শংকর হোড় ও মাহমুদুল হাসান
বৃষ্টি কমে আসায় রাঙামাটিতে বন্যার পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। জেলার বাঘাইছড়ি, কাউখালী, লংগদু, বরকল উপজেলার নি¤œাঞ্চল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। জেলার মধ্যে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঘাইছড়ি। এই উপজেলায় ৩১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টি কমে আসায় বাঘাইছড়িসহ সব উপজেলার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খাবার পেলেও যারা বাড়িতে রয়েছেন, তাদেরকে কোনও ত্রাণ দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাঘাইছড়ি পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাইন উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, বাসার খাট পর্যন্ত পানি উঠেছে, আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া হয়নি। যারা আশ্রয়কেন্দ্র গিয়েছে তারা ত্রাণ পেলেও আমরা বাড়িঘরে থাকায় আমরা কোনও ত্রাণ পাইনি এখনো। খেয়ে না খেয়ে আমাদের দিন চালাতে হচ্ছে। একই এলাকার বাসিন্দা জালাল মিয়া বলেন, যারা বাড়িঘরে ছিল তাদের কাউকে ত্রাণ দেয়া হয়নি।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরিন আক্তার বলেন, বৃষ্টি কমে আসায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। কিছুু মানুষ বাড়িঘরে ফিরেছে। এখনো ২৭টি কেন্দ্রে তিন হাজার বন্যার্ত অবস্থান করছেন। তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার মজুদ আছে। সবাইকে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। বন্যার্তদের জন্য ২৫ মে.টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বন্যার্তদের পাশে বিজিবি
বাঘাইছড়ির মারিশ্যা ব্যাটালিয়ন (২৭ বিজিবি) এর দায়িত্বাধীন এলাকায় ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে মুসলিম ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুসলিম ব্লক হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং উপজেলা এডমিনিস্টেশন স্কুল এন্ড কলেজে আশ্রয় নেয়া ৫২০ জন বন্যার্ত পরিবারের সদস্যদের মাঝে শুক্রবার রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্রে ১১৪ অসুস্থ রোগীদের মাঝে চিকিৎসা সেবা প্রদান ও বিনামূল্যে ঔষধ সামগ্রী বিতরণ করেছে বিজিবি।
বৃহস্পতিবার বন্যা কবলিত মুসলিম ব্লক নামক এলাকার আরিফ হোসেনের গর্ভবতী স্ত্রী রাজিয়া খাতুন (৩০) কে মারিশ্যা ব্যাটালিয়নের উপ অধিনায়ক মেজর নোমান আল ফারুক এর নেতৃত্বে বিজিবি টহলদল উদ্ধার করে বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয় যাওয়া হয়। পরবর্তীতে উক্ত গর্ভবতী মহিলা একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। বর্তমানে মা ও শিশু সুস্থ আছেন।
আটকা পড়া পর্যটকরা গন্তব্যে ফিরেছে
এদিকে ঢলের পানিতে ডুবে যাওয়া সাজেক-খাগড়াছড়ি সড়ক থেকে পানি নেমে যাওয়ায় সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এ সময় সাজেকে আটকা পড়া আড়াই শ’ পর্যটক নিরাপদে ফিরে গেছেন। পরে বেলা ১১টার দিকে ১৩টি জিপ ও ৬০টি মাহিন্দ্রা-মোটরসাইকেলে ওই পর্যটকেরা খাগড়াছড়ি উদ্দেশে রওনা দেন।
সাজেক পর্যটনকেন্দ্রের গাড়ির লাইনম্যান মো. ইয়াছিন বলেন, আটকা পড়া পর্যটকেরা শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সাজেক থেকে খাগড়াছড়ি উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, আটকা পড়া পর্যটকেরা নিরাপদে ফিরে গেছেন। রিসোর্ট-কটেজে আটকা পড়া পর্যটকেরা যত দিন ছিলেন, কোনো কক্ষের ভাড়া নেওয়া হয়নি। শুধু পানির বিল নেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আটকা পড়লে পর্যটকদের এ সুযোগ দেওয়া হয়।