শুভ্র মিশু ॥
রাঙামাটিতে টানা বর্ষণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর(এলডিইডি) আওতাধীন জেলার বিভিন্ন স্থানে ৪০-৫০ কিলোমিটার সড়কে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। এইক্ষত সারাতে ও নতুন সড়ক তৈরি করতে শতকোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে বলে জানা যায় প্রতিষ্ঠানটি সূত্রে। সড়ক বিভাগের আওতাধীন প্রায় ৪৪টি স্থানে ধস হয়েছে যা সারাতে প্রয়োজন নয় কোটি টাকা।
রাঙামাটি বরকল উপজেলার হরিণা ও ভূষণছড়া হতে কলাবুনিয়া গ্রামের প্রায় আড়াই হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা। যা পাহাড়ি ঢলে বিলিন হয়ে গেছে। এতে অত্র ইউনিয়ন ও বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে গ্রামের মানুষ। গ্রামের বাসিন্দাদের বাজার ঔষধ চিকিৎসাপত্র ক্রয়ে ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
রাজস্থলী উপজেলা সদর গাইন্দ্যা ইউনিয়নে পোয়াইতু ও ¤্রওয়া পাড়া উপজেলা সদরের সাথে চলাচলের একমাত্র সড়কটি ও সড়কের কালভার্ট গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এলাকাবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দৈনিক আট কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে উপজেলা সদরে রাজস্থলী উচ্চ বিদ্যালয়, রাজস্থলী সরকারি কলেজে আসতে হচ্ছে স্কুল কলেজে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের। তেমনিভাবে বাজারসহ নানা কাজে এলাকবাসীকেও পায়ে হেঁটে উপজেলা সদরে এসে কাজ সারতে হচ্ছে। তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সড়কটি অন্তত চলাচলের উপযোগী করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
বরকল উপজেলার ভূষণছাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. আনোয়ার জানান, ভূষণছড়া এলাকাটি উপজেলার সবথেকে জনবহুল এলাকা এখানে আমাদের ভূষণছাড়া থেকে কলাবুনিয়া যাওয়ার সড়কটি গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে বিলিন হয়ে গেছে। যার কারণে কলাবুনিয়া এলাকার মানুষকে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তেমনি ভাবে তারা ঠিকমত ভূষণছড়া বাজারেও আসতে পারছে না। যার কারণে বাজারের বেচাকেনাও কমে গেছে। রাস্তাটি পরিকল্পিত ও দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।
এমনি ভাবে পাহাড়ি ঢলে জেলার সদর, কাউখালি, বাঘাইছড়ি, লংগদু, জুরাছড়ি, বরকল, রাজস্থলী উপজেলার বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার কোনটি পাকা আবার কোনটি আধাপাকা আবার কোনটি কাঁচা।
এলজিইডির তথ্য মতে, সদর, কাউখালি, বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সড়কের ক্ষতি হয়েছে। যার পরিমাণ ৪০- ৫০কিলোমিটার। এছাড়াও বাকি উপজেলার সড়কের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার তথ্য সংগ্রহের কাজ চলমান আছে বলে জানানো হয় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে। এই সকল ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার এবং নতুন সড়ক তৈরিতে একটি শতকোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানা যায়।
সওজের আওতাধীন রাঙামাটি ঘাগড়া চন্দ্রঘোনা, বাঙ্গালহালিয়া-বান্দরবান সড়কে ২১টি, চট্টগ্রাম- রাঙামাটি মহাসড়কে ১০টি, বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী সড়কে ৭টি, রাঙামটি-খাগড়াছড়ি সড়কে ৩টি, বগাছড়ি-নানিয়াচর সড়কে ২টি, রানীরহাট-কাউখালি সড়কে ১টি স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার সংস্কারে প্রয়োজন নয় কোটি টাকা। এছাড়াও ২০১৭সালে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারে বর্তমানে রাঙামাটিতে ২৪৯কোটি টাকার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
রাঙামাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি জানান, অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ধস ও ঢলে রাঙামাটিতে এলজিইডি এর আওতাধীন ৪০-৫০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এইসকল সড়কে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এইসকল সড়কে সংস্কার প্রয়োজন। যার কারণে সংস্কার ও নতুন সড়ক মিলিয়ে আমরা ১শত কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করছি।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা জানান, আমাদের সড়ক ভাঙ্গণ রোধে একটি প্রকল্প চলমান থাকায় এই অতিবৃষ্টিতে ভাঙ্গণ কম হয়েছে। তারপরও বিভিন্ন সড়কের ৪৪টি স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা সংস্কারে নয় কোটি টাকা প্রয়োজন। তবে প্রাথমিকভাবে সব সড়কগুলো যানচলাচলের উপযোগী করা হয়েছে।