জিতু মিত্র
মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম বন্ধু। পৃথিবীর কোনো সম্পদ, টাকা-পয়সা, গাড়ি, বাড়ি হারানোর সঙ্গে মাকে হারানোর তুলনা হয় না। পৃথিবীর সব সম্পর্ক, সব ভালোবাসা একটি সম্পর্কের কাছে এসে মাথা নোয়ায়। তা হলো মা আর সন্তানের সম্পর্ক। কোনো ব্যাখ্যা নেই, কোনো নাম নেই, কোনো লাভক্ষতির হিসাব নেই, পাওয়া বা না পাওয়ার অতৃপ্তি নেই, আছে কেবল পরিপূর্ণতা। এ এক নির্মোহ পবিত্র বন্ধন, যা কেবল মা আর সন্তানের মধ্যে হতে পারে। মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্ব মা দিবস পালন করা হয়। মাকে নিয়ে আলাদা একটি দিবসের প্রচলন হলেও বস্তুতপক্ষে কোনো নির্দিষ্ট দিনে বা সময়ে বা উপলক্ষ করে মায়ের প্রতি ভালোবাসা হিসাব করা যায় না। এটি সর্বকালের, সর্বসময়ের। মায়ের আঁচল ছায়ার প্রশান্তি পৃথিবীর সব শান্তি আর সুখের ওপরে। ঠান্ডা এসির বাতাসও বুঝি মায়ের আঁচলের ছায়ার প্রশান্তি এনে দিতে পারবে না। কারণ এটি এক দিনে প্রশান্তি অন্যদিকে নিরাপত্তার ছায়া। মা কথাটি খুবই ছোট্ট কিন্তু এর গুরুত্ব অপরীসিম। আমরা এই সবাই এই দুনিয়ার আলো দেখতে পাই এই মায়ের জন্য। একটা মা যে কত কষ্ট করে তার সন্তানকে মানুষ করেন তার কোন হিসেব বা তুলনা নেই। দীর্ঘ নয় মাস দশ দিন গর্ভে থেকে একটি সন্তান ভুমিষ্ট হয়। এই এতটা দিন একটা মা অনেক কষ্ট করে সেই সন্তানকে পেটের মধ্যে লালন করে। একটা মা অথবা একটা বাবা কতটা কষ্ট করে তার সন্তানকে মানুষ করে। এটা যতটা কষ্টের আবার ততটা আনন্দের।
প্রতিটি মা’ই বেস্ট। মা হচ্ছে সবচেয়ে আপন। তাই আজ শেয়ার করলাম মাকে নিয়ে ভালোবাসার একটি গল্প।
আমার মা। মাকে আমি ভালোবাসি। আমার জন্য কত কষ্টই না তুমি করেছ মা। মনে পড়ে এক রাতের ঘটনা। আমার কি জ্বরটাই না হল সে রাতে। সারাটা রাত আমি জ্বরে কাতরাচ্ছিলাম। ঘরে জ্বরের ঔষধ ছিল না। মা আমার মাথা ধুইয়ে দিলেন। সারাটা রাত আমার সাথে জেগে রইলেন। সারাদিন পরিশ্রমের পর যে কোন ব্যাক্তিরই ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসার কথা। অথচ মায়ের চোখ থেকে ঘুম যে ছুটে কোথায় গেল। কি যেন একটা উৎকন্ঠা মায়ের মুখকে এতটুকু করে দিয়েছিল। এমন কত রাত যে মা আমার না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন তার কি হিসেব আছে। আমি যখন কোলে ছিলাম। যে বয়সের স্মৃতি আমার একটুও মনে নেই। কতবার যে ক্ষুধায় কেঁদে উঠেছি। মা আমার ঠিকই বুঝে যেতেন। সেই মাকে আমি কিই বা দিতে পেড়েছি।
মা আমাকে মাঝে মাঝে বকা দেন। আমি যখন পড়া ফাঁকি দেই বা যখন একটু বেশি দুষ্টুমি করি। কিছুটা মন খারাপ হয় কিন্তু আমি জানি মা আমার ভালর জন্যই তিনি বকেন। আমাকে পড়তে বলেন সে তো আমার ভবিষ্যতের জন্যই। নিঃস্বার্থ মা আমার।
একদিন বাবা একটি ছোট মাছ এনেছিল। মা মাছটি বেশ মজা করে রেধেছিলেন। কিন্তু সেদিন কোন কারণে মাছের টুকরো কম পড়েছিল। কিন্তু মা আমাদের সেটা বুঝতেই দেননি। দেখি, লুকিয়ে তিনি শুধু আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। মা তুমি এত ভাল কেন? কেন তুমি আমাদের জন্য এত কষ্ট কর?
পৃথিবীতে মায়া-মমতা-ভালোবাসা এবং কি বিসর্জনের মতো বোধগুলোর যদি কোনো পার্থিব রূপ থাকত, তাহলে সে হয়তো একজন মায়ের মতোই দেখতে হতো। পৃথিবীতে মা হচ্ছে এমন একমাত্র সম্পর্ক, যার সৃষ্টি স্বয়ং আত্মত্যাগকেই সংজ্ঞায়িত করেছে এর স্বমহিমায়। শত সহ¯্র নির্ঘুম রাত, শিরা থেকে ধমনি অব্দি প্রভাবিত প্রতিটি রক্তকণিকা নিংড়ে বেরিয়ে আসা শরীরী আর্তনাদ এসব আত্মত্যাগের পরম সাক্ষী। একজন মায়ের কাছে সন্তান হচ্ছে তার আত্মার পরম আত্মীয়, এক অভিন্ন সত্তার সঙ্গী, অস্তিত্বের প্রতিচ্ছবি। মা হচ্ছেন এমন একজন বিচারক, যার আঁচলে বাঁধা সুখগুলোকে সে ছড়িয়ে দিতে পারে প্রতিটি সন্তানের কাছে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে।
সন্তানের হাজার জনমের বেঁচে থাকা প্রতিটি নিশ্বাসও যদি অবিরত তার মায়ের পূজা করে, তবু তার ঋণ পরিশোধযোগ্য নয়। তাই তো শুধু বারবার বলতে ইচ্ছা হয়, মা গো, তুমি আমায় আর একটিবার জনম দেবে? সে জনমে না হয় শুধু তোমার হয়েই থাকব, তোমার প্রতিটি কথা আমি শুনব। মা গো, তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাব অবিরত ভোর না হওয়া রাত্রি, মা গো, তখন তোমার সেই ডানপিটে ছেলেটিকে একটু বেশি করে বকে দিয়ো, আমার তাতে একটুও আর মন খারাপ হবে না, নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে আর কোনো জ্বলন্ত দুপুরে কিংবা রাতের আঁধারে ঘুরে বেড়াব না, আমি শুধু তোমার পাশেই থাকব তোমার আঁচলের একটি কোনা ধরে, সেই তোমার ছোট্ট আমি যেমনটি ছিলাম। কারণ, আমি তো জেনেই গেছি মায়ের প্রতিটি নিশ্বাস তার সন্তানের জন্য আশীর্বাদ বহন করে।
মা হচ্ছেন একজন পূর্ণাঙ্গ নারী, যিনি গর্ভধারণ, সন্তানের জন্ম তথা সন্তানকে বড় করে তোলেন- তনিই অভিভাবকের ভূমিকা পালনে সক্ষম ও মা হিসেবে সর্বত্র পরিচিত।
বিশ্ব তার অস্তিত্ব বজায় রাখবে, পৃথিবীর সব সম্পর্ক, সব ভালোবাসা একটি সম্পর্কের কাছে এসে মাথা নোয়ায়। তা হলো মা আর সন্তানের সম্পর্ক। তাই মাকে ¯্রষ্টার পরেই স্থান দেওয়া হয়েছে। সন্তানের সব সুখ শান্তি এমনকি স্বর্গ মায়ের পায়ের নিচেই নিহিত।
একটি সন্তানকে জন্ম দিতে গর্ভে লালন-পালন করা থেকে শুরু করে যে অসহনীয় কষ্ট হয় তার ভেতর সন্তানের মুখ দেখে সেই কষ্ট এক মুহূর্তে ভুলে যায় একজন মা। তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। দশ মাস দশ দিন গর্ভেধারণ করে বয়ে বেড়ানোর কষ্ট আগত সন্তানের কথা ভেবে সুখে পরিণত হয়। নিয়তির কঠিন খেলায় যখন সব হারিয়ে যেতে থাকে তখনো মা তার সন্তানকে বুকে আগলে রাখে। সন্তানের গায়ে একটি ছোট আঘাতও অনেক বড় হয়ে পীড়া দেয় মায়ের বুকে।