মিশু মল্লিক ॥
সারাদিন গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের প্রখর চোখ রাঙানির মধ্যেই পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে চরম আকার ধারণ করেছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। দিনের অধিকাংশ সময় তো বটেই, গভীর রাতেও দেখা মিলছে ঘন্টাব্যাপী লোডশেডিংয়ের। এতে জনজীবনে বিরাজ করছে ভীষণ অস্থিরতা।
বৈশাখের শুরু থেকেই পার্বত্য জেলা রাঙামাটির তাপমাত্রার পারদ উর্ধ্বমুখী। সারাদিন প্রখর রোদ পুড়িয়ে যাচ্ছে শহরবাসীদের। তীব্র গরমের এই সময়ে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎের ভেলকিবাজি। ভোররাত কিংবা মধ্যদুপুর, সন্ধ্যা কিংবা গভীর রাত ঘন্টাব্যাপী লোডশেডিংয়ের ফাঁদে দিনযাপন করতে হচ্ছে শহরবাসীদের। এতে একদিকে যেমন মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে পাশাপাশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বিদ্যুৎ নির্ভর ব্যবসায়ীরা।
শহরের রিজার্ভ বাজারে অবস্থিত দ্য ওয়াশ এক্সপ্রেসের স্বত্ত্বাধিকারী শম্ভু দে বলেন, আমাদের লন্ড্রী ব্যবসা পুরোটাই বিদ্যুৎ নির্ভর। কাপড় আয়রন করা বা ওয়াশ করা হয় আয়রন ও ওয়াশিং মেশিনে। যেগুলো বিদ্যুৎ ছাড়া অচল। সারাদিন যতবার বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করে এতে করে কাজ করা খুব কঠিন। দিনে বিদ্যুৎ থাকেনা বলে রাতে কাজ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মধ্যরাতেও লোডশেডিং হচ্ছে। এভাবে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
শান্তি ওয়েল্ডিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং শপের কর্মচারী সুভাষ দে বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে ইদানীং আমরা কাজ করতে পারছি না বললেই চলে। সকালে দোকান খোলার পর থেকেই যেভাবে বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করে তাতে করে আমরা কাজের অর্ডারগুলো ঠিক সময়ে ডেলিভারি করতে পারছি না। এতে আমরা ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা সদরের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। কিছু এলাকাতে প্রায় ৮-৯ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। শহরের বিহারপুর এলাকার বাসিন্দা শুভাগত চাকমা বলেন, শহরের মূল জনবহুল এলাকাগুলোতে মোটামুটি বিদ্যুৎ থাকলেও আমাদের গ্রামীণ এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ থাকে না বললেই চলে। একে তো এতো গরম পড়ছে, তারউপর যদি ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকে তবে আমরা বাঁচবো কিভাবে।
ভালেদি এলাকার বাসিন্দা বর্ণা চাকমা বলেন, আমাদের বাসায় ছোট বাচ্চা আছে। যেভাবে সারাদিন বিদ্যুৎ থাকেনা এভাবে করে বাচ্চাদের সুস্থ রাখা খুব কষ্টকর হয়ে উঠছে। ছোট বাচ্চারা গরমে ছটফট করতে থাকে।
দুঃসহনীয় এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে তেমন কোন সুখবর শোনাতে পারেনি রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিভাগ। রাঙামাটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান বলেন, চাহিদার তুলনায় যোগানের পরিমাণ খুব কম হওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতির মূল কারণ। পুরো রাঙামাটির জন্য আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ মেগাওয়াট। কিন্তু বর্তমানে আমরা জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছি ৪ থেকে ৭ মেগাওয়াট। যেটা হয়তো কখনো কখনো ৯ মেগাওয়াট পর্যন্ত পাওয়া যায়। জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ না পেলে আমরা সরবারহ করতে পারছি না।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে প্রতি ফিডে ৫-৬ বার করে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতির কবে উত্তরণ ঘটবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আশার বাণী শোনাতে পারেননি। তিনি বলেন, জাতীয় পর্যায় থেকে যখন বিদ্যুৎ সরবারহ পর্যাপ্ত করা হবে তখনই হয়তো নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ করা সম্ভব হবে।