‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে ছাত্র সমাজ অধিকতর সামিল হউন’ আহবানে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙামাটি সরকারি কলেজ শাখার ২৭তম বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক সুনীতি বিকাশ চাকমার সঞ্চালনায় ও সভাপতি সুমন চাকমার সভাপতিত্বে কাউন্সিলে প্রধান অতিথি ছিলেন জনসংহতি সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক জলিমং মারমা। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক থোয়াইক্যজাই চাক, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক চারুলতা তঞ্চঙ্গ্যা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সজল চাকমা ও বিদায়ী বক্তব্য রাখেন অমর জ্যোতি চাকমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জলি মং মারমা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠার পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ভূমিকা রযয়েছে। জনসংহতি সমিতির নেতৃবৃন্দ চিন্তায় ছিল ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করে তোলা। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত বা আন্দোলন দুর্বারকরণে ছাত্র সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। লংগদু গণহত্যা পিসিপি গঠনের একটি উপলক্ষ মাত্র।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা কখনো পাঠ্য পুস্তকে সীমাবদ্ধ নয়। একজন ছাত্রের প্রতিটি জায়গা থেকে জীবনমুখী, বাস্তবিক ও মানবিক শিক্ষা অর্জন করতে হবে। পেছনে ফিরে অতীতের সংগ্রামের ইতিহাস অধ্যয়ন করতে হবে, এই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যেমনি করে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা কাপ্তাই বাঁধের সময় বাস্তবমুখী বাস্তবতায় অস্তিত্ব সংরক্ষণে ছাত্র সমাজকে নিয়ে কাপ্তাই বাঁধের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। তাই আজকের ছাত্র সমাজকেও সেভাবেই সাধারণ চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হতে হবে। অন্যথায় জুম্ম জাতির অস্তিত্ব টিকে রাখা যাবে না। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠায় চেতনার আগুন প্রতিটি ছাত্রকে অন্তরে জ্বালিয়ে দিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুমিত্র চাকমা বলেন, রাঙামাটি সরকারি কলেজে ২৫টি উপজেলা থেকে বিভিন্ন প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন। রাঙামাটি শহরে বিভিন্ন প্রান্তে চুক্তি বিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠীর অবস্থান রয়েছে। সেই জায়গা থেকে নবগঠিত কর্মীদের মনের সাহস রেখে লড়াই সংগ্রাম জারি রাখতে বলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে থোয়াইক্যজাই চাক বলেন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের আদর্শকে বুকে ধারণ করে সংগঠনের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। নামমাত্র ছাত্র রাজনীতি করলে হবে না। বাস্তববিক অর্থে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের শপথ নিয়েই পিসিপির প্রত্যেক কর্মীকে প্রস্তুত হতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জিকো চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম ছাত্র সমাজ তথা জুম্ম জনগণ ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান বাস্তবতার সাথে ৮০— ৯০ দশকের বাস্তবতার মধ্যে কোন তফাৎ নেই। একের পর এক গণহত্যা, নির্যাতন ছাত্র সমাজে জাগরণ তৈরি করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের যাত্রা শুরু। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল এক ছাত্র সংগঠন। পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান নিপীড়ন, শোষণ থেকে মুক্তি লাভ করতে গেলে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের আদর্শ ধারণ করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চারুলতা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদে জন্ম লাভ করে, তখন থেকে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙামাটি সরকারি কলেজ শাখা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
পরিশেষে সুনীতি বিকাশ চাকমাকে সভাপতি, সজল চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও সচীব চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট পিসিপি, রাঙামাটি সরকারি কলেজ শাখার নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া বিশ্বজিত চাকমাকে আহ্বায়ক ও উমংসিং মারমাকে সদস্য সচিব করে বিজ্ঞান অনুষদ, কপ্পিং চাকমাকে আহবায়ক ও যতন মনি চাকমা কে সদস্য সচিব করে ব্যবসা অনুষদ, জ্ঞান চাকমাকে আহ্বায়ক ও দিপালো চাকমাকে সদস্য সচিব করে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ, শান্তিপ্রিয় চাকমাকে আহ্বায়ক ও হিল্লোল চাকমাকে সদস্য সচিব করে কলা অনুষদ গঠন করা হয়। সকল কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য টিকেল চাকমা।(বিজ্ঞপ্তি)