জয়নাল আবেদীন, কাউখালী
পার্বত্য জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ নানাবিদ সমস্যা সমাধান কল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ প্রকল্প, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প। ক্রিকে মৎস্য চাষ, প্রদর্শনী খামার স্থাপন, সুফলভোগীদের মাছচাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, নিবন্ধিত জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানে সহায়তা প্রদান, মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন ও মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য খাতে উন্নতি সাধনই এই প্রকল্পের মূল কাজ।
উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত কাউখালী উপজেলার ক্রিক উন্নয়ন করা হয়েছে সাতটি। যার সুফলভোগীর সংখ্যা ৫৮ জন। প্রদর্শনী খামার স্থাপন করা হয়েছে ৫টি। সুফলভোগীদের দক্ষতা উন্নয়নে মৎস্য চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে ১৮০ জনকে। উপজেলার নিবন্ধিত ২৪ জেলে পরিবারের মধ্যে বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে করা হয়েছে সহায়তাও।
উপজেলার মনির উদ্দিনের উচানু ঘোনা মৎস্য ক্রিক, আবু তাহের নাইল্যাছড়ি ছাগল খাইয়্য ক্রিক, মুসা মাতাব্বর ক্রিক, উসাতন চাকমা মৎস্য বাধ, মংসিপ্রæ চৌধুরী মৎস্য ক্রিক, রাহুল মোহন চাকমা ক্রিক ও উসাইন্দা রোয়াজা গোছাবিল ক্রিক ও প্রদশর্নী খামার সরেজমিন ঘুরে দেখাগেছে এ প্রকল্পে ভাগ্য ফিড়ছে কাউখালীর মৎস্য চাষীদের। পূরণ হচ্ছে আমিষের চাহিদা। সৃষ্টি হচ্ছে কর্মস্থানের।
এসব ক্রিকে’র কয়েকজন সুফলভোগীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের, তারা জানান- আবু তাহের নাইল্যাছড়ি ছাগল খাইয়া ক্রিকের একজন সুফলভোগী মো. দিদার বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিসের সার্বিক সহযোগীতা ও পরামর্শে পরিত্যক্ত জমিতে বাঁধ দিয়ে ক্রিকে মৎস্য চাষ শুরু করি। জমিগুলো চাষাবাদ করার উপযুক্ত ছিলোনা। মাছ চাষ করে এ পর্যন্ত তিনি তার ক্রিক থেকে চার লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। মাছ চাষের ফলে পারিবারিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ভাগ্য বদলে ভ‚মিকা রাখছে এ ক্রিক বলে জানান তিনি।
মনির উদ্দিনের উচানু ঘোনা মৎস্য ক্রীকের একজন সুফলভোগী অশোক কুমার মারমা বলেন, এই ক্রিক থেকে বছরে ৭০০ থেকে ৭৫০ কেজি মাছ উৎপাদন হয়। যা বিক্রি করে পারিবারের প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটাতে পারছি। আরেক সুফলভোগী চিত্তরঞ্জন চাকমা জানান, নিজেদের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পর বছরের দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয় তার ক্রিক থেকে। সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানও।
সুফলভোগীরা দাবি করেন সরকারের পক্ষ থেকে যদি মানসম্পন্ন মৎস্য পোনা সরবরাহ করা হয় তবে মৎস্য উৎপাদনে বিশেষ ভ‚মিকা রাখতে পারবে তারা।
কাউখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান- নানা সীমাবন্ধতার মধ্যে থেকে মৎস্য চাষীদের প্রয়োজনীয় সকল পরামর্শ ও সহযোগিতা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে মৎস্য দপ্তর। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মৎস্য চাষের ফলে প্রাণিজ আমিষ তথা পুষ্টির চাহিদা পূরণ পাশাপাশি ক্রিকের বাঁধের ওপর সবজি উৎপাদন হচ্ছে। ক্রিক সংশ্লিষ্ট পাহাড়ে ফলজ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রিক সংশ্লিষ্ট পাহাড়ে হাঁস ও মুরগি পালন সম্ভব হচ্ছে। ক্রিকের পানি ব্যবহার করে ক্রিকের আশেপাশের অনাবাদী জমিগুলোতে ধান ও সবজি চাষ হচ্ছে। ক্রিকের পানি গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লা আল হাসান বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি জেলার ২৬টি উপজেলায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তর নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রকল্পের মাধ্যমে ক্রিক উন্নয়নের ফলে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পার্বত্য জনগোষ্ঠীর পানির তীব্র সংকট নিরসন হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
রাঙামাটি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অধীর চন্দ্র দাস জানান যে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ক্রিক নির্মাণ, মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন, চাষীদের মৎস্য চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে সাবলম্বী করা এবং জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সহায়তাসহ অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে মৎস্য সেক্টরে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ লক্ষ মে. টন নির্ধারণ করা হয়েছে। যা বর্তমানে মাছ উৎপাদনের দ্বিগুন। মৎস্য সেক্টরে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পার্বত্য অঞ্চলে মৎস্য ক্রিক উন্নয়নের বিকল্প নেই। মৎস্য চাষী ও জেলেদের জীবন মান উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।