নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
রাঙামাটির বিভিন্ন সমস্যা ও সঙ্কট নিয়ে রাঙামাটিতে সদ্য যোগদানকৃত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহের কাছে ২৪ দফা দাবিনামা তুলে দিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর রাঙামাটি জেলা, উপজেলা, পৌর ও সুজন বন্ধুর নেতৃবৃন্দ। দাবিনামা হাতে নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে এই বিষয়ে কাজ করার কথা জানান জেলা প্রশাসক। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। মঙ্গলবার বিকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এসব দাবি পেশ করা হয়।
এসময় সুজন জেলা কমিটির সম্পাদক এম জিসান বখতিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, রাঙামাটিতে বিভিন্ন সমস্যা, সঙ্কট রয়েছে। যেসব নতুন জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নজরে আসা জরুরি। সেই বিবেচনা থেকেই আমরা রাঙামাটিতে সুন্দর একটি জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে চাই। সেই লক্ষ্যে আজ ২৪ দফা দাবিনামা জেলা প্রশাসকের কাছে তুলে ধরা হলো। তিনি আশ^স্ত করেছেন এই বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
দাবিনামা পেশকালে উপস্থিত ছিলেন সুজন রাঙামাটি জেলা কমিটির সহ সভাপতি সুকুমার বড়–য়া, সম্পাদক এম জিসান বখতিয়ার, অর্থ সম্পাদক আশীষ বড়–য়া, সুজন সদর উপজেলার সভাপতি পলাশ কুসুম চাকমা, সম্পাদক শংকর হোড়, পৌর কমিটির সভাপতি ইন্দ্রদত্ত তালুকদার, সম্পাদক মো. এরফানুল হক রুমেল, সুজন বন্ধু জেলা কমিটির সভাপতি মিশু দে ও সম্পাদক রিকোর্স চাকমাসহ জেলা, উপজেলা, পৌর, ওয়ার্ড কমিটির নেতৃবৃন্দ।
সুজন নেতৃবৃন্দ দাবিনামায় উল্লেখ করেন, ষাটের দশকে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির ফলে পুরোনো শহর ডুবে যায় ও নতুন করে সৃষ্ট হয় রাঙামাটি শহর। শহরের ভূ-প্রকৃতি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, বৈচিত্র্য দেশ ও দেশের মানুষদের আকৃষ্ট করে। কিন্তু তার মধ্যেও কিছু সমস্যা, সমন্বয়হীনতার অভাবে প্রথম শ্রেণির স্বীকৃতপ্রাপ্ত রাঙামাটি পৌর এলাকার মানুষ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একই সাথে পূর্ণাঙ্গ একটি শহর গড়ে তোলার জন্য কিছু পদক্ষেপেরও প্রয়োজন রয়েছে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক(সুজন) এর পক্ষ থেকে রাঙামাটির জেলার সম্মানিত জেলা প্রশাসক বরাবরে কিছু দাবি পেশ করা হলো।
দাবিগুলো হল-
১. সকল সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রাখা;
২. কাপ্তাই হ্রদে দখল-দূষণরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ, হ্রদ তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনা অপসারণ এবং মনিটরিং সেল গঠন;
৩. পাহাড় কাটা ও ভূমিধস রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ;
৪. বাসস্ট্যান্ড ও পৌর ট্রাকস্ট্যান্ড সরিয়ে শহরের প্রবেশমুখ ভেদভেদীতে কিংবা মানিকছড়িতে স্থানান্তর এবং ভেদভেদীতে স্টেশন স্থাপন; বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে সেখানে পার্ক ও খেলার মাঠ স্থাপন;
৫. পৌর ট্রাক টার্মিনালের ল্যান্ডিংঘাট প্রধান সড়কের পাশ থেকে সরিয়ে নেওয়া;
৬. এছাড়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) বাংলো পার্কে সদ্য চালুকৃত টিকেটিং সিস্টেম বাতিল করে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা;
৭. শহীদ মিনার এলাকায় বাধ্যতামূলক একটি শৌচাগার স্থাপনসহ পর্যটকদের জন্য শহরে পর্যাপ্ত শৌচাগার ও স্নানাগার স্থাপন;
৮. ফিসারি বাঁধের অন্য পাশে ধারক দেয়াল স্থাপনসহ সৌন্দর্যবর্ধন এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা;
৯. শহরের তিন এলাকায় (বনরূপা, রিজার্ভ বাজার, কলেজ গেইট) পাঠাগার স্থাপন;
১০. শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ফুটপাত চলাচলের উপযোগী রাখা;
১১. অবাধে গবাদিপশু বিচরণ বন্ধ এবং শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ;
১২. রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশা চলাচল বন্ধ, অতিরিক্ত অটোরিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ;
১৩. শহরের অভ্যন্তরীণ একমাত্র যানবাহন অটোরিকশার ভাড়া সমন্বয়;
১৪. ফিসারি ঘাট থেকে ট্রাক টার্মিনাল এলাকার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ ও মুক্তমঞ্চ নির্মাণ। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য এলাকাভিত্তিক উন্মুক্ত মঞ্চ স্থাপন।
১৫. নিরাপত্তার স্বার্থে শহরে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা;
১৬. রাঙামাটি-বান্দরবান-কক্সবাজার রুটে বাস সার্ভিস চালু করা। একই সঙ্গে রাঙামাটি থেকে সরাসরি সাজেকে পরিবহন সার্ভিস চালু;
১৭. রাঙামাটি-চট্টগ্রাম বিলাসবহুল (এসি/ননএসি) বাস সার্ভিস এবং ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল বন্ধ করা;
১৮. চট্টগ্রাম-রাঙামাটি প্রধান সড়কের জেলার সীমান্ত থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ফোর লেইন প্রস্তাবিত সড়ক বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ;
১৯. শহরের সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়নের লক্ষ্যে শহর সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ;
২০. প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহক ভোগান্তির অবসান করা;
২১. বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শুক্কুর স্টেডিয়াম, সবুজ সংঘ খেলার মাঠ, রাঙ্গাপানি খেলার সংস্কার ও উন্নয়নে সহযোগিতা করা;
২২. শহীদ মিনার থেকে বালুখালী ইউনিয়ন এবং ফুরোমোন পাহাড় থেকে সাপছড়ি প্রধান সড়ক পর্যন্ত ক্যাবল কারসহ বিনোদনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগ;
২৩. পৌর এলাকার বাহিরে রাঙামাটি পৌরসভার প্রস্তাবিত ডাম্পিং স্টেশন দ্রুত কার্যকর করা এবং জেলা শহরের ভেদভেদি এলাকায় অবস্থিত ময়লার ভাগাড় দ্রুত সরিয়ে নিতে উদ্যোগ গ্রহণ;
২৪. শহরের জনবহুল এলাকায় সভা-সমাবেশ ও সামাজিক কর্মসূচি পালনের পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনবোধে সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক দলসমূহের ক্ষেত্র বিশেষে আলোচনা করা। এ ছাড়া বনরূপা বাজারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এলাকাভিত্তিক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণ করে বাজার ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।