শিক্ষকরা তাদের পাঠদানে মনোযোগ হারিয়ে তারা অন্য পেশায় যুক্ত হয়ে পড়বেন খুব স্বাভাবিক ভাবেই। এসব কিছু বিবেচনায় মাধ্যমিক শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবি শতভাগ যৌক্তিক। রাষ্ট্রের উচিত তাদের যৌক্তিক দাবিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহন করা।
কিন্তু শিক্ষকরা তাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে যে আন্দোলন করছে তার পন্থাটা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।তাদের মনে রাখা দরকার দাবি আদায়ে রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণের নানা উপায় রয়েছে। যেহেতু তারা সবচেয়ে মেধাবী মানুষগুলোর প্রতিনিধিত্ব করেন সুতরাং তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে কোনভাবেই অযৌক্তিক পন্থা অবলম্বন গ্রহণযোগ্য নয়। সহজ করে বললে শিক্ষকদের দাবি আদায়ে কোন ভাবেই শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম ব্যহত হওয়া উচিত নয়। কোভিড ১৯ মহামারীর কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা পূরণ করা যতেষ্ট সময় সাপেক্ষ। দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক হতেই বেসরকারি শিক্ষকরা জাতীয়করণের আন্দোলন শুরু করলেন।
তাদের আন্দোলনের শতভাগ যৌক্তিকতা থাকলেও শ্রেণি কার্যক্রম ব্যহত করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কোনভাবেই এই মহান পেশার সাথে যাই না। কেননা শিক্ষকরাই রোজ তাদের শিক্ষার্থীদের শেখান যে, অর্থ উপার্জনই যেন তাদের মূল লক্ষ্য না হয়। তারা যেন তাদের অর্জিত জ্ঞানকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করেন। শিক্ষকরা যে নীতি আদর্শের কথা রোজ তাদের শিক্ষার্থীদের শোনান সে নীতি আদর্শ থেকে নিজেরা কোনভাবেই বিচ্যুত হওয়া উচিত নয়। কারণ শ্রেণি কার্যক্রম ব্যহত হলে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে শিক্ষার্থীদের।
আর শিক্ষার্থীদের ক্ষতি মানেই একটা জাতির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি। যেটা কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। তাই শিক্ষকদের উচিত তাদের যৌক্তিক দাবী আদায়ে অযৌক্তিক পন্থা অবলম্বন না করে গ্রহনযোগ্য পন্থা বের করা। শিক্ষকরা যেহেতু জাতির মেধাবী নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করে সেহেতু তাদের দাবী আদায়ের বিকল্প পন্থা বের করা খুবই সহজ বিষয়। তারা যেহেতু জাতি গঠনের কারিগর সেহেতু জাতির ভবিষ্যৎ নষ্ট করা কোনভাবেই তাদের মহৎ পেশার সাথে যাই না। তাদের উচিত সর্বোত্তম মেধাকে কাজে লাগিয়ে দাবী আদায়ের বিকল্প পন্থা বের করা। এতে দেশ এবং জাতি উভয়ই উপকৃত হবে।
লেখক : সহকারী শিক্ষক, সিঙ্গিনালা তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা।
(‘খোলা জানালা’ বিভাগের সব লেখায় প্রকাশিত মতামত একান্তই লেখকের, এর সাথে আমাদের সম্পাদকীয় নীতিমালার কোন সম্পর্ক নেই। এই সম্পর্কে ভিন্ন ভাষ্য সম্বলিত লেখা পেলে সেটিও ছাপাব আমরা।)