ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই
প্রায় একশত ফুট উপর হতে আঁচড়ে পড়ছে ঝর্ণার পানি, আশেপাশে এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সেই প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে, যেন স্বর্গ হতে কোন অপ্সরী নুপুরের রুনু ঝুনু শব্দে তাঁর মোহনীয় কন্ঠে শুনিয়ে যাচ্ছেন অপূর্ব গীত। যেই গীতের দ্যোতনায় হৃদয়ের প্রতিটি তন্ত্রীতে তুলছে নবজাগরণ। শুধু কি ঝর্ণার পানির শব্দ, তা নয়, ঝর্নার আশেপাশে হতে নানা প্রাণীর উপস্থিতি ও পাখির কিচির মিচির শব্দ, ঝর্ণার নিচে বয়ে যাওয়া ঝিরি ঝিরি পানির প্রবাহমানধারা নিমিষেই মনকে নিয়ে যায় কল্পলোকে। এটাই হলো পানছড়ি ঝর্ণা। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পানছড়ি মারমা পাড়াতে এই পানছড়ি ঝর্ণার অবস্থান।
ঝর্ণার উপরে মৈদং পাহাড়ে এই ঝর্ণার উৎপত্তিস্থল। বছরের সারা সময় ধরে এই ঝর্ণায় পানি থাকে। ঝর্ণার আশেপাশে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি ঝর্ণার দেখা মিলবে মূল ঝর্ণার আগে।
কাপ্তাই সড়ক ধরে চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট হয়ে কর্ণফুলী নদী পার হয়ে রাইখালী ইউনিয়ন এর রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র পাড় হয়ে পাঁয়ে হেঁটে ঘন্টাখানেক পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে এই ঝর্ণায় পৌঁছানো যাবে। পথে মধ্যে ১ নং নারানগিরি পাড়া,জগনাছড়ি পাহাড়, জগনাছড়ি পাড়া, পানছড়ি মারমা পাড়া, সবুজ ক্ষেত, বিভিন্ন প্রকার ফলের বাগান, পাহাড়ের নান্দনিক সৌন্দর্য অবলোকন করে পানছড়ি ঝর্ণার দেখা মিলবে।
বিশেষ করে বর্ষাকালে এই ঝর্ণা হতে অবিরাম ধারায় পানি পড়লেও শরৎ কালে বৃষ্টি হওয়ায় ঝর্ণাটি রুপ, লাবণ্য এবং সৌন্দর্য পর্যটকদের আর্কষণ করছে আরোও বেশি।
রাইখালী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শৈবাল সরকার সাগর বলেন, পানছড়ি ঝর্নাটা অনেক আগের ঝর্ণা, দেখতে বেশ সুন্দর। এইখানে প্রতিদিন পর্যটক আসে।
রাইখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মংক্য মারমা বলেন, নারানগিরি-ভালুকিয়া সড়কের পূর্ব দিকে এই ঝর্ণায় যেতে হয়। মনোরম পরিবেশে এই ঝর্ণা একবার গেলে মনটা উৎফুল্ল ভরে যাবে। তাছাড়া পাশে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভালো।
ঝর্ণা দেখতে আসা কয়েকজন পর্যটক বলেন, আমরা অনেক আগে হতে শুনেছি রাইখালীর পানছড়িতে একটি সুন্দর ঝর্ণা আছে। মনোমুগ্ধকর একটি ঝর্ণা এটি। ঝর্ণাপ্রিয় পর্যটকরা এখানে আসলে আনন্দ লাভ করতে পারবেন। এখানে আসার পথটুকু বেশ সুন্দর।
সরকারের কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের কিভাবে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে যায় সেই বিষয়ে শনিবার কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন পানছড়ি ঝর্ণা পরিদর্শন করেন এবং নারানগিরি পাড়াতে স্থানীয় অধিবাসী, জনপ্রতিনিধি এবং কার্বারিদের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় উপজেলার কাপ্তাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুহুল আমিন, ইউপি চেয়ারম্যান মংক্য মারমা, কাপ্তাই মৎস্য উন্নয়ন উপ-কেন্দ্রের প্রধান মাসুদ আলম, ইউপি সদস্য শৈবাল সরকার সাগর, নারানগিরি ১ নং পাড়ার কারবারি সুইথুই মা মারমাসহ স্থানীয় জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, সরকারের কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমের পরিকল্পনাকে সামনে রেখে ঝর্ণার সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের কিভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারি সেই লক্ষ্যে আমরা এই পানছড়ি ঝর্ণা দেখতে এসেছি এবং স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে মতবিনিময় করেছি।
তিনি আরোও বলেন, এতো দুর্গম জায়গায় এতো সুন্দর একটি ঝর্ণা না দেখতে বিশ্বাস করা যাবে না। আসার সময় বড় বড় পাথরে গাঁ ছুঁয়ে পানি পড়ছে, ঝিরিঝিরি পথ সবটুকই সৌন্দর্যে ভরপুর। পর্যটকদের এই সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।