জিয়াউল জিয়া ॥
পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ভয়াবহভাবে বাড়ছে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা। গত কয়েক বছর ম্যালেরিয়া রোগী সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। জেলা সদরের চেয়ে এ রোগের প্রকোপ উপজেলার দুর্গম এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি। উপজেলাগুলোর মধ্যে জুরাছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি ও বাঘাইছড়িতে রোগী বেশি পাওয়া যায়। যা গত দুই মাসে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে।
রাঙামাটি জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ২০১৪ সালে ম্যালেরিয়া রোগে ১৭ হাজার ৪৫ জন, ২০১৮ সালে দুই হাজার ৯৯৩ জন, ২০১৯ সালে ছয় হাজার তিন জন, ২০২০ সালে এক হাজার ৩৭৭ জন, ২০২১ সালে এক হাজার ৬০০ জন, ২০২২ সালে ১ হাজার ২১২ জনের দেহে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু পাওয়া গেছে।
সেই হিসেবে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত জেলায় ১৫৩২ জনের ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু পাওয়া গেছে। জুলাই মাসে ১৫ তারিখ পর্যন্ত আরও ৪৭৫ জন ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত রয়েছেন। জেলা মোট ২ হাজার ৭ জন এই পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে জুরাছড়ি ৯২২ জন, বরকল ৪৪৩ জন, বিলাইছড়ি ৪৪৩, বাঘাইছড়িতে ৩২৮ জন শনাক্ত হয়েছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে রোগী সংখ্যা ছিলো ১৭০ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১০৬, মার্চ মাসে ৯১ জন, এপ্রিল মাসে ১৩১ জন, মে মাসে ৩৬২ জন, জুন মাসে ৬৬৭ জন, জুলাই মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ৪৭৫ জনের দেহে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু পাওয়া গেছে।
দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাধন কুমার চাকমা বলেন, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ব্র্যাকসহ ইউনিয়ন পরিষদের সম্মিলিত ভাবে সমন্বয় করে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কাজ করার উদ্যোগ না নিলে এটি আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অনন্যা চাকমা বলেন, ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যায় দুর্গম এলাকাগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ব্র্যাক থেকে বিনামূল্যে যে মশারি দেয়া হয়। এবছর নতুন করে ২ হাজার ৩৫০টি মশারি বিতরণ করা হয়েছে। যেসব এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রবণতা বেশি সেখানে স্বাস্থ্যকর্মী ও ব্র্যাকের কর্মীরা কাজ করছে। দুর্গমতার কারণে কিছুটা তো সমস্যার মধ্যদিয়ে কাজ করতে হয়।
জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুজিত দত্ত বলেন, বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নের বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে। যাদের জ¦র হচ্ছে তাদেরই রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছি। ব্র্যাক থেকে মশারিও বিতরণ করা হয়েছে। সবাইকে সচেতন করছি। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ঔষুধ রয়েছে। সবাই ঔষুধ খেয়ে সুস্থ হচ্ছে।
রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী বলেন, বর্ষা মৌসুমে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা মাঠে কাজ করছে। দুর্গম এলাকা হওয়ার আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীর পাশাপাশি ব্র্যাকের কর্মীরাও কাজ করছে। যেখানেই রোগী পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই ঔষুধ পৌছানো হচ্ছে। যাতে কোন রোগীর মৃত্যু না হয় সেটি সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিনামূল্যে প্রায় ৫ লাখ মশারি বিতরণ করা হয়েছে।