শুভ্র মিশু
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বাজারে এখন বেড়েছে লিচুর বিকিকিনি। কীটনাশক মুক্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলায় রাঙামাটির লিচুর চাহিদাও ভালো। প্রতিদিনই ঘাট ও বাজারে আনা হচ্ছে বোটে বোটে লিচু। লিচুর আকার ও রঙয়ের ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হচ্ছে দাম। চাষিরাও লিচুর ভালো দাম পাচ্ছেন । চলতি বছরের জেলায় সাড়ে তিনশত কোটি টাকার লিচু ব্যবসায় লেনদেনের আশা করছেন কৃষি বিভাগ।
গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা পাকা লিচু। পরিপক্ক হওয়ায় বিক্রির জন্য পাতাসহ ছেঁড়া হচ্ছে লিচু। সেসব লিচু নিয়ে ভোর হতেই একের পর এক যন্ত্রচালিত বোট ভিড়ছে রাঙামাটি শহরের সমতা ঘাটে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন বাগান হতে লিচু নিয়ে আসছেন বাগানিরা। পাইকারদের হাত হয়ে এই লিচু ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। তবে যেসব বাগানি বাগানেই লিচু বিক্রয় করছেন তাদের দাম কম পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
লিচুর আকার ও রঙয়ের ওপর নির্ভর করেই হাঁকা হচ্ছে দাম। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের দর কষাকষি শেষে নামানো হচ্ছে ঘাটে। ক্রেতা বিক্রতার দর কষাকষিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো হাট। সেখানেই শ্রমিকরা খাঁচা বা কার্টুনে প্যাকেট করছেন লিচু। চাষিরা জানালেন, এই হাটে একশ লিচু বিক্রয় হচ্ছে দেড়শো থেকে চারশো টাকায়। দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরাও।
লিচু চাষী সুশান্ত তঙ্গ্যাগা জানান, এই বছর লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। আমার বাগানে প্রায় একশতটির মত লিচু গাছ আছে সেগুলো বাগানে বিক্রয় করে দিয়েছি ষাট হাজার টাকা দিয়ে। কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকায় বাজারে আনতে পারি নাই। বাজারে আনলে অনেক টাকা বেশি পেতাম।
আর এক লিচু চাষী শ্রাবণ চাকমা জানান, আমার বাগানে তিনশতটির মত চায়না ৩ জাতে লিচু গাছ আছে। বাজারে প্রতিশত লিচু তিনশত টাকা করে বিক্রয় করছি।
লিচু পাইকার মো. মনির জানান, রাঙামাটির লিচু রসালো ও কীটনাষক মুক্ত হওয়ায় চাহিদা বেশি। যার কারণে আমরা চট্টগ্রাম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় লিচু সরবরাহ করে থাকি। লিচুর দামও বেশ ভালো পাই।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, এবার মৌসুমের প্রথম দিকে খরা গেলেও কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হওয়ায় লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। এই এলাকার লিচু রসালো ও বিচি ছোট হওয়ায় যার চাহিদা প্রচুর। এবার জেলায় ১হাজার ৮শত হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। যার ফলে লিচু ব্যবসায় সাড়ে তিনশত কোটি টাকার লেনদেন হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, রাঙামাটিতে ১হাজার ৮শত হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪শত হেক্টর জমিতে চায়না ৩, ৪শত৫০ হেক্টর জমিতে চায়না ২ ও বাকি ৯শত৫০ হেক্টর জমিতে দেশি লিচুর চাষ হয়েছে। যার বাজার মূল্য দাড়ায় সাড়ে তিনশত কোটি টাকা।