শুভ্র মিশু
টানা অতিবৃষ্টিতে রাঙামাটি জেলায় ১৯৮ স্পটে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ রয়েছেন এক কিশোর। ২৩৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১৭শত ২৭জন মানুষ। বিভিন্ন সড়কের ৯টি স্পটে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্যায় প্লাবিত জুরাছড়ি ও বরকল উপজেলার নিন্মাঞ্চল।
সোমবার দুপুরে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের সুবলং পয়েন্টে প্রচুর স্রোত থাকায় নৌকা ডুবে সুমেন চাকমা(১৯) নামের এক কিশোর নিখোঁজ রয়েছেন। সুমেন চাকমার খোঁজে দুপুর ১টা থেকে ডুবুরী দল কাজ শুরু করে। ডুবুরীদল স্রোতের কারণে ঠিক ভাবে কাজ করতে পারছেন না বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুই যুবক নৌকা পারাপার করার সময় হ্রদের প্রবল ঢেউয়ে নৌকা উল্টে গেলে ঘটনাস্থলে সুমেন চাকমা হ্রদের পানিতে ডুবে যায়। তবে অপরজন তীরে উঠতে সক্ষম হয়।
বরকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা বিনতে আমিন জানান, নৌকা ডুবির বিষয়টা জানার পরপরই নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু স্রোতের কারণে উদ্ধার অভিযানে ব্যাগ পেতে হচ্ছে।
সোমবার সকাল থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চচলাচল শুরু হয়েছে কাপ্তাই হ্রদে। তবে অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল নামা অব্যহত থাকায় পর্যটকবাহী নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। আকস্মিক বন্যায় ১২৪টি ঘর ও ৪টি বাজার তলিয়ে গেছে। বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ির নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ¯্রােতের কারণে কাপ্তাই চন্দ্রঘোনায় ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
চলমান অতিবৃষ্টিতে জেলা সদরসহ কাপ্তাই, নানিয়াচর, বাঘাইছড়ি, রাজস্থলী, কাউখালি সড়ক ও আশাপাশের এলাকায় ১৯৭টি স্পটে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সড়কে ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় নানিয়াচর উপজেলার ঘিলাছড়ি বুড়িঘাট সড়কে ভাড়ি যানচলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
এই বিষয়ে নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা সাদিয়া নূরীয়া জানান,উপজেলা ও জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে আমারা সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছি,তবে যেসব স্থানে ভাঙন দেখা গেছে ঐসব স্থানে আপাতত ভারি যানবাহন চলাকালে একটু বিরতি রাখতে বলা হয়েছে,এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের মাইকিং প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে, নানিয়ারচরের চারটি ইউনিয়নেই আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা আছে।এসব আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আমাদের সাথে জনপ্রতিনিধি ও গ্রামপুলিশ তদারকি করছেন।
রাঙামাটি চট্টগ্রাম, রাঙামাটি খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি বান্দরবান সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সড়ক বিভাগে ৪টি টিম কাজ করছে।
রাঙামাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা জানান, আমরা সড়কে পাহাড় ধসে যেসব স্থানে মাটি ও গাছ পড়েছে তা দ্রুত সরাতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সওজের আওতাধীন প্রধান সড়কগুলো কোনটি বন্ধ নেই।
এছাড়াও ভোরে রাঙামাটি শহরের শহীদ আব্দুল আলী স্কুলের পিছনের অংশে পাহাড় ধস হয়েছে। এতে শহীদ আব্দুল আলী আশ্রয় কেন্দ্রে অন্তত ৬৪জন আশ্রয় নিয়েছেন।
ভেদাভেদী এলাকায় বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে একটি ঘরের ধস হয়েছে। এতে কোন হতাহত হননি। কাঁঠালতলী খাদ্যগুদামের পাহাড় ধসেরও খবর পাওয়া গেছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি ক্যালেক্টর বিজন কুমার জোয়াদার জানান, জেলা শহরসহ জেলার ১৯৮টি স্পটে ছোট বড় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে ৩৮১টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ১৪টি ব্রিজ কালভার্ট ও ১৬টি বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলার বেশ কিছু স্থানে ভাঙ্গন হয়েছে। সড়কের ৯টি স্থানে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। ২৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১২শত অধিক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করছে। প্রতিনিয়ত আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।