নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাঙামাটি রাজবনবিহারে উদ্যাপিত হয়েছে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসের বর্ষাবাস সমাপনীতে প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্যাপন করেন বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা। সোমবার সকালে রাজবন বিহারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে পূণ্যার্থীদের সমাগম শুরু হয়। মূল মন্দিরে প্রবেশ পথে প্রদীপ প্রজ্বলন করে, পরে উপাসনা মন্দিরে বন্দনা করে বনভান্তের দেহধাতুতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পূণ্যার্থীরা।
প্রবারণা পূর্ণিমায় অংশগ্রহণ করতে আসা চারুমতি চাকমা বলেন, দীর্ঘ তিনমাস ভিক্ষুসংঘ একই বিহারে বসবাস করে শীল, সমাধি প্রজ্ঞা অনুশীলন করে বর্ষাব্রত পালন করেন। তিনমাস নির্দিষ্ট বিহার ব্যতীত অন্য কোথা ও রাত্রি যাপন করতে পারে না ভিক্ষুসংঘ। তিন মাস শেষে আজ থেকে প্রবারণা পূর্ণিমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু।

সকাল নয়টায় ভিক্ষুসংঘ মঞ্চে আগমন করে। রাজবন বিহার উপাসক উপাসিকা পরিষদের সহ অর্থ সম্পাদক মধুচন্দ্র চাকমার সঞ্চালনায় শিল্পী আদর্শী চাকমার কন্ঠে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। পঞ্চশীল গ্রহণ, বুদ্ধপূজা, সংঘদান, পি-দান, অষ্টপরিষ্কার দান, শীল গ্রহণ, বিশ্ব শান্তি প্যাগোডার জন্য টাকা দান ও ভাবনা অনুশীলন, প্রদীপপূজা ও ফানুস ওড়ানোর মতো নানা আচার পালনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্যাপন করছেন রাঙামাটি জেলার বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সহ সম্পাদক ও সাবেক যুগ্ম জজ এডভোকেট দীপেন দেওয়ান বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমার মূল লক্ষ্য হলো মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। আমাদের ভিক্ষুরা তিনমাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা পূর্নিমার মধ্যে দিয়ে কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু হয়। উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশে কঠিন চীবর দান উৎসব ভালোভাবে উদযাপন করতে পারবে বলে আশা রাখি । কঠিন চীবর দানের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সুখ-শান্তি ফিরে আসুক।

রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমার মধ্যে দিয়ে আমরা যাতে ভালো কাজ করতে, সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারি। ধর্মাচরণের মাধ্যমে সারাদেশে সুখ-শান্তিতে থাকতে পারি। সারা দেশে সুখ-শান্তি ফিরে আসুক।
এসময় ফুরমোন আন্তর্জাতিক ভাবনাকেন্দ্রের অধ্যক্ষ ভৃগু মহাস্থবির, সৌরজগত মহাস্থবির, জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবিরসহ রাজবনবিহারের সিনিয়র ভিক্ষু সংঘ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন, নারী সংস্কার কমিশনের সদস্য ও রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি নিরূপা দেওয়ানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও অসংখ্য পূণ্যার্থী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

