নিজস্ব প্রতিবেদক
তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ সকল ক্ষেত্রে পাহাড়ের বাঙালিদের সাথে বৈষম্য দূর করে জনসংখ্যা অনুপাতে বন্টন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিমুক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের দাবি এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের(পিসিসিপি) উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকালে রাঙামাটি পৌর প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে মহাসমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশের শুরুতেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত হওয়া সকল শহীদদের মাগফিরাত কামনায় ও বন্যার্তদের জান মাল রক্ষায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
মহাসমাবেশে পিসিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আসিফ ইকবালের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবীব আজমের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান। এতে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব ও বাঘাইছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র আলমগীর কবির, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এডভোকেট পারভেজ তালুকদার, নাগরিক পরিষদের রাঙামাটি জেলা সভাপতি শাব্বির আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক মো. সোলায়মান, পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল মাহমুদ, প্রচার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, পিসিসিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, পিসিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি সুমন আহম্মেদ, পিসিসিপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আবু আইয়ুব আনসারী, পিসিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি গিয়াস উদ্দিন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান পাহাড়ে চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় সর্বোচ্চ পদে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী থেকে পদায়ন করা হচ্ছে। পার্বত্য জেলায় জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সভাপতির পদসহ সকল সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর পদসমূহ শুধুমাত্র ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত। উন্নয়ন বোর্ডে চেয়ারম্যান পদে বাঙালি প্রতিনিধিসহ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা অনুপাতে সকল স¤প্রদায় হতে জেলা পরিষদে সদস্য মনোনয়নের দাবি জানান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বৈষম্যমূলক ও বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন এবং অসহায় ও ভূমিহীনদের মাঝে ভূমি বন্দোবস্তি চালু করতে হবে। ষড়যন্ত্রমূলক এবং একটি বিশেষ শ্রেণী, গোষ্ঠীর পার্বত্য চট্টগ্রামের সরকারি খাস ভূমি দখল এবং বনজ সম্পদ ধ্বংসের পাঁয়তারার অংশ হিসেবে চালু করা ভিলেজ কমন ফরেস্ট (ভিসিএফ) বা পাড়াবন প্রকল্প অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিছিন্নবাদী সশস্ত্র সংগঠন কর্তৃক সশস্ত্র সংঘাত, হত্যা, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, উপজাতিরা সমগ্র বাংলাদেশে জমি ক্রয়, বসবাস, চাকরি ও ব্যবসা করতে পারে। একই ভাবে তিন পার্বত্য জেলায় অন্য ৬১ জেলার নাগরিকদের সীমিত আকারে বিশেষ বিবেচনায় শিল্প কারখানা স্থাপন কিংবা ব্যবসায়ীক বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে জমি ক্রয় করে বসবাস করার সুযোগ দিতে হবে। স্থায়ী বাসিন্দা সনদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, সকল সরকারি চাকরি, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, উপবৃত্তি ইত্যাদির ক্ষেত্রে বৈষম্য মূলক উপজাতি কোটার পরিবর্তে জনসংখ্যার অনুপাতে অনগ্রসর কোটা চালু করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিদের জন্য সমহারে কোটা নির্ধারণ করতে হবে।